যশোর জেনারেল হাসপাতালে লোডশেডিংয়ে চরম দুর্ভোগে রোগী স্বজন ও চিকিৎসকরা

Share Now..

এস আর নিরবঃ
সারাদেশে সরকার ঘোষিত চলমান লোডশেডিংয়ে কোন বিকল্প প্রস্তুতি নেই যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। বিদ্যুৎ চলে গেলে বহিঃবিভাগ ও অন্তঃবিভাগ যেন অন্ধকারে ডুবছে। ফ্যান ঘুরছে না।

হাসপাতালের একমাত্র জেনারেটর বেশ কিছুদিন যাবত বিকল হয়ে পড়ে থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

চিকিৎসায় অপেক্ষাকৃত সুনাম থাকা যশোর জেনারেল হাসপাতালটিতে সারাদিন লেগেই থাকে রোগীদের আনাগোনা। শুধু যশোর নয়, আশেপাশের নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরার রোগীরাও আসেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু হাসপাতালটিতে বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা না থাকায় লোডশেডিংয়ের সময় রোগী ও স্বজনরা বিপদে পড়েছেন। জালানি সাশ্রয়ে ডিজেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রেখে কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে সরকার। তাই সারা দেশে বর্তমানে ঘোষণা দিয়ে লোডশেডিং করা হচ্ছে। গতকাল বুধবার সরকার ঘোষিত এলাকা ভিত্তিক লোডশেডিংয়ে হাসপাতালে বিদ্যুৎ ছিল না। এতে প্রচ- গরমে হাঁসফাঁস করতে থাকে শিশু ও বয়স্ক রোগীরা। সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে আধাঘণ্টা, বেলা বারোটার দিকে আধাগন্টা ও বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিট হতে ৪টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিলো। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আলো-বাতাসহীন অন্ধকার রুমে তীব্র গরমে দুর্ভোগে রয়েছেন মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের ঝুমঝুমপুরের তানজিলা আক্তার, পুরুষ পেয়িং ওয়ার্ডের খালধার রোডের সালাউদ্দিন আহম্মেদ ও সার্জারি ওয়ার্ডে থাকা বেনাপোলের ইব্রাহিমসহ বিভিন্ন রোগীরা। একই অবস্থা ছিল আউটডোরে। বেলা সাড়ে ১১ টায় ১৪ নম্বর কক্ষে অন্ধকার রুমে বসে ঘেমেনেয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন নারী চিকিৎসক। এরুমের সামনে কথা হয় রোগী ইব্রাহিম হোসেন মুন্না ও শিলা খাতুনের সাথে। তারা বলেন দীর্ঘ লাইনে থেকে ঘেমে কষ্ট করে ডাক্তারকে দেখা পেয়েছেন। চিকিৎসকও কষ্টভোগ করে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন।

হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, তীব্র গরমে কষ্টে আছেন রোগীরা। রোগীর স্বজনরা জানান, বিদ্যুৎ যখন চলে যাচ্ছে তখন হাতপাখায় তাদের একমাত্র ভসরা। তাদের দাবি, হাসপাতালে রোগীদের কথা চিন্তা করে জেনারেটর বা অন্য কোন উপায়ে ফ্যানগুলো চালানোর ব্যবস্থা করা।

হাসপাতালটিতে শয্যা সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি রোগী ভর্তি আছে বুধবার ৫৮৬ জন ভর্তি ছিলো। এ ছাড়াও প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজারের বেশি রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসে। আর বিদ্যুৎ চলে গেলে দুর্ভোগে পড়ে সবাই। এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া আছে রোগীদের মধ্যে।

কেবল হাসপাতাল নয়, বড় আকারের জেনারেটরটি দিয়ে হাসপাতাল ভবনের বেশ কয়েকটি বিভাগে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যেতো। কিন্তু এখন আর তা করা যাচ্ছে না। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জেনারেটরটি যে নষ্ট, তা স্বীকার করতে চাইছে না।

গত ১৮ জুলাই রাতে প্রায় দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না হাসপাতালে। এ সময় জেনারেটর চালু করতে না পারায় অন্ধকারে ছিল জেলার স্বাস্থ্যসেবার প্রধান এই প্রতিষ্ঠানটি। অপরদিকে চার তলায় শিশু ওয়ার্ডে বিকল্প কোন বিদুৎ ব্যবস্থা না থাকায় ডাক্তার, নার্স, রোগীসহ রোগীর স্বজনেরা পরে চরম দুর্ভোগে। গত রোববারে বাঘারপাড়ার হাগড়া গ্রাম থেকে ২ মাসের শিশু পুত্র হামিমকে নিয়ে হাসপাতলটিতে ভর্তি হয়। শিশুটির সবসময় অক্সিজেন প্রয়োজন বিদুৎ না থাকলে বিপকে পড়তে হচ্ছে। শিশু রোগীর স্বজন শাকিলা, রুনা বেগম, রেক্সনা বেগমসহ বেশ কয়েকজন রোগীর স্বজনেরা জানান, চার তলায় বিদুৎ চলে গেলে শিশুদের শান্ত রাখা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। একটি শিশু কান্না শুরু করলে অনন্য শিশুরা কান্না শুরু করে গরমে বেশ কষ্ট পেতে হয়।

২০১৯ সালে ৬০ লাখ টাকায় ৬০ কেভি জেনারেটরটি স্থাপন করা হয়। লোডশেডিং বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকলে এই জেনারেটর চালিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, ওয়ার্ড, অস্ত্রোপচার কক্ষ ও আবাসিক ভবনে বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো হতো। এছাড়াও ৪টি মিনি জেনারেটর সচল রয়েছে হাসপাতালটিতে। যখন যা তেল লাগবে তা কিনে দুর্যোগের মুহূর্তে জেনারেটর চালু করার আদেশ আছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা মানছেন না। আর এ কারণে লোডশেডিং হলেই চিকিৎসা সেবা বিশেষ করে অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখতে হয়। অন্যদিকে রাতে পরিণত হয় ভুতুড়ে অবস্থার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহিলা মেডিসিন এক সেবিকা (নার্স) বলেন, বুধবারই শুধু এ অবস্থা নয়, বিদ্যুৎ না থাকলে মাঝেমধ্যেই এমন দুঃসহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান ও গাইনি চিকিৎসক জেসমিন আরা জানান, বুধবার সাকাল আটটা থেকে ২ টা পর্যন্ত বেশ কয়েকবার বিদুৎ চলে যায়। হাসপাতালে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় রোগী দেখতে বেগ পেতে হয়।

এ বিষয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সঠিকভাবে পরিচালনা না করার কারণে হয়ত জেনারেটর ত্রুটিপূর্ণ হয়ে গেছে। গত সোমবার ঢাকায় পাঠানো হয়েছে, আজকালের মধ্যে জেনেরাটরটি চলে আসলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *