রাশিয়াজুড়ে শঙ্কা-অসন্তোষ বাড়ছে

Share Now..


রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দেশটিতে সেনা সমাবেশের ঘোষণা দেওয়ার পর দেশটিজুড়ে বিভ্রান্তি-সন্তোষ বাড়ছে। মুখে তিন লাখের কথা বললেও বাস্তবে ১০ লাখ রুশ তরুণকে সংরক্ষিত বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে রাশিয়ায় আশঙ্কা বাড়ছে। ক্রেমলিন এমন দাবি অস্বীকার করলেও দেশজুড়ে অসন্তোষ বাড়ছে।ইউক্রেনের সৈন্যদের হাতে সম্প্রতি নাস্তানাবুদ হয়ে রাশিয়ার দখলদার বাহিনী বেশ বেকায়দায় পড়েছে। বাহিনীকে চাঙ্গা করতে সেই দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তিন লাখ রুশ তরুণকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কিন্তু প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সেই আচমকা ঘোষণাকে ঘিরে আতঙ্কের সঙ্গে সঙ্গে বিভ্রান্তিও বাড়ছে। কারণ বাস্তবে এমন সব মানুষকে তলব করা হচ্ছে, প্রেসিডেন্টের ঘোষণায় যাদের অব্যাহতি পাবার কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষারত বেশ কিছু ছাত্রেরও ডাক পড়ায় একটা ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে যে মোটেই তিন লাখ নয়, আসলে ১০ লাখ মানুষকে যুদ্ধে পাঠাতে চাইছে রুশ সরকার। রাশিয়ায় নিষিদ্ধ ‘নোভায়া গাজেতা’ সংবাদপত্র পুতিনের এমন নির্দেশের খবর প্রকাশ করেছে।

ক্রেমলিন অবশ্য বিষয়টিকে ‘গুজব’ হিসেবে উড়িয়ে দিচ্ছে। সরকারি মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, একাধিক রুশ সংবাদ সংস্থায় প্রকাশিত এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা। তার মতে, যেসব পুরুষ সম্প্রতি সামরিক প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন, মূলত তাদেরই তলব করা হচ্ছে।

কোন বয়স পর্যন্ত মানুষদের ডাক পড়বে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তা স্থির করবে বলে পেসকভ জানান। সংরক্ষিত বাহিনীতে ডাক পড়ার ভয়ে রুশ তরুণরা দলে দলে দেশ ছাড়ছেন, এমন খবর ‘অতিরঞ্জিত’ হিসেবে বর্ণনা করেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র। উল্লেখ্য, বিশেষ করে তুরস্ক ও ফিনল্যান্ডে আচমকা রুশ তরুণদের আগমন অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে গেছে।

রাশিয়ার প্রায় সব পরিবারেই এক বা একাধিক সদস্য সংরক্ষিত বাহিনীর সদস্য হিসেবে নথিভুক্ত। ফলে গোটা দেশেই এই ঘোষণা ও ভবিষ্যতকে ঘিরে চরম দুশ্চিন্তা দেখা দিচ্ছে। জরুরি অবস্থা জারি করে শেষ পর্যন্ত দেশের সব ‘সক্ষম’ পুরুষদের যুদ্ধ পাঠানো হবে বলেও একটা ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে।
রাশিয়ার ৩৮টি শহরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ‘বেআইনি’ সমাবেশে যোগ দেবার অভিযোগে পুলিশ যাদের আটক করছে, তাদের মধ্যে কিছু মানুষের ওপর অবিলম্বে যুদ্ধে পাঠানোর জন্য জোর খাটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। ওভিডি-ইনফো নামের এক নাগরিক অধিকার গোষ্ঠীর সূত্র অনুযায়ী সারা দেশে ১,৩০০-রও বেশি বিক্ষোভকারীকে পুলিশ আটক করেছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার দৈনিক ভাষণে বলেন, রাশিয়ার তরুণদের সামনে চারটি বিকল্প রয়েছে। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, পলায়ন অথবা ইউক্রেনে যুদ্ধবন্দি হওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই। প্রায় ৫৫ হাজার রুশ সৈন্য ইতোমধ্যেই ইউক্রেনে প্রাণ হারিয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

রাশিয়ার মা ও স্ত্রীদের উদ্দেশে জেলেনস্কি রুশ ভাষায় বলেন, যারা তাদের পরিবারের পুরুষদের যুদ্ধে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তাদের পরিবারের সন্তানদের মোটেই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে হবে না। যুদ্ধে নিহত হলে রুশ সৈন্যদের দাফনও করা হচ্ছে না বলে জেলেনস্কি দাবি করেন।

তিনি রাশিয়ার মানুষের উদ্দেশ্যে এতকাল নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ করে বলেন, ‘আপনারা এতকাল ইউক্রেনের মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ, হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের দোসর হয়েছেন।’

One thought on “রাশিয়াজুড়ে শঙ্কা-অসন্তোষ বাড়ছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *