রেকর্ড গড়ে অবাক মুর্শিদা-সোবহানাও

Share Now..

কিছুদিন আগেই ঘরের মাটিতে মুর্শিদা খাতুন হ্যাপি কিংবা সোবহানা মোস্তারিদের হতাশ হয়ে সাজঘরে ফিরতে দেখা গেছে। ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাদের ব্যাট কথা বলার আগেই স্তব্ধ হয়েছে। কিন্তু এবার নারী ডিপিএলে ব্যাটকে তরবারি বানিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছেন।

জাতীয় দলের এ দুই ক্রিকেটার মোহামেডানের জার্সিতে তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। আর তাদের রানে ভর করে ক্লাবটিও গড়েছে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড, যেখানে মুর্শিদা ১৫৭ বলে ১৭৯ রানে অপরাজিত থেকে নারীদের লিগে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড গড়েছেন। দলীয় ও ব্যক্তিগত এই রেকর্ড অবাক করেছে মুর্শিদা-সোবহানাকেও।

গতকাল বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের বিপক্ষে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৩৯২ রান করে মোহামেডান। জবাবে ১৪১ রান তুলতেই গুটিয়ে যায় গুলশান। তাতে ২৫১ রানের বড় জয় পায় মুর্শিদা-সোবহানাদের দল। এর আগে সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড ছিল বিকেএসপির। গেল মৌসুমে কেরানীগঞ্জ ক্রিকেট অ্যাকাডেমির বিপক্ষে সাভারের দলটি ৩২১ রান করেছিল। এবার সেই রেকর্ড টপকে নাম লেখাল মোহামেডান।

বৃহস্পতিবার ম্যাচ শেষে মুর্শিদা খাতুন হ্যাপি দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ভালো লাগছে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খেলছি, দলের একটা ভালো সংগ্রহ হয়েছে। আমি জানতাম না আগের রেকর্ড ছিল ৩২২ রানের মতো। এটা আমাদের ক্রিকেটের জন্য ভালো যে, আরেকটা সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়তে পেরেছি আমরা।’ 

গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে শেষ পর্যন্ত মাঠে থেকেছেন মুর্শিদা। তাকে মোট ২১৫ মিনিট উইকেটে থাকতে হয়েছে। মাঠে নামার আগে এত দীর্ঘ সময় উইকেটে থাকার চিন্তা করেছিলেন কি না—এমন প্রশ্নে জাতীয় দলের এই ক্রিকেটার বলেন, ‘না, আমি এমন কিছু চিন্তা করিনি। আমি শুধু বল টু বল খেলেছি। চিন্তা করেছি একটা জুটি গড়ার—এগুলো করতে পারলে বড় হবে সংগ্রহ। এর বাইরে কিছু চিন্তা করিনি। বল দেখেছি, ভালো বলের জন্য অপেক্ষা করেছি। যখনই সুযোগ পেয়েছি, সেটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। উইকেটে থাকাকালীন আমরা আমাদের স্বাভাবিক খেলাটা চালিয়ে গেছি।’ সাভারের বিকেএসপিতে মুর্শিদারা যখন ব্যাটিং করছিলেন, তখন তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রির ওপরে, বাস্তবে ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি অনুভূত হচ্ছিল। আকুওয়েদার এমনই তথ্য দিয়েছে। সে বিষয়ে মুর্শিদা বলেন, ‘অনেক গরম। অনেক কষ্ট হয়েছে। কিন্তু আমরা তো খেলোয়াড়, আমাদের সব পরিস্থিতিতেই খেলতে হবে। আমাদের পেশাগত কাজই এটা। তাই স্বাভাবিকভাবে খেলেছি আমরা।’

ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিপক্ষে নাকানিচুবানি খেয়েছে বাংলাদেশ, যেখানে ব্যাট হাতে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি ওপেনার মুর্শিদা খাতুন। ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণে ভারতের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে বাদও পড়েছিলেন তিনি। সবশেষ ১০ ম্যাচে (৭ টি-টোয়েন্টি ও ৩ ওয়ানডে) তার ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ১২১ রান। এর মধ্যে ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৪৬ রানের একটি ইনিংস এসেছিল বাঁহাতি এই ব্যাটারের ব্যাট থেকে। তবে এবার ঘরোয়া ক্রিকেটে সবকিছু ছাপিয়ে বড় স্বস্তি নিয়ে এসেছেন মুর্শিদা। তিনি বলেন, ‘আসলে আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক পার্থক্য থাকে। চেষ্টা করেছিলাম ওখানেও (আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে) কিছু করার, কিন্তু হয়নি। ওখানে যে ভুলগুলো হয়েছে, সেগুলো শোধরানোর চেষ্টা করছি এখানে। আর এখানে যদি ভালোভাবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারি, তাহলে আন্তর্জাতিকেও ভালো খেলা সম্ভব।’

নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসর বাংলাদেশের মাটিতেই অনুষ্ঠিত হবে। সে বিষয়ে মুর্শিদা বলেন, ‘যদি দলে থাকি, অবশ্যই ভালো কিছু করার চেষ্টা করব। যদি সুস্থ থাকি, নিজের শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করব।’ ২০ ওভারের সেই খেলায়ও সুযোগ পেলে সেঞ্চুরি করার আশা ব্যক্ত করেছেন তিনি। তবে সেই লক্ষ্যটা প্রকাশ না করে নিজের মধ্যেই রাখতে চান বাংলাদেশের এই ক্রিকেটার।

এদিকে রেকর্ডের ম্যাচে সোবহানা মোস্তারী ১০১ বলে ১২৮ রানের ইনিংস খেলেছেন। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘ভালো অনুভূতি হচ্ছে। আমরা দুজনই সেঞ্চুরি করে এভাবে ভালো কিছু করতে পারব, তা চিন্তা করিনি। আমার যখন ফিফটি হলো আর মুর্শিদা আপুর সেঞ্চুরি, তখন থেকেই আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। স্কোরটা এত বেশি হয়ে দাঁড়াবে, এটা আমরা চিন্তাও করিনি। এতে আমরাও অবাক হয়েছি।’ এত রান করার পেছনে উইকেটের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, ‘বলের তেমন মুভমেন্ট হচ্ছিল না। ঠিকভাবে ব্যাটে আসছিল। ব্যাটিং সহায়ক ছিল। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা এগিয়ে গেছি।’ সোবহানা আরো বলেন, ‘আমরা কঠিন পরিশ্রম করছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও চাইব ঐভাবে খেলতে, আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে।’ মোহামেডানের জার্সির পাশাপাশি দেশের জার্সিতেও এভাবে রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে যেতে চান সোবহানা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *