যশোর সদরে স্থায়ী সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় ভোগান্তিতে যশোর সদরবাসী, বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার
এস আর নিরব যশোরঃ
চার মাস ধরে সাব-রেজিস্ট্রারে পদ শূণ্য থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে যশোর সদর উপজেলাবাসী। গত চার মাসে প্রায় ১ হাজার দলিল হাতে পাওয়ার প্রহর গুনছেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে, জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভোগান্তির পাশাপাশি সরকারও হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। প্রতি মাসে ৬০ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
এছাড়া যশোর সদর উপজেলার ৪৫০ জন দলিল লেখক বেকার সময় পার করছেন।
জানা যায়, যশোর সদর সাব-রেজিস্ট্রার রফিকুল আলম চলতি বছরে ৫ জানুয়ারি অবসারে গেছেন। পদ শূণ্য হওয়ার পর থেকে খণ্ডকালীন সাব-রেজিস্ট্রার দিয়ে কাজ করার কথা। কিন্তু সেই সাব-রেজিস্ট্রারেরা নাম মাত্র অফিসে আসেন এবং দুই-চারটা কাজ করে চলে যায় বলে অভিযোগ আছে সদরের দলিল লেখকদের। ফলে উপজেলার শত শত জমি ক্রেতা-বিক্রেতা ও জরুরি কাজে দলিল উত্তোলনকারীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন।
কেশবপুর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অমাইক বাবু এবং চৌগাছা উপজেলার সাব- রেজিস্ট্রার মোস্তাক হোসেন সপ্তাহে নিদিষ্ট তিন দিন নিজ কর্মস্থলে কাজ করেন। বাকি দুই দিন করে যশোর সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে খণ্ডকালীন কাজ করছেন। যার ফলে দুই উপজেলা কাজ ঠেকাতে গিয়ে তারা হিমসিম খাচ্ছেন বলে জানান যশোর জেলা রেজিস্ট্রার শাহাজাহান সর্দার।
সূত্র মতে, জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে যশোর সদর সাব-রেজিস্ট্রোর অফিসে কাজের চাপ বেশি। সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের কাজসহ মোট ২৫৪টি মৌজার জমির রেজিস্ট্রির কাজ হয়। গত চার মাসে প্রায় ১ হাজার দলিলের কাজ পড়ে আসে। এবং গত দুই সপ্তাহ ধরে যশোর সদর দলিল লেখকেরা জমির কোনো ধরনের কাজ নিচ্ছে না। ফলে প্রতিদিন উপকারভোগীরা কাজ করাতে এসে ফিরে যাচ্ছে।
উপজেলার চুড়মনকাটি থেকে জমি রেজিস্ট্রোরে কাজে করাতে আসেন নাজির হোসেন। খণ্ডকালীন সাব-রেজিস্ট্রার অমাইক বাবু ছুটিতে থাকায় ফিরে যেতে হয় তাকে।
নাজির হোসেন বলেন, আমি জমি কিনে দিনক্ষণ ঠিক করে জমি বিক্রেতাকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা দিয়েছি। জমি বিক্রেতা একজন অসুস্থ মানুষ। সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় আমার জমি রেজিস্ট্রি হচ্ছে না। জমি রেজিস্ট্রি হওয়ার আগে উনি মারা গেলে আমার সব শেষ হয়ে যাবে।
নওয়াপাড়া ইউনিয়নের শেখহাটি গ্রামের জাফর ইকবাল বলেন, আমি জমি বিক্রি করতে না পেরে আমার বাবাকে ভারতে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যেতে পারছি না।
সদর উপজেলা দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির সভাপতি হায়দার আলী বলেন, স্থায়ী সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত ২১৬ ও তাদের সহকারীসহ ৪৫০ জন দলিল লেখক বেকার সময় পার করছেন। কয়েক দিন পরে ঈদ কিন্তু কোনো কাজ নেই, তো টাকাও নেই। এতো গুলো পরিবার কিভাবে ঈদ করবে।
তিনি হুশিয়ার করে বলেন, এক মাসের মধ্যে স্থায়ী সাব-রেজিস্ট্রার নিয়োগ না দেয়া হলে সংগঠনের পক্ষ থেকে কমসূচি গ্রহণ করা হবে।
সদর সবা-রেজিস্ট্রার অফিসের পেশকার এসএম বদর উদ্দিন বলেন, প্রতি দিন কাজ না হওয়ায় মাসে ৬০ লাখ টাকা রাজস্ব হারাছে সরকার। দ্রুত স্থায়ী সাব-রেজিস্ট্রার নিয়োগ দিতে হবে।
যশোর জেলা রেজিস্ট্রার শাহাজাহান সর্দার বলেন, জনগণের ভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট বিভাগে জানানো হয়েছে। শীঘ্রই স্থায়ী সাব- রেজিস্ট্রার পাবো বলে আশা করছি।