যশোরে বোরো ধান লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন
এস আর নিরব যশোরঃ
প্রতিকুল আবহাওয়া উৎপাদনে কিছুটা ক্ষতি হলেও যশোরের আট উপজেলায় বোরো মৌসুমের ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। যা বেশিরভাগ কৃষকের ঘরে বা গোলয় উঠে গেছে।ঘূর্ণিঝড় অশনিসহ কালবৈশাখির প্রভাবে আবহাওয়া অনুকুল নয়। ঝড়ো হাওয়ার পাশাপাশি এক-দুইদিন পরপরই ঝরছে অঝোর ধারায় বৃষ্টি।
এবার বোরো মৌসুমে যশোরের আট উপজেলায় ৬ লাখ ৮৮ হাজার ১১৩ মেট্রিকটন চাল উৎপাদনে লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার ৩৮৩ মেট্রিকটন বেশি বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে। তবে উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও হেক্টরপ্রতি গড় ফলন গত বোরো মৌসুমের মত এ বছর একই আছে। এবছর (২০২১-২২) হেক্টরপ্রতি গড় ফলন চার দশমিক ৩৫ মেট্রিক টন। ৩০ মে যশোর অঞ্চলের ফসল কর্তন শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, খাদ্যশস্যে উদ্বৃত্ত যশোর জেলার আটটি উপজেলায় এক লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে এক লাখ ৫৮ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে আবাদি জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) চার দশমিক ২০ মেট্রিকটন এবং হাইব্রিড পাঁচ দশমিক ১০ মেট্রিকটন চাল উৎপাদিত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ঘূর্ণিঝড় অশনিতে আক্রান্ত আবাদি জমি ৯৬৫ হেক্টর; শতকরা ১৫ ভাগ। অশনীতে আক্রান্ত এ জমিতে উৎপাদিত ৯৭১ মেট্রিকটন চাল নষ্ট হয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিকে মাঠের ধান বাড়ি এনে তা মাড়িয়ে এখন সারা বছরের খাবারের জন্য তারা তৈরি করছেন চাল। গ্রামের প্রায় প্রতিটা বাড়িতেই চলছে ধান থেকে চাল তৈরির প্রক্রিয়া। বাড়ির আঙিনায় কেউ ধান ভিজিয়ে রাখছেন। কেউ চুলার আগুনে সেই ভেজানো ধান করছেন সিদ্ধ। আবার কেউ কেউ সিদ্ধ ধান শুকাচ্ছেন। বাংলার গ্রামীণ জনপদের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে এমন কর্মযজ্ঞ। এ কর্মযজ্ঞে ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষক পরিবারের মা-বোনদের।
উল্লেখ্য, কৃষি ক্যালেন্ডার অনুসারে এপ্রিল-মে মাসেই বোরো ধান কাটার সময়। এসময় বন্যা শিলাবৃষ্টির ঝুঁকিতে কৃষকরা দিন কাটায়; সেই ঝুঁকি এবছর বাড়িয়ে দেয় ঘূর্ণিঝড় অশনি। আবহাওয়া অনুকুল না থাকায় এবছর পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে খুব বেগ পেতে হয় কৃষকদের।
যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর হেক্টর প্রতি বোরো ধান ফলন সবচেয়ে বেশি হয়েছে সদর উপজেলায়। এ উপজেলায় বোরো আবাদ হয়েছিল ২৭ হাজার ২৬০ হেক্টর জমি; যে জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ১৮ হাজার ৫৮১ মেট্রিকটন। এ উপজেলায় অশনিতে আক্রান্ত আবাদি ১০৬ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত ক্ষতিগ্রস্ত চালের পরিমান ৬৯ মেট্রিকটন।
মণিরামপুরে আবাদ হয়েছিল ২৬ হাজার ৯৬৫ হেক্টর এবং কেশবপুর উপজেলায় বোরা ধানের আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৫২০ হেক্টর জমি; যে জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার ২৯৭ মেট্রিকটন। এ উপজেলায় অশনিতে আক্রান্ত আবাদি ২১৮ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত ক্ষতিগ্রস্ত ধানের পরিমান ১৪২ দশমিক ২ মেট্রিকটন।
শার্শা উপজেলায় আবাদ হয়েছিল ২৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমি; সেই জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ২ হাজার ৯২১ মেট্রিকটন। এ উপজেলায় অশনিতে আক্রান্ত আবাদি ৭১৩ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত ক্ষতিগ্রস্ত ধানের পরিমান ৪৬৫ দশমিক ১৪ মেট্রিকটন।
ঝিকরগাছায় আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমি; জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে ৮১হাজার ৯৯৭ মেট্রিকটন। এ উপজেলায় অশনিতে আক্রান্ত আবাদি ১৩৫ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত ক্ষতিগ্রস্ত ধানের পরিমান ৮৮ দশমিক শূন্য পাঁচ মেট্রিকটন।
চৌগাছায় আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমি; জমিতে ধানের উৎপাদন হয়েছে ৮১হাজার ৪০ মেট্রিকটন। এ উপজেলায় অশনিতে আক্রান্ত আবাদি ৮০ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত ক্ষতিগ্রস্ত ধানের পরিমান ৫২ মেট্রিকটন। বাঘারপাড়ায় আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৪২০ হেক্টরজমি; যে জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে ৭১হাজার ৪২৭ মেট্রিকটন। এ উপজেলায় অশনিতে আক্রান্ত আবাদি ৯৯ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত ক্ষতিগ্রস্ত ধানের পরিমান ৬৪ দশমিক ৫ মেট্রিকটন।
কেশবপুরে আবাদ করা হয়েছিল ১৪ হাজার ৫২০ হেক্টর জমি; যে জমিতে ধানের উৎপাদন হয়েছে ৬৩হাজার ১৬২ মেট্রিকটন। এ উপজেলায় অশনিতে আক্রান্ত আবাদি ৫০ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত ক্ষতিগ্রস্ত ধানের পরিমান ৩২ দশমিক ৫৫ মেট্রিকটন।
অভয়নগরে আবাদ করা হয়েছিল ১২ হাজার ২০০ হেক্টর জমি; যে জমিতে ধানের উৎপাদন হয়েছে ৫৩হাজার ৭০ মেট্রিকটন। এ উপজেলায় অশনিতে আক্রান্ত আবাদি ৯০ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত ক্ষতিগ্রস্ত ধানের পরিমান ৫৯ দশমিক ৬৫ মেট্রিকটন।