যশোর মেডিকেল কলেজে পড়বে কাজল, দায়িত্ব নিলেন ইউএনও ইরুফা সুলতানা
এস আর নিরব যশোরঃ
যশোর মেডিকেল কলেজে পড়বে কাজল, দায়িত্ব নিলেন ইউএনও ইরুফা সুলতানা। অভাব অনটনের কারণে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করতে পারবে কিনা সেটা দুশ্চিন্তায় ছিলেন কাজল।
মা রেবা রাণি মন্ডল পরের বাড়িতে ঝি’য়ের কাজ করে আর বাবা সুধাংশু কুমার মন্ডল কৃষি মজুরী করে লেখাপড়া শিখিয়েছেন কাজল মন্ডলকে। ২০২২ সালে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যশোর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে কাজল। সুযোগ পেলেও ছেলেকে ভর্তি করাবেন কি করে এনিয়ে কাজলের বাবা মার চিন্তার অন্ত নেই। বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার (২২ এপ্রিল) স্থানীয় এক সাংবাদিকের ফেসবুক পেজ ‘চৌগাছা টিভি’তে সরেজমিন সাক্ষাৎকার প্রচার হয়।
সাক্ষাৎকার প্রচারের প্রায় সাথে সাথেই বিষয়টি নজরে আসে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানার। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ওই সাংবাদিকের কাছ থেকে ওই পরিবারের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেন। শনিবার (২৩ এপ্রিল) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা কাজলের বাড়িতে মিস্টি নিয়ে যান। সেখানে কাজলের মাকে তিনি মিস্টিমুখ করান। এসময় কাজলের মা রেবা রাণি আপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা কাজলের মা’র সাথে দীর্ঘ সময় কথা বলে তাকে কোন অবস্থাতেই মনোবল না হারাতে বলেন। তিনি কাজলদের পরিবারের খোঁজ-খবর নেন এবং তার ভর্তির খরচ নিজে দেবেন বলে আস্বস্ত করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজের মোবাইল নম্বর কাজলের মা’র কাছে দিয়ে যে কোনো প্রয়োজনে তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজলের লেখাপড়ার অন্যান্য সকল বিষয়ে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে বলে ঘোষণা দেন।
মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া কাজল মন্ডল উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়নের রাণিয়ালী গ্রামের সুধাংশু কুমার মন্ডলের ছেলে। তারা দুইভাই বোন। বড় বোন ঝিনাইদহের কেসি কলেজে একটি বিষয়ে সম্মান (৩য় বর্ষে) শ্রেণিতে অধ্যায়ণরত।
এরআগে শুক্রবার সরেজমিনে কাজলের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, একটি পাটখড়ির দেয়ালে টিনের ছাউনি দেয়া ঝুপড়ি ঘরে তারা বসবাস করেন। পাশে একটি ভাঙাচোরা জায়গায় কিছু লাকড়ি রাখা।
কাজল, কাজলের পিতা সুধাংশু এবং মা রেবা রাণি জানান, তাদের সামান্য ভিটাবাড়ি টুকুই আছে। আর কোনো জমি নেই। কাজলের পিতা পরের জমিতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য গোবিন্দ কুমার এবং পাশাপোল ইউপি চেয়ারম্যান অবাইদুল ইসলাম সবুজও তাদের অসহায়ত্বের বিষয় নিশ্চিত করেন।
কাজল জানান, ২০১৯ সালে গ্রামের রাণিয়ালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর শত অভাবের পরও যশোর সরকারি সিটি কলেজে তাকে ভর্তি করে তার পরিবার। সেখানে একটি ছোট বাসা ভাড়া নেয়া হয়। কাজলের মা রেবা রাণি শহরে ছেলেকে রান্না করে দেয়ার জন্য সেখানে থেকে শহরের বিত্তবানদের বাড়িতে ঝি’য়ের কাজ করে ছেলের ঘরভাড়া ও কোচিংয়ের খরচ যোগান দেন। অন্যদিকে বাবা সুধাংশু বাড়িতে দুই বছর একা পরের খেতে কাজ শেষে ফিরে রান্না করে খেয়েছেন এবং ঝিনাইদহের কেসি কলেজে পড়ুয়া মেয়ের খরচ যুগিয়েছেন।
সুধাংশু মন্ডল বলেন, আমার দুই সন্তানই ছোটবেলা থেকে মেধাবী হওয়ায় স্ত্রী রেবার উৎসাহে শত অভাবের মধ্যেও ওদের লেখাপড়া বাদদিতে বলিনি।
কাজলের মা রেবা মন্ডল ইউএনওকে বলেন, অনেক কষ্ট করে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। এখন আপনারা একটু সহযোগিতা করলে…. বলতে বলতে আবারো কেঁদে ফেলেন।এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে সাহস দিয়ে বলেন, কোন অবস্থাতেই ভেঙে পড়বেন না। আমিসহ উপজেলা ও জেলা প্রশাসন আপনার পাশে আছে। আপনি একজন রত্মগর্ভা মা।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, অদম্য মেধাবী কাজলের পাশে চৌগাছা উপজেলা প্রশাসন ও যশোর জেলা প্রশাসন সবসময় থাকবে। জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে কথা বলেছি। কাজলের ভর্তির টাকা আমি নিজে দেব। তার লেখাপড়ার খরচ চালানোর জন্য ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, কাজলদের জীর্ণ কুঠির দেখেছি। কাজলের বাবা মা’কে সরকারি একটি বাড়ি দেয়া যায় কিনা সে বিষয়টিও দেখা হবে বলে জানান তিনি।