যশোর-মাগুরা মহাসড়কে ট্রাক ও ট্রাক্টর থেকে মাটি পড়ে মরন ফাঁদে পরিণত

Share Now..

যশোর জেলা প্রতিনিধিঃ
যশোর-মাগুরা আঞ্চলিক মহাসড়কে ট্রাক ও ট্রাক্টর থেকে মাটি পড়ে মরন ফাঁদে পরিণত হয়েছে। মহাসড়ক ব্যবহার করে অবাধে নদী, খাল ও ফসলি জমির মাটি বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছে এক শ্রেণীর ভূমিদস্যু চক্র। দিনরাত ট্রাক ও ট্রাক্টরে করে এসব মাটি বহন করার সময় ঝাঁকুনিতে কিছু মাটি সড়কের ওপর পড়েছে। সড়কে চলা যানবাহনের চাপায় সেই ভেজা মাটি সড়কের ওপর লেপ্টে গেছে। এর মধ্যে শুক্রবার বিকেলে যশোরে মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিতে সড়কের বিভিন্নস্থান পিচ্ছিল হয়ে গেছে কাদায়। শুধু ব্যস্ততম এই মহাসড়ক নয়; সদর ও বাঘারপাড়া উপজেলার ছোটবড় বিভিন্ন সড়কে এমন চিত্র দেখা গেছে।

শনিবার (২৩ এপ্রিল) সকাল নয়টা পর্যন্ত পিচ্ছিল এসব সড়কে অন্তত দশটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন শিশুসহ অন্তত পনের জন নারী-পুরুষ। এর মধ্যে সদর উপজেলার ইছালী এলাকার বাসিন্দা হাসপাতালের সিকিউরিটি গার্ড তরিকুল ইসলাম (৩০) মারাত্মক জখম হয়েছেন। মাথায় হেলমেট থাকায় প্রাণে বেঁচে যান তিনি। এসব ঘটনায় গাড়িচালক ও পথচারীদের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, যশোর-মাগুরা মহাসড়ক, বাঘারপাড়া-কালীগঞ্জ ও খাজুরা-চতুরবাড়িয়া সড়কের পাশে অন্তত ডজন খানেক ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটা, জেলা শহরসহ বিভিন্নস্থানে নির্মাণ বা ডোবা, পুকুর ভরাটসহ আবাসনের জন্য মাটি বহনের জন্য ওই সড়কগুলো ব্যবহার করা হয়। অসংখ্য ট্রাক ও ট্রাক্টরে দিনরাত মাটি বহনের ফলে সড়ক বেহাল হলেও এখনো মাটি বহন বন্ধ হয়নি। মাটি বহনের সময় মাটির ওপর ঢাকনা ব্যবহারের কড়াকড়ি আইন থাকলেও সেসব না মেনেই প্রতিনিয়ত সড়কে ফেলা হচ্ছে মাটির আস্তরণ।

সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে, রাজাপুর জামতলা মোড়ে ও লেবুতলা খাজুরা এলাকায় যশোর-মাগুরা মহাসড়কের প্রায় এক কিলোমিটার, একই সড়কের বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা পুলিশ ক্যাম্প থেকে সাদীপুর কদমতলা মোড় পর্যন্ত প্রায় আড়াই তিন কিলোমিটার এবং পুলেরহাট বাজার থেকে গাইদঘাট বাজার পর্যন্ত সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার অংশ পিচ্ছিল হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া বাঘারপাড়া-কালীগঞ্জ সড়কের খাজুরা তৈলপাম্প থেকে ভদ্রডাঙ্গা ছব্বারের মোড়, একই সড়কের খাজুরা বাজার ব্রীজঘাট থেকে পার্বতীপুর চৌরাস্তা, জহুরপুর বাজার থেকে শেখ ভাটার মোড় এবং খাজুরা-চতুরবাড়িয়া সড়কের চন্ডিপুর আমিরের মোড় থেকে খালিয়া যাত্রী ছাউনি পর্যন্ত পিচঢালা সড়কের ওপর মাটি ও কাদার আস্তরণে বোঝাই যায় না সড়কটি পাকা না কাঁচা। পিচ্ছিল এসব রাস্তা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীবাহী বাস, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, ইজিবাইক, ইঞ্জিন ভ্যানসহ ছোটখাটো যানবাহনে চলাচলকারীরা নিম্নগতিতে যাতায়াত করছে। সড়কে হেটেও চলা এখন দুষ্কর।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভূমিদস্যু ওই চক্রটি বেপরোয়া হওয়ায় স্থানীয়রা প্রতিবাদ করার সাহস পান না। অধিকাংশ ভাটা মালিকেরা স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন ও দাদন ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকেন। যে কারণে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে রোষানলে পড়তে হয়। এমনকি মাটি বহনকারী ট্রাক ও ট্রাক্টরে নিয়োজিত শ্রমিকদের কাছে নিগৃহীতও হতে হয় সাধারণ লোকজনকে।

যশোর-মাগুরা মহাসড়কে নিয়মিত চলাচলকারী মোটরসাইকেল চালক আজমুল হোসেন বলেন, ‘ইটভাটার ট্রাকের জন্য বিপদে আছি। এতদিন ধুলার মধ্যে ছিলাম। এখন কাঁদায় আছাড় খেতে হচ্ছে।’

ইজিবাইক চালক মসলেম আলী বলেন, ‘এঁটেল-দোআঁশ মাটি সড়কে এমনভাবে লেপ্টে গেছে যা অপসারণ না করলে সহজে সড়ক থেকে সরবে না। ফলে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

সড়কের পাশের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম নান্টু বলেন, ‘একদিন-দুদিন নয়; পাঁচ বছর যাবৎ দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। শুকনার সময় ধুলায় দম বন্ধ হয়ে আসে। বর্ষার সময় পাকা রাস্তায় থকথকে কাদা থাকে। হেঁটেও চলা দুষ্কর হয়ে পড়ে।’

বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ ন ম আবুজর গিফারী বলেন, ‘আমরা খুব দ্রুত ইটভাটা মালিকদের নিয়ে বসবো। প্রথমে তাদেরকে সর্তকমূলকভাবে বলা হবে। নির্দেশ না মানলে পরবর্তীতে কঠোর ব্যবস্থা নেবো।’

জানতে চাইলে, যশোর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মেহেদী ইকবাল বলেন, ‘আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানাবো।’

এ বিষয়ে বারোবাজার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা মহাসড়কে নিষিদ্ধ যানবাহন আটকের নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। তারপরও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পাশের কিছু শাখা সড়ক দিয়ে মাটিটানা ট্রাক ও ট্রাক্টর সড়ক ব্যবহার করছে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আমাদের এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *