লিটনের মুখে হাসি, বুকে ভয়!

Share Now..

‘‘মুখে হাসি, বুকে বল, তেজে ভরা মন,/ ‘মানুষ’ হইতে হবে, -এই তার পণ।’’ আদর্শ ছেলে কবিতায় কুসুমকুমারী দাশ এমনটা বললেও ক্রিকেটার লিটন দাসের ক্ষেত্রে সেটি কিছুটা ব্যতিক্রমভাবে বলা যায়। মুখে হাসি বুকে ভয়, উত্তেজিত মন, আউট হতেই হবে -এই তার পণ! বাংলাদেশি এই ক্রিকেটার যেভাবে খেলছেন তাতে এমন বক্রোক্তি ছাড়া উপায় কী! গতকাল সেরা আটের লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নেমে ডানহাতি এই ব্যাটার যেন ভুলেই গেলেন যে, তিনি টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমেছেন। সেটিও আবার পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে। খেললেন ২৫ বলে ১৬ রানের ইনিংস। আজ রাত সাড়ে ৮টায় ভারতের বিপক্ষে একাদশে জায়গা পাবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তবে জায়গা পেলেও একই ব্যর্থতার গল্প ঘুরেফিরে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে দেখা দেওয়ার শঙ্কাও রয়েছে।

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পরপর পাঁচটি ম্যাচ খেলেছেন লিটন। সবমিলিয়ে রান ৭২। এই রান করতে তিনি ৯০টি বল খরচ করেছেন। গড় ১৫ এর নিচে। আর স্ট্রাইক রেট? সেটি খুঁজে পেতে ম্যাগনিফাইং গ্লাস লাগতে পারে। কারণ ২০ ওভারের স্ট্রাইক রেট ১০০ এর নিচে থাকলে সেটিকে কখনই আদর্শ বলা হয় না। বিশেষ করে টপ অর্ডারে যারা ব্যাটিং করেন, তাদের ক্ষেত্রে স্ট্রাইক রেট সবার আগে আলোচনায় আসে। চলতি বিশ্বকাপে লিটনের স্ট্রাইক রেট ৮০। এখন পর্যন্ত ১৫০ জন ক্রিকেটার ব্যাট হাতে মাঠে নেমেছেন এই বিশ্বকাপে। তার মধ্যে লিটনের থেকে বাজে স্ট্রাইক রেট আছে ২৭ জনের। এর মধ্যে ৭ জন বোলার। আর বাকি ২০ জনের মধ্যে ৭ জন রয়েছেন টপ অর্ডারের। তাদের মধ্যে পরিচিত মুখ পাকিস্তানের সাইম আইয়ুব ও নিউজিল্যান্ডের রাচিন রবীন্দ্র। বাকিরা পাপুয়া নিউগিনি, ওমান ও নেপালের মতো দলে খেলেন। তাতে পরিসংখ্যানের হিসেবে লিটনের অবস্থান তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশি উইকেটরক্ষক ব্যাটার লিটন করেন ৩৮ বলে ৩৬ রান। উইকেট বিবেচনায় সেটি আদর্শ বলা চলে। ম্যাচ জয়ের ক্ষেত্রেও সেই রান বেশ বড় ভূমিকা রেখেছিল। এরপরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও বাজে উইকেটের দেখা পাওয়া যায়। সেখানে ১৩ বলে লিটন ৯ রান করে সাজঘরের পথ ধরেছেন। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তো আরো বাজে অবস্থা। ২ বল খেলে ১ রান করেই আউট হয়েছেন তিনি। নেপালের ম্যাচে একই ব্যর্থতার গল্প লিখেছেন। ১২ বলে ১০ রানের ওপরে করতে পারেননি। গতকাল অজিদের বিপক্ষে ২৫ বলে করেন ১৬ রান। ব্যাটিং উইকেটে তার এই মন্থর গতির রান দলকেও ডুবিয়েছে। মেরে খেলার বলগুলোও মোকাবিলা করেছেন রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে। পরে অ্যাডাম জাম্পাকে সুইপ শট খেলতে গিয়ে স্টাম্প উপড়ে যেতে দেখেছেন। অথচ এই ম্যাচে লিটন টি-টোয়েন্টি বিবেচনায় ও উইকেট দেখে খেললে স্ট্রাইক রেট থাকার কথা ছিল ১০০-এর ওপরে। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ৩০ রান কম করার আক্ষেপ করেছেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া যেভাবে ব্যাটিং করেছে তাতে রান ২০০ ছুঁইছুঁই হওয়া অস্বাভাবিক ছিল না। রান তোলার ক্ষেত্রে উইকেট তেমনটাই ছিল।

কেবল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নয়, এই বিশ্বকাপে প্রতিটি ম্যাচেই বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ব্যর্থতা দলকে পুড়িয়েছে। কখনো মিডল অর্ডারে ভর করে, কখনো বোলারদের ওপরে ভর করে দল পৌঁছে গেছে সেরা আটে। কিন্তু সেখানেও একই ব্যর্থতার মঞ্চায়ন দেখা যাচ্ছে। একই মাঠে আজ রাতে ভারতের বিপক্ষে কতটুকু সফল হয় টাইগার বাহিনীর টপ অর্ডার সেটিই এখন দেখার বিষয়। লিটন সবশেষ হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন গেল বছরের অক্টোবরে ভারতের বিপক্ষে। সেটি ছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপের ম্যাচ। তারপরে ২৭ ইনিংসে ব্যাট হাতে নেমেও সেঞ্চুরি তো দূরের কথা, হাফ সেঞ্চুরিও করতে পারেননি।

বিশ্বকাপের মঞ্চে লিটন যেভাবে খেলছেন, তাতে তার মধ্যে যে ভয় কাজ করছে সেটি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে রানের খাতা খুলতে তার খেলতে হয়েছে ১০টি বল। শেষ পর্যন্ত ২৫ বলে ১৬ রানের ম্যাচ ডুবানো ইনিংস খেলে উইকেটরক্ষক হিসেবে যখন নেমেছেন, তখন তার মুখে ছিল হাসির রেখা। অথচ এই ব্যাটারকেই কিছুক্ষণ আগে ব্যাট হাতে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় দেখেছিলেন ভক্তরা। অধিনায়ক শান্ত যেখানে হেসেখেলে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলেছেন, তার সঙ্গে উইকেটে থেকে লিটন কেঁপেছেন ভয়ে। যে বলে সুইপ করতে গিয়েছেন, তার লাইনই বুঝতে পারেননি। তাকে একজন আদর্শ ব্যাটার বলা হয়। কিন্তু ‘কথায় না বড় হয়ে’ মাঠের আসল আদর্শ ব্যাটার কবে হয়ে উঠবেন তিনি? প্রশ্নের উত্তর কী খুঁজছেন লিটন নিজে? নাকি বিকল্প না থাকায় এই প্রশ্নের উত্তর তাকে খুঁজতেই হচ্ছে না? এসব প্রশ্নের উত্তর প্রতিনিয়ত খোঁজেন ভক্তরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *