রমজান মাসে ইবাদতের গুরুত্ব

Share Now..

সিয়াম সাধনা, আত্মত্যাগ আর আত্মার পরিশুদ্ধির এক মহান মাস রমজান। পবিত্র মাহে রমজানকে আল্লাহ তাআলা বিস্ময়কর এবং অসাধারণ বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল করেছেন। মহান আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা রমজান মাসে রোজা পালনের আদেশ প্রদান করতে গিয়ে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা রমজান মাস পাবে, তারা যেন এই মাসে সিয়াম বা রোজা পালন করে।’ (সুরা বাকারা :১৮৫)

সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষকে সৃষ্টি করার একমাত্র উদেশ্য হলো মানুষ সর্বাবস্থায় ও সব কাজে আল্লাহ তাআলার ইবাদত, দাসত্ব ও আনুগত্য করার মাধ্যমে তার দায়িত্ব পালন করে আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জন করবে। মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এ সম্পর্কে কুরআন মাজিদে বলেন, ‘একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্যই জিন ও মানুষ জাতি সৃষ্টি করেছি। আমি তো তাদের কাছে কোনো জীবিকা চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমার আহার বা খাবার জোগাবে।’ (সুরা জারিয়াত :৫৬-৫৭)

রমজান মাসে ইবাদতের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে হজরত রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, রমজান মাসে যে ব্যক্তি একটি ভালো কাজ করল অথবা একটি নফল আদায় করল, সে যেন অন্য মাসের একটি ফরজ আদায় করল। আর এই রমজান মাসে যে ব্যক্তি একটি ফরজ আদায় করল, সে যেন অন্য মাসের ৭০টি ফরজ আদায়ের সওয়াব লাভ করল। এজন্য মাহে রমজানে রাতে তারাবিহর নামাজ এবং তাহাজ্জুতের নামাজ আদায়ের ব্যাপারে যথেষ্ট যত্নশীল হতে হবে। এ সম্পর্কে হজরত রসুলে কারিম (স.) বলেন, যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ইমানের সঙ্গে সওয়াব লাভের উদ্দেশ্য নিয়ে নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন ।

রমজান মাসে অধিক পরিমাণে কুরআন শরিফ তেলাওয়াতের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। হজরত আবদুল্লাহ এবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রসুলে করিম  (স.) বলেছেন, রমজানের রোজা ও কুরআন রোজাদার বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আল্লাহ! আমি এই লোককে রোজার দিন পানাহার ও যৌন প্রবৃত্তি চরিতার্থ করা থেকে বিরত রেখেছি। এতএব, তুমি এর জন্য আমার সুপারিশ কবুল করো। আর কুরআন বলবে, হে আল্লাহ! আমি তাকে রাত্রিকালে নিদ্রামগ্ন ও বিশ্রাম থেকে বাধা দান করেছি। কাজেই তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল করো। অতঃপর উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে। (বোখারি ও মুসলিম) অর্থাত্, উভয় আমলকারীকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে।

রমজান মাসে দান-খয়রাত, সমবেদনা, সহমর্মিতা ও সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করতে হবে। বিশেষ করে রোজাদারদের প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়াতে হবে। এ প্রসঙ্গে হজরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন, রমজান মাসে যে ব্যক্তি একজন রোজাদার ব্যক্তির জন্য ইফতারির ব্যবস্থা করল, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তার গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং জাহান্নামের কঠিন ও ভয়াবহ আজাব থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হবে। আর সে যাকে ইফতার করাবে, তার সমপরিমাণ সওয়াব এমনভাবে লাভ করবে যে, ঐ রোজাদার ব্যক্তির সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না।

 রমজান মাসে অতিরিক্ত এবাদাত-বন্দেগিতে নিজেকে সদা সর্বদা নিয়োজিত রাখতে হবে। বেশি বেশি দরুদ পড়া, বিভিন্ন তাসবিহ পাঠ করা, গরিব-অসহায় ও দুর্গত লোকদের প্রতি আর্থিক সহযোগিতা করা এবং সমবেদনা, সহমর্মিতা, সহযোগিতা, সহানুভূতি, সদয় আচরণ ও বদান্যতার মাধ্যমে দুনিয়ার শান্তি ও পরকালীন মুক্তি, কল্যাণ ও সফলতার পথ প্রশস্ত করে নেওয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। রমজান মাস হলো কুরআন তেলাওয়াত,  জিকির-আসকার এবং আল্লাহ তাআলার নৈকট্যলাভের এক বিশেষ মৌসুম, আত্মিক উত্কর্ষ ও পরকালীন কল্যাণ লাভের এক জান্নাতি সওগাত এই মাহে রমজানুল মোবারক। মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে সঠিক পন্থায় রমজান মাসে সিয়াম বা রোজা পালন করে অতিরিক্ত এবাদাত করার মাধ্যেমে আল্লাহ তাআলার রহমত, বরকত লাভ ও নৈকট্য অর্জন করার তাওফিক দান করুন। (আল্লাহুম্মা আমিন ) 

lলেখক :ইসলামি চিন্তাবিদ, ধর্মীয় আলোচক ও গবেষক

One thought on “রমজান মাসে ইবাদতের গুরুত্ব

  • December 30, 2024 at 9:07 pm
    Permalink

    I’ve been browsing on-line more than three hours as of late, but I by no mrans
    discoverred any interesting article like yours. It is beautiful
    worth sufficient for me. In my opinion, iff all website owners
    and bloggers made goood content material as you
    probably did, the web will probably be much more useful than ever before. http://boyarka-inform.com/

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *