শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার রোডম্যাপ কী
প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর ১২ সেপ্টেম্বর প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) চাঁদপুরে একটি স্কুলের অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এই ঘোষণা দেন। তার এই ঘোষণার পরই শিক্ষাবিদ-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মনে প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার রোডম্যাপ কী হবে?
শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হতে পারে। এছাড়া আগামী নভেম্বরে এসএসসি ও ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে, ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলাসংক্রান্ত বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় মিটিংয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
শনিবার চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় যেসব শিক্ষার্থী ক্লাস থেকে বঞ্চিত হয়েছে, তাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় প্রতিকারমূলক পড়ানো হবে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া হবে।
এছাড়া, শনিবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি কেয়ার উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, সুনির্দিষ্ট তারিখে স্কুল-কলেজ খোলার পর প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে একদিন ক্লাস করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে সেটা পরিবর্তন হতে পারে।
এদিকে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যাপারে বৃহস্পতিবার রাতে ইতিবাচক সুপারিশ করেছে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। ওই সুপারিশের আলোকেই শনিবার বিকালে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সভায় থেকেই মূলত এ ব্যাপারে চূড়ান্ত ঘোষণা আসবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনার সংক্রমণের হার ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে থাকলে স্কুল খোলা যায় কি না, সে বিষয়ে করোনাসংক্রান্ত কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। তাদের অভিমত মত কী হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠক করে পরামর্শক কমিটি। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে কারিগরি পরামর্শক কমিটির কী পরামর্শ, তা বিস্তারিত না জেনে সরকার কিভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে গণমাধ্যমে একেক সময় একেক বলছে।
জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে টিকা দেওয়া ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করাসহ একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটি। বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে এসব সুপারিশ দিয়েছে এই কমিটি। যা লিখিত আকারে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়।
কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, দেশের বিদ্যমান সংক্রমণ এবং টিকাদান পরিস্থিতির পাশাপাশি স্কুল খোলা সংক্রান্ত বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে আমরা সরকারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের সঙ্গে সম্মত হয়েছি। কিছু দিক অবশ্যই প্রতিপালন করতে হবে। বিশেষ করে জনস্বাস্থ্য ও টিকা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিষয়ক করোনা সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সূত্রে জানা গেছে, কমিটি বেশ কয়েক পৃষ্ঠার জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বা করোনা সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাস্তবায়নের জন্য পাঠিয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, যেসব শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী টিকা নেননি, তাদের দ্রুত টিকা নিতে হবে; প্রতিদিন সবাইকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনা যাবে না; এখন কেবল এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা ছয় দিন ক্লাস করবেন, আর বাকিরা সপ্তাহে সর্বোচ্চ দুই দিন ক্লাসে যাবে। শ্রেণিকক্ষে বসার আকার আগের চেয়ে ছোট হবে। বসানোর ক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনাকুনি সিস্টেমে বসাতে হবে। প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ আলাদা থাকবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো জটলা করা যাবে না। স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। ওয়াশরুম পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। ৫ বছরের ওপরের বয়সীরা মাস্ক পরবেন। আর তা তদারকি করবেন শিক্ষকরা। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সংক্রান্ত দিকগুলো নিয়মিত তদারকি করতে হবে।