রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলামুক্ত ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশের তরুণ ভোটাররা

Share Now..

বাংলাদেশের রাজধানীর একটি প্রযুক্তি কেন্দ্রে আইটি সেন্টারে আড্ডা দিচ্ছেন একদল তরুণী। তারা আলোচনা করছিলেন একটি কোডিং সমস্যা নিয়ে। তাদের মধ্যে অনেকেই ঝকঝকে নতুন মেট্রো রেলে চড়ে ঢাকায় যাত্রা করে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সর্বশেষ তথ্যের জন্য নিজেদের স্মার্টফোনগুলোতে নজর রাখে।

কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক লড়াই রাজপথে সহিংসতার জন্ম দিয়েছে। নেতৃত্বে ছিল প্রধান দুটি দল যাদের প্রধান উভয়েই নারী। কিন্তু একটি প্রজন্মগত পরিবর্তনের লক্ষণও রয়েছে। কারণ প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দেশটিতে আরেকটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৭ জানুয়ারি।

প্রধান বিরোধী দল এই নির্বাচন বয়কটের ডাক দিয়েছে। আর লক্ষ লক্ষ তরুণ ভোটার নতুন কিছু চাচ্ছেন। ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তি শিল্প, প্রাণবন্ত ই-কমার্স ও ক্রমবর্ধমান পাবলিক ডিজিটাল অবকাঠামো দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশটির পুঁজি প্রযুক্তি বুদ্ধিসম্পন্ন একদল তরুণ। রাজনীতিবিদদের নিকট প্রত্যাশা এখন পরিবর্তনের।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন ২০৪১ সালের মধ্যে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ও ২০৩০ সালের মধ্যে দেড় কোটি যুবকের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে।

৩০শে ডিসেম্বর ঢাকার বাইরে এক বিশাল নির্বাচনী সমাবেশের ভাষণে হাসিনা তরুণ ভোটারদের সমর্থন চেয়ে বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে যেন তার দলকে ভোট দেয়।

কেউ কেউ এই ভাষণ শুনেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের লেকচারার শাহরিমা তানজিন অরনির (২৬) মতে শেখ হাসিনা হলেন ডিজিটাল ভবিষ্যতের একজন সাহসী নেতৃত্ব। তিনি অতীতের মূল্যবোধকে ধারণ করলেও একই সঙ্গে তার প্রগতিশীল হৃদয়ে প্রগতিশীল চিন্তাভাবনাও রয়েছে, যা সাধারণত বাংলাদেশি সমাজে দেখা যায় না।

আগের দুটি সাধারণ নির্বাচন ভোট কারচুপি ও ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ থাকলেও কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করেছে। শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হয়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু তার সমালোচকরা অভিযোগ করেন, তিনি অংশমূলক নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে দুর্বল করছেন ও বিরোধীদের দমন করছেন। হাসিনা বিরোধীদের সহিংসতার জন্য দায়ী করেছেন।

তরুণ ভোটাররা বলছেন, তারা অত্যন্ত মেরুকৃত রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে উদ্বেগ থেকে মুক্তি চান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুর রহিম রনি বলেন, ‘আমার ইচ্ছা… বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে, তাদের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত হবে এবং বিচার ব্যবস্থা স্বাধীনভাবে কাজ করবে। আমি এও চাই যে কোনো রাজনৈতিক দল বা সরকার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করবে না।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো অনুসারে, দেশের জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ ১৫-২৯ বছর বয়সী। দেশের ১২ কোটি নিবন্ধিত ভোটারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।

বাংলাদেশ সিটিজেনস প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজির অনলাইনে পরিচালিত অক্টোবরের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৬৯ শতাংশ যুবক দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিকে দেশের উন্নয়নের প্রধান বাধা হিসেবে বিবেচনা করেন।

নতুন ভোটার ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র রাউল তামজিদ রহমান বলেন, ‘আমরা রাজপথে কোনো বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতা চাই না। যখন আমি আমার পড়াশুনা শেষ করব, তখন আমি একটি চাকরি করতে চাই বা শান্তিপূর্ণভাবে নিজের ব্যবসা শুরু করতে চাই। এটি আমাদের প্রজন্মের কাছ থেকে আমাদের রাজনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান।’

বাংলাদেশে টেলিকম বুম শুরু হয়েছিল ১৯৯৭ সালে যখন শেখ হাসিনা মোবাইল ফোন সেক্টর পরিচালনার জন্য তিনটি অপারেটরকে বিনামূল্যে লাইসেন্স প্রদান করেন। এটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশে বিনিয়োগ করার জন্য বিশ্বব্যাপী কোম্পানিগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।

শ্রীলঙ্কা ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এলআইআরএনই এশিয়ার একজন সিনিয়র পলিসি ফেলো আবু সাঈদ খান বলেছেন, ‘ডিজিটাল অর্থনীতির সম্প্রসারণ একটি অলৌকিক ঘটনা যা অর্থনৈতিক দৃশ্যপটে পরিবর্তন আনছে, যার নেতৃত্বে তরুণরা।’

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের মতে, দেশে এখন প্রায় ১২ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে যার প্রায় ১১ কোটি মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক।

One thought on “রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলামুক্ত ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশের তরুণ ভোটাররা

  • January 5, 2024 at 5:06 pm
    Permalink

    This website definitely has all of the information and facts I needed concerning this subject and didn’t know who to ask.

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *