যশোরে চালের বাজারে আগুন, দাম ওঠা-নামা করছে সকাল-বিকাল: বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

Share Now..

এস আর নিরব যশোরঃ
যশোরে চালের বাজারে আগুন, দাম ওঠা-নামা করছে সকাল-বিকাল। চালের দামের উর্দ্ধগতি কারনে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। দাম বেড়েছে সব ধরনের চালে। দর ওঠা-নামা করছে সকাল-বিকেল। মোটা চালের দাম পক্ষকালের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। অস্বাভাবিক দাম উঠেছে সরু চালে। কেজিতে বেড়েছে ৭ থেকে ১০ টাকা। পাগলা ঘোড়ার দৌঁড় কিছুতেই থামছে না। লাগামহীন দামে দিশেহারা হয়ে উঠেছেন মানুষ। বেশি বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। আয়ের সাথে তারা ব্যয় সমন্বয় করতে পারছেন না। এর জন্য ক্রেতারা দুষছেন চাল ব্যবসায়ীদের। তবে ব্যবসায়ীদের আঙুল মিলারদের দিকে। তাদের দাবি মিলারচক্রের কারসাজি¦ চালের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।

বড়বাজার হাটচান্নিতে রয়েছে যশোর চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুশীল বিশ্বাসের চালের আড়ত। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার দীপঙ্কর শিকদার বলেন, সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির কারণ প্রতিষ্ঠানের মালিক ভাল বলতে পারবেন।

সুশীল বিশ্বাস বলেন, মিলারদের ওপর নির্ভর করে দর। তারা দাম নির্ধারণ করেন, আমরা সামান্য লাভে পাইকারীতে বিক্রি করি। দাম বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি আরও বলেন, বাজারে ভারতীয় চাল নেই। সরু ধানের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরু ধানের মজুদ গড়েছে অটোরাইস মিল মালিকরা। এখন তারা দাম নির্ধারণ করছেন। কুষ্টিয়ার মিলারদের চেয়ে দাম বৃদ্ধির জন্য যশোর সদর, চৌগাছা, বাঘারপাড়া ও শার্শার উলাশী এলাকার অটো রাইস মিল মালিকরা দায়ী বলেও মনে করেন চাল ব্যবসায়ী এই নেতা।

চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদের চাল বিক্রি প্রতিষ্ঠানের নাম সোনালী স্টোর। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার মঈন উদ্দিন জানান, সব ধরনের চালে (২৫ কেজি) বস্তায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। তিনি বলেন, আমরা দিনাজপুর ও নওগাঁ থেকে চাল আমদানি করি। তবে দাম বৃদ্ধির কারণ তিনি জানেন না। তিনি প্রতিষ্ঠান মালিকের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। এ সময় কয়েক দফা মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে মুল্লুক চাঁদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন চাল বিক্রেতা জানান, অটোরাইচ মিল মালিকদের কারসাজি দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ। তারা বলেন, যশোর শহরের মুড়লী মোড় এলাকার এরিস্ট ফুড, পদ্মবিলার ইলা অটো (যশোর ট্রেডিং নামে পরিচিত), শার্শার উলাশীর পানবুড়ির গোল্ডেন অটো ও ফুলতলার শেখ অটো (জয়তুন অটো নামে পরিচিত), চৌগাছার সলুয়া বাজারের জেস কোম্পানি এবং বাঘারপাড়া, শালিখা ও আড়পাড়া এলাকায় রয়েছে বেশ কিছু অটোরাইস মিল। এসব মিলাররা আগে-ভাগে বাঁশমতি ও জিরে মিনিকেটসহ সরু ধানের মজুদ গড়ে রেখেছেন। এখন তারা বাজারে দর-দামে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।

পাইকারী ও খুচরা চাল বিক্রেতারা জানান, গত এক মাসের ব্যবধানে বাঁশমতি (বাংলামতি) প্রতি ২৫ কেজির বস্তায় ১শ’ থেকে দেড়শ’ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে চালের মান ও বাজার ভেদে বাংলামতি ২৫ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১৬১৫ টাকা থেকে ১৭২৫ টাকা। মিনিকেটের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১৪৭৫ থেকে ১৫২৫ টাকা, মোটা প্রকৃতির স্বর্ণার (গুটি) বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১০২৫ টাকা, ২৮ প্রজাতির বস্তা ১১৫০ টাকা ও কাজল লতা (মোটা) ১১০০ টাকা বস্তা বিক্রি হচ্ছে। এ হিসেবে প্রতিকেজিতে প্রজাতি, চালের মান ও বাজার ভেদে ৩ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৩ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে।

এ সময় বেশ কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা হয়। রিকশাচালক রইচ উদ্দিন বলেন এবার না খেয়ে মরতে হবে। তিনি বলেন, আতেলা তরকারি জুটলেও এবার পাতে উঠবে না ভাত। নিত্যপণ্য কিনতেই খালি হয়ে যাচ্ছে পকেট। চাল কিনুম কিভাবে-এমন প্রশ্ন রইচউদ্দিনের। ভাতে মারার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন রিকশা চালক রইচ। তিনি যশোর সদরের জগমহনপুর গ্রামের বাসিন্দা। ক্ষোভের আগুন ঝাড়েন এই রিকশাচালক। তিনি বলেন-কাকডাকা ভোরে রিকশা নিয়ে শহরে আসি। সন্ধ্যা অব্দি রিকশা চালাই। সারাদিনের ঘাম বিক্রির আয়-রোজগারে নিত্যপণ্য কেনাও যায় না। মুদির দোকানেই পকেট খালি হয়ে যায়। এর মধ্যে প্রতিকেজি চালে ৪-৫ টাকা করে বেড়েছে। এ যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা! মন্তব্য রইচের।

বারান্দি মোল্লা পাড়ার দিনমজুর রফিক, খড়কির ভ্যানচালক (মাটি বিক্রেতা) জয়নুল, কনেজপুর গ্রামের সবজি বিক্রেতা কালাম ও উপশহরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রহমত একইভাবে ক্ষোভ ঝাড়েন। তারা মনে করেন-বাচ্চাদের মুখে দু’ বেলা দুমুঠো ভাত তুলে দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে। নিত্যপণ্যের বাজারমূল্যে ছুটে চলা পাগলা ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরার কেউ নেই বলেও অভিযোগ তাদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *