শিশুদের নামাজী হিসেবে গড়ে তোলার উপায়

Share Now..

সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- তাদেরকে আদর্শ সন্তান হিসাবে গড়ে তোলা। আর ছেলে-মেয়েকে শিক্ষিত ও আদর্শবান করে গড়ে তোলার মূল উদ্দেশ্য হবে তাদেরকে জাহান্নাম হতে রক্ষা করা। মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا قُوْا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيْكُمْ نَاراً وَقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلاَئِكَةٌ غِلاَظٌ شِدَادٌ لاَ يَعْصُوْنَ اللهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُوْنَ مَا يُؤْمَرُوْنَ-
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও স্বীয় পরিবারবর্গকে আগুন (জাহান্নাম) হ’তে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। সেখানে অত্যন্ত কর্কশ, রূঢ় ও নির্মম স্বভাবের ফেরেশতা নিয়োজিত থাকবে, যারা কখনই আল্লাহর কথা অমান্য করে না এবং নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে’ (সুরা আত-তাহরীম, আয়াত ৬)। এখন জাহান্নাম থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই ঈমানদার হতে হবে। আর ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নামাজ। রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে বার বার নামাজের তাগিদ পেয়েছেন। কোরআনে পাকে আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন জায়গায় সরাসরি ৮২ বার নামাজ শব্দ উল্লেখ করে নামাজের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। বর্তমান সময়ে শিশু সন্তানকে নামাজী হিসেবে গড়ে তোলা একটা চ্যালেঞ্জের কাজ। কেননা স্কুল-কলেজ আর কোচিংয়ের চিন্তায় মত্ত মা-বাবারা শিশুদের ধর্মের দিকে ধাবিত করার সময় পান না। তবে সন্তান নামাজি হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার হচ্ছে দোয়া করা।
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে নামাজ শিক্ষা দাও, সাত বছর বয়স থেকে। যদিও সাত বছর বয়সে শিশুরা নামাজ আদায় করতে বাধ্য নয়। তবে তারা সাত বছর থেকে নামাজে অভ্যস্ত হয়ে গেলে, বড় হওয়ার পর নামাজের বিষয়ে অনাগ্রহী হবে না। যখন তারা দশ বছরে পৌঁছে যাবে তখন তোমারা তোমাদের সন্তানদেরকে নামাজের জন্য প্রহার করো এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দাও।’ এখন এই নামাজে অভ্যস্ত করে তুলতে মায়ের করণীয় হচ্ছে রাতের অন্ধকারে যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকে, তখন তিনি দোয়া করবেন। যেভাবে সলফে সালেহীন দোয়া করতেন, নবীরা যেভাবে দোয়া করতেন, ইব্রাহিম (আ.) তার সন্তানের জন্য সবচেয়ে বড় দোয়াটি করেছেন, সেটি হলো, ‘আল্লাহ, আমাকে তোমার সালাত আদায়কারী, সালাত প্রতিষ্ঠাকারী বানিয়ে দাও, আমার সন্তানদের তোমার সালাত আদায়কারী, প্রতিষ্ঠাকারী বানিয়ে দাও।’  একজন মানুষ ওই সময় সবচেয়ে বেশি খুশি হয়, যখন সে দেখতে পায় তার সন্তান নামাজ আদায়কারী হয়েছে, তার সন্তান নিয়মিত নামাজে যাচ্ছে এবং আসছে। এর চেয়ে আনন্দের আর কিছুই হতে পারে না। এইজন্য মায়ের বড় দায়িত্ব হচ্ছে দোয়া করা। মুসলিম মা-বাবা হিসেবে আপনি আপনার সন্তানের কাছে প্রথম উদাহরণ। আপনি যদি সবসময় ইবাদত-বন্দেগীকে অগ্রাধিকার দেন এবং এই ক্ষেত্রে কোনো অলসতা বা অবহেলা না করেন তাহলেই আপনার সন্তান নামাজের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। নামাজের জন্য একটি রুমকে নির্দিষ্ট করে রাখুন। আর যদি অতিরিক্ত জায়গা না থাকে তাহলে অন্তত একটি রুমের এক কোণায় সামান্য জায়গা নামাজের জন্য নির্ধারণ করে রাখুন। যাতে করে আপনার সন্তান বুঝতে পারে নামাজ পড়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। আপনার সন্তানদেরকে শিক্ষা দিন যে, এটা শুধু নামাজের জন্য নির্ধারিত জায়গা। এই জায়গাকে সব সময় পরিষ্কার ও পবিত্র রাখতে হবে। আপনার সন্তানের জীবনের এই নতুন অধ্যায়কে উৎসাহিত করার জন্য আপনার সন্তানের বন্ধুদের বাসায় আমন্ত্রণ জানান এবং তাদেরকে হিজাব, তাজবিহ অথবা আযান দেয় এমন এলার্ম ঘড়ি গিফট করুন। নবীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাসায় আলোচনা করুন। তাদের জীবনী পাঠ করুন এবং তাদের সিরাত নিয়ে কথা বলুন। এটা আপনার জীবনে দৈনিক একটা রুটিন বানিয়ে নিন। নবীদেরকে তাদের সামনে মডেল হিসেবে তুলে দরুন। তাহলে তারা তার মতো হতে চেষ্টা করবে। এটা একটা নাটকীয় পরিবর্তন হতে পারে, যে একদমই নামাজ পড়ে না সে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ছে। তো শুরু হোক এই ছোট পরিবর্তন দিয়ে। মূল কথা হচ্ছে, মা সন্তানের জন্য দোয়া করবেন, নামাজ শেখাবেন এবং নামাজের জন্য অনুকূল পরিবেশ দেবেন। এখন নিজেদেরকে এবং স্বীয় পরিবারবর্গকে জাহান্নাম হতে রক্ষা করার জন্যে হলেও বারংবার চেষ্টা করতে হবে নামাজী হওয়ার। ঈমানদার হওয়ার। এই লক্ষ্যপূরণে আমাদের চেষ্টা অব্যহত রাখা দরকার। সেই সঙ্গে আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আ…মি…ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *