যশোর জেলা ট্রাফিক পুলিশের মামলা থেকে গত আট মাসে প্রায় ২৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়

Share Now..

এস আর নিরবঃ

যশোর জেলা ট্রাফিক পুলিশ গত আট মাসে মোটরসাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের মামলা দিয়ে প্রায় ২৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে । রেজ্রিস্টেশন, ট্যাক্স-টোকেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, হেলমেট বিহীন ও অতিরিক্ত যাত্রী বহনের অভিযোগে পাঁচ সহস্রাধিক মামলা দিয়ে রাষ্ট্রের অনুকুলে এই অর্থ আয় করা হয়েছে। এছাড়াও অবৈধ নসিমন, করিমন, ইজিবাই, অটো ভ্যান ও রিক্সা আটক এবং মামলা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় দশ কোটি টাকা আয় হয়েছে হেলমেট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স আইনের মামলায়।

অপরদিকে ট্রাফিক পুলিশের কাগজপত্র যাচাই বাছাই অভিযানের পর থেকে হেলমেটের দোকানেও ক্রেতাদের ভিড় করতে দেখা গেছে। কিন্তু নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিএসটিআই অনুমোদিত হেলমেট বিক্রির সংখ্যা তুলনা মূলকভাবে কম হয়েছে।

যশোর ট্রাফিক পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, যশোর জেলা ও শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ পরিদর্শক শহর ও যানবাহন, সার্জেন্ট, টিএসআই, এটিএসআই ও ৫০ জন কনস্টেবলসহ প্রায় ৭৫ জন কর্মকর্তা কর্মচারি যশোরের যানজট নিরসনের জন্য দায়িত্ব পালন করে আসছে। দুটি শিফটে গোটা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলিতে দায়িত্ব পালন করে যানজট মুক্ত রাখতে প্রায়ই তাদের হিমশিম খেতে হয়। তারপরও দায়িত্ব পালনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে থাকেন।

মাঝে মধ্যে যশোর শহর ও শহরতলী এবং বিভিন্ন থানার পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চলাচল করা বিভিন্ন যানবাহন ও চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে জরিমানাসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে যশোর ট্র্রাফিক বিভাগে পস মেশিন স্থাপণ করা হয়। এই মেশিনের মাধ্যমে ঘটনাস্থল থেকেই মামলা দেয়া হয়। এরপরে পর্যায়ক্রমে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২০ আগস্ট পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই পর্যন্ত ৬ সহস্রাধিক মামলা দেয়া হয়।

মূলত যাদের রেজিস্ট্রেশন হয়নি, ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই, রুট পার্মিট নেই, হেলমেট নেই এবং অতিরিক্ত যাত্রী বহনের মত অপরাধে মামলা দেয়া হয়। তবে ৫ সহস্রাধিক মামলার মধ্যে হেলমেটের মামলাই রয়েছে প্রায় ৩ হাজার। ওই মামলা থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। এর পাশাপাশি ড্রাইভিং লাইসেন্সের মামলার সংখ্যা প্রায় দুই হাজার।

এছাড়া রেজিস্ট্রেশন বিহীন অনেক মোটরসাইকেল আটক হয়। আটককৃত ওই গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের জন্য বিআরটিএ’র মাধ্যমে টাকাগুলো ব্যাংকে জমা হয়। সেই টাকার পরিমানও কম নয়।

তাছাড়া মহাসড়কে চলাচলরত নসিমন, করিমন, ইজিবাইক, অটো ভ্যানও রিক্সাসহ বিভিন্ন ধরণের অবৈধ গাড়িও আটক করা হয়। যদিও ওই সকল যানবাহন অবৈধ কিন্তু আটকের পর নির্দিষ্ট পরিমানে সরকারের ঘরে জরিমানা দিয়ে তারা ছাড়া পেয়ে যায়।

এদিকে দক্ষিণবঙ্গের মোটর পার্টসের বাজার যশোর শহরের আরএন রোড। সেখানে গিয়ে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশের মামলার ভয়ে অনেকেই এখন হেলমেট ব্যবহার করছেন। গতকাল রবিবার শিমুল হোসেন নামে একজন মোটরসাইকেল চালক ৬শ’ টাকা দিয়ে হেলমেট কেনেন । ওই হেলমেটটি নিরাপত্তা যোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন বিক্রেতা। কিন্তু ক্রেতা শিমুল হোসেন বলেন, একটা হেলমেট ব্যবহার করতে হবে। কম মূল্যের হলেও চলবে। মাথায় একটা থাকলেই হবে।

আরএন রোডের রবি স্পেয়ার্স নামক দোকানের সত্বাধীকারী ফজল মাহমুদ বলেন, তুলনা মূলক হেলমেট বিক্রি আগের চেয়ে বেশি। কিন্তু নিরাপত্তার জন্য যেগুলো প্রয়োজন, তা হচ্ছেনা। ক্রেতারা অনেকেই কম মূল্যে কিনতে আসেন। তারা এসে বলেন, ‘পুলিশকে দেখানোর জন্য একটা হলেও চলবে।’

সম্প্রতি হেলমেট ব্যবহারের বিষয়টি ট্রাফিক পুলিশ জোরদার করায় বিএসটিআই এইদিকে নজর দিয়েছে। যদিও অধিকাংশ হেলমটে চায়না থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। কিন্তু সেখানে বিএসটিআই অনুমোদিত হতে হবে। আর বিএসটিআই অনুমোদিত হেলমেট গুলোর মূল্য কমপক্ষে দেড় হাজার টাকা। বর্তমান হেলমেটের বাজারে মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি হয়েছে। সেই তুলনায় ৮ থেকে ৯শ’ টাকার মধ্যে হেলমেট বিক্রির সংখ্যাও কম নয়।

যশোরের হেলমেট বাজারের বড় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মানিক খান বলেন, অথনৈতিক ভাবে স্বচ্ছল ব্যক্তিরা টাকার চেয়ে জীবনের মূল্য দেখেন বেশি। সে কারণে অনেকেই জীবনের মূল্যকে প্রাধান্য দেয়ায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা মূল্যের হেলমেটও কিনে থাকেন। আর যারা টাকার মূল্য বেশি দেন, তারা ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা মূল্যের হেলমেট বেশি কেনেন।

এ বিষয়ে যশোর ট্রাফিক পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, যশোরের ট্রাফিক পুলিশ সকাল ৮ টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দুইটি শিফটে দায়িত্ব পালন করছে। অবৈধ যানবাহন আটক ও যাদের কাগজপত্রে ত্রুটি আছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকার মত রাজস্ব আয় করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *