যশোরে একরাত অবস্থানের পর বেনাপোল দিয়ে পালিয়েছেন কাদের-লিটন-বিপ্লবসহ অনেকে

Share Now..

\ যশোর জেলা প্রতিনিধি \
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়েছেন। শুধু তিনিই নন বেনাপোল দিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ও বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকারসহ আরও বেশ কয়েকজন। অভিযোগ উঠেছে পতিত সরকারের সুবিধাভোগী প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা বিশেষ প্রহরায় তাদের চোরাই পথে পালাতে সহায়তা করেছেন। বেনাপোলের পুটখালীর দালাল সর্দার হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত নাসির তার ধুড়পাচার সিÐিকেট সদস্যদের সহায়তায় পৌঁছে দেন ভারতে। বিষয়টি চাউর হওয়ায় সীমান্তে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থান ঘটে। এদিনে বিকেল সোয়া ৩টা নাগাদ বিশেষ বব্যবস্থায় শেখ হাসিনা ও তার বোন রেহেনা ভারতে চলে যান। ৫ আগস্ট দিবাগত মধ্যরাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যশোরে চলে আসেন। তাকে গুরুত্বপূর্ণ একটি নিরাপদ স্থানের আশ্রয়ে রাখা হয়। পরদিন প্রশাসনের কিছু লোকজন বিশেষ প্রহরায় তাকে নিয়ে যায় বেনাপোল সীমান্তে। সেখানকার প্রশাসনের সহায়তায় ধুড়পাচার সিÐিকেট প্রধান নাসিরের লোকজন তাকে নিরাপদে পৌঁছে দেন ভারতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে যশোর ও বেনাপোলের বেশ কয়েকটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়া ৭ আগস্ট রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ও বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকারসহ আরও বেশ কয়েকজন একই ধুড়পাচার সিÐিকেটের মাধ্যমে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। এমন খবর নিশ্চিত হওয়ার পর স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন বিক্ষোভও করেন। যশোরের সীমান্ত উপজেলা শার্শার একাধিক সূত্রের অভিযোগ ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে নিজস্ব অস্ত্রধারী বাহিনী নিয়ে মাঠে নামেন স্থানীয় এমপি শেখ আফিল উদ্দিন। তবে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তিনি অজ্ঞাত স্থানে চলে যান। সারাদেশের মতো সাবেক এই এমপির বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা হয়েছে। এছাড়া আত্মগোপনে রয়েছেন শার্শা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন, বেনাপোল পৌরসভার সাবেক দুই মেয়র নাসির উদ্দিন ও আশরাফুল আলম ওরফে লিটন, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের অনেকে। তবে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর সময় ছাত্রলীগের এক নেতাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পরে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেই থেকে তিনি কারাবন্দি রয়েছেন। সূত্রের দাবি-যেসব নেতা আত্মগোপনে রয়েছেন বলা হচ্ছে, তাদের বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন বলেও সীমান্তে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে ও বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যমতে, বেনাপোলে ধুড়পাচার সিÐিকেটের প্রধান পুটখালীর নাসির। প্রশাসনের সাথে তার রয়েছে অনৈতিক দেন-দরবারের সম্পর্ক। অন্যদিকে, যেসব নেতা পালিয়েছেন, তাদেরও প্রশাসনে লোকজন রয়েছে। যারা পতিত সরকার আমলে নানা সুযোগ সুবিধাপ্রাপ্ত। সবমিলিয়ে জনরোষে পড়ার আতঙ্কে থাকা রাজনৈতিক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিতর্কিত কর্মকর্তা ও সদস্যদের কেউ কেউ রঘুনাথপুর এলাকার দালাল বাদশা মল্লিক ও কলারোয়া সীমান্তের ভাদিয়ালি ঘাটের আক্তার চন্দনের সহায়তায় নিরাপদে ভারতে যেতে পেরেছেন। এরমধ্যে লোকমুখে এসব রটেছে। ওপারে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে সহায়তা করার অভিযোগ উঠেছে কুখ্যাত ভারতীয় দালাল গৌতম দাস ও বাবুরামের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর দাবি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর ভাগ্য বদলে গেছে সীমান্তের ধুড়পাচার সিÐিকেটের। সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ আওয়ামী দোসরদের ভারতে নিরাপদে পার করতে কমপক্ষে ২০ লাখ করে টাকা হাতিয়েছেন। তবে বিছিন্ন কিছু ঘটনাও ঘটেছে। দালালচক্রের সহায়তায় ভারতে পালাতে গিয়ে কেউ কেউ খুইয়েছেন মোটা অঙ্কের নগদ টাকা ও ডলার। কারোর দিতে হয়েছে জীবন। যদিও বেনাপোল সীমান্তে এধরনের ঘটনা ঘটেছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এখনো ভারতে পালানোর চেষ্টায় রয়েছেন অনেকে। এ সুবাদে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা চিহ্নিত দালালদের পোয়াবারো। লোকমুখে শোনা যাচ্ছে-ভিআইপিদের অনেকে পার হওয়ার সময় এপার-ওপারের প্রশাসনের লোকজনের সহায়তা নিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে মুখ খুলতে সংশ্লিষ্টরা নারাজ। আওয়ামী দোসরদের সাজানো প্রশাসন হওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে অনেকে তাদের নির্বিঘেœ দেশ ছাড়তে সব ধরনের সহায়তা দিয়েছেন এবং এখনো দিচ্ছেন-এমন অভিযোগ এখন সীমান্তে ব্যাপকভাবে চাউর হয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে স্থানীয় রাজনীতিকদের সাথে যোগাযোগ করতে মুঠোফোনে কল করে বন্ধ পাওয়া গেছে। পুটখালীর সর্ববৃহৎ ও বহুল আলোচিত ধুড়পাচার সিÐিকেটের হোতা নাসিরকেও ফোনে পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *