শত বাঁধা পেরিয়ে সেই ঋতু হিজড়া স্হান পেলো পাঠ্য বইতে।আলোচনা সমালোচনার অন্ত নেই!

Share Now..

মিঠুমালিথা

যাকে সবাই ঋতু হিজড়া বলে টিপ্পনী করতো।বাকা চোখে দেখতো সমাজের এলিট শ্রেণীর মানুষেরা।জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে হোঁচট খেয়ে বড় হতে হয়েছে।জীবিকার প্রয়োজনে নাচ গানকে অবলম্বন করতে হয়েছে।এমন শত বাঁধা কে পেরিয়ে সেই ঋতু হিজড়ার জীবনি স্হান পেলে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যবইতে।তবুও যেন সমালোচনার শেষ নেই!
যিনি সরকার দলীয় মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করে দেশের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচিত তৃতীয় লিঙ্গের ইউপি চেয়ারম্যান।যার নাম নজরুল ইসলাম ঋতু।তিনি বর্তমান সংসদ সদস্যের নিজ ইউনিয়নে নৌকাকে পরাস্ত করে ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তৃতীয় লিঙ্গের ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ৬নং ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতুর জীবনি স্হান পেয়েছে পাঠ্য বইতে।
চলতি বছরের ১ লা জানুয়ারি সারাদেশের শিক্ষার্থীদের হাতে তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর সংগ্রামী কয়েকজনের ছবি সম্বলিত বই তুলে দেওয়া হয়। বইয়ে তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে।সেই পাঠ্যবইয়ে স্থান করে নিয়েছেন ঝিনাইদহের তৃতীয় লিঙ্গের ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতু।২০২৩ সালে শুরু হওয়া নতুন জাতীয় পাঠ্যক্রমের মাদরাসা ও সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের সম্প্রদায় অধ্যায়ের ৫২ পৃষ্ঠায় তার একটি ছবি ছাপা হয়েছে। একই অধ্যায়ে সমাজ ও পেশাগত জীবনে তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর সংগ্রামী লিনিয়া শাম্মী, রানী চৌধুরী ও বিপুল বর্মণের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। আর এই পাঠ্যবইয়ে স্থান করে নেওয়ায় নতুন করে প্রশংসায় ভাসছেন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতু।
তবে আলোচনা সমালোচনার যেন শেষ নেই বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মাঝে।রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে নৌকোকে পরাস্ত করেছে বলেই নজরুল ইসলাম ঋতু সংগ্রামি।কেননা ইতিপূর্বে ঝিনাইদহে পিংকি খাতুন নামে একজন ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।পিংকির জীবনি স্হান পেলে ক্ষতি কি ছিলো।এমনটিই মন্তব্য করেছেন ত্রিলোচানপুর ইউনিয়নের নৌকার মনোনীত পরাজিত চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ছানা।
অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্হাকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে হিজড়া জীবনি তুলে ধরেছে।যা ইসলাম ধর্মকে কটাক্ষের সামিল।

বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, জন্মের পর খুব অল্প বয়সে বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের ছেড়ে ‘গুরু মা’র কাছে চলে যেতে হয়। যেখানে বসবাস করা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা একে অপরের সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে একটি পরিবারের মতো বসবাস করে। তারা শিশু আর নতুন বর-বউকে আশীর্বাদ করে টাকা উপার্জন করে। তারা স্বাভাবিক মানুষের মতো লেখাপড়া ও চাকরি করতে চাইলেও অন্যরা নিতে চায় না। পৃথিবীর অন্য দেশে ট্রান্সজেন্ডাররা স্বাভাবিক জীবনযাপন করলেও আমাদের দেশের চিত্র ভিন্ন। তবে, ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের স্বীকৃতি দিয়েছেন। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়ে কাজ করছে। শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে তাদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর প্রচেষ্টা করা হচ্ছে।

২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম ছানাকে পাঁচ হাজার ২৮ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। ঋতু উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের সন্তান। তার আরও তিন ভাই ও তিন বোন রয়েছে। তিন ভাই ঢাকায় থাকেন। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। জন্মের পর তৃতীয় লিঙ্গের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পাওয়ায় মাত্র সাত বছর বয়সে তাকে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে যেতে হয়।

বালিয়াডাঙ্গা এমএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মার্জিয়া খাতুন জানায়, নিজের এলাকার চেয়ারম্যানের ছবি ও তাদের জীবন সম্পর্কে বইয়ে পেয়ে খুবই খুশি।

একই বিদ্যালয়ের ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক সঞ্জয় কুমার জানান, ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামজিক বিজ্ঞান বইয়ের সম্প্রদায় অধ্যায়ে তৃতীয় লিঙ্গ সম্পর্কে জানতে পারবে শিক্ষার্থীরা।

ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতু জানান, পাঠ্যবইয়ে আমার ছবি ও আমাদের জীবনযাপন সম্পর্কে একটি অধ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে এটা আমার জন্য বিশাল একটা পাওয়া। আমি অনেক খুশি হয়েছি। এখন আমাদের সম্প্রদায়ের ব্যাপারে শিক্ষার্থীরা জানতে পারবে। পাঠ্যবইয়ে স্থান দেওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান জানান, সকল শ্রেণির জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় আনার তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়কে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। এই সম্প্রদায় অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

One thought on “শত বাঁধা পেরিয়ে সেই ঋতু হিজড়া স্হান পেলো পাঠ্য বইতে।আলোচনা সমালোচনার অন্ত নেই!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *