‘শুরুতে রাত হলে বকাবকি করতেন’

Share Now..

ফেসবুকে এখন বাংলা নাটকের খণ্ড খণ্ড ক্লিপ ঘুরে বেড়ায়। এসব খণ্ড ক্লিপের ভিউ মিলিয়ন মিলিয়ন। সোশ্যাল মিডিয়ায় যাদের নাটক গত দু-এক বছর ধরে রাজত্ব করছে; তাদের মধ্যে অন্যতম কেয়া পায়েল। মিষ্টি হাসি, আদুরে চাহনি, লাজুক কণ্ঠ আর পরিমিত অভিনয়—নানা কারণেই এরই মধ্যে অসংখ্য দর্শকের মন জয় করে নিয়েছেন তিনি। তাই তো ‘ভিউ’ গণনার এই সময়ে পরিচালকদেরও সুদৃষ্টিতেই থাকেন কেয়া পায়েল।

খুব বেশি দিনের ক্যারিয়ার নয়। ২০১৭ সালে বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন এই অভিনেত্রী। পরবর্তী সময়ে তাহসান, হাবিব ওয়াহিদ, মিনারের মতো তারকাদের গানের মিউজিক ভিডিওর মাধ্যমে সবার নজরে আসেন। এদিকে গেল দুই বছর ধরে নাটকে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। এখন অবশ্য নাটকের কাজ আগের চেয়ে বেশ কমিয়ে এনেছেন। নাটকের সংখ্যা কিংবা ভিউ নয়; বরং তিনি গল্পের গভীরতা ও নাটকের মানের দিকেই নজর রাখছেন।

শুরুতে নাখোশ ছিল পরিবার

কেয়া পায়েলের বাবা ডা. আকাশ ও মা চম্পা বেগম। তার ছোট দুই ভাই বোন হচ্ছে দীপ ও আয়রা। পরিবারের সবার কাছেই বেশ আদুরে কেয়া পায়েল। মিডিয়ায় ‘পায়েল’ নামে ডাকলেও পরিবার ও আর কাছের মানুষেরা ‘কেয়া’ নামেই ডাকেন। কেয়া মিডিয়ায় কাজ করুক, এটা পরিবারের কেউই চাননি। পরিবারের সম্মতি না পেয়েও মনের অসীম জোর এবং ইচ্ছাশক্তিতে এতদূর এসেছেন। এখন সাফল্যের কারণে তেমন বকুনি খেতে হয় না কেয়া পায়েলকে।

পায়েল বলেন, ‘শুরুতে রাত হলে বকাবকি করতেন। এত রাত নাগাদ শুটিং কেন? এসব বলতেন। তারপর একদিন পরিবারের সদস্যকে নিয়ে আসছি, বসিয়ে রেখেছি। তখন বুঝতে পেরেছেন কেন এত দেরি হয়। মা বলেন, বেটার করতে পারতে। ভালো হলে প্রশংসা করেন। বাবা নিজ থেকে আমার কাজ খুব একটা দেখেন না। তারপরও বাবা ও ছোট ভাইদের কাছ থেকে নিয়মিত ফিডব্যাক নিই।

কতটুকু সন্তুষ্ট তিনি?

২০১৮ সালে রাসেলের নির্দেশনায়  ‘রূপকথার রঞ্জনা’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। এরপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বিশেষ করে প্রতিটি ঈদ-পার্বণ-উত্সবেই ডজন ডজন নাটক দেখা গেছে টিভি ও অন্তর্জালে। সেসব নাটক দেখছেন লাখ লাখ দর্শক। সব মিলিয়ে টিভি নাটকে এখন দর্শক বিচারে ঈর্ষণীয় অবস্থানে রয়েছেন অভিনেত্রী কেয়া পায়েল। তবে তিনি নিজের সন্তুষ্টির জায়গায় এখনো ষোলআনা নন। পায়েল বলেন, ‘আমি এখনো শিখছি। অভিনয়ের ক্ষেত্রে মানুষের এত ভালোবাসার যোগ্য হয়তো আমি নই। কারণ আমি পুরোটা ভালোবাসা থেকেই অভিনয় করি। আমার সিনিয়ররাই আমাকে অভিনয় শিখিয়েছেন। তারাই আমার শিক্ষক। অপূর্ব ভাইয়া, জোভান ভাইয়া বা তৌসিফ ভাইয়া থেকে শুরু করে সবার কাছ থেকেই আমি কাজ শিখেছি। আমি মূলত অভিনয়শিল্পীর ইমেজটা ধরে রাখতে চাই।’

ভালোবাসা দিবসে এই অভিনেত্রীর চারটি নাটক প্রচারিত হবে। সেগুলোর মাধ্যমেও তার প্রতি দর্শকদের ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে বিশ্বাস কেয়া পায়েলের। পায়েল বলেন— ‘চঞ্চল প্রকৃতির চরিত্রে অভিনয় করতে আমি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি; নাটকগুলোতেও সেই স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গাটুকু ছিল।’ তবে তিনি ভবিষ্যতে সব ধরনের চরিত্রের জন্যই নিজেকে প্রস্তুত করতে চান। তিনি বলেন, ‘শেখার বিষয়টি সারাজীবনের। নিয়মিত কাজ করছি এবং প্রতিনিয়ত শিখছি। নতুন নতুন চরিত্রে কাজ করার সময় শিখি। শেখার কোনো শেষ নেই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিখে যাব। অবসরে অনেক নাটক দেখি। দেখেও শেখার আছে।’

সিনেমায় শুরু করেও হলো না শুরু!

২০১৮ সাল, যখন ক্যারিয়ারের শুরু; তখন ‘ইন্দুবালা’ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন কেয়া পায়েল। সেটা একপ্রকার না বুঝেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ছোটপর্দার এই অভিনেত্রী। কেয়া পায়েল বলেন, ‘যখন এই সিনেমাতে অভিনয় করি—তখন আমি একেবারেই নতুন ছিলাম। অনেক বিষয়ে অভিজ্ঞতা ছিল না। কাজ করতে করতেই তো অভিজ্ঞতা বাড়ে। এখন যেমন অনেক কিছু বুঝি তখন বুঝতে পারিনি। আগামীতে অবশ্যই সিনেমায় অভিনয় করব। তবে, গল্প, চরিত্র, পরিচালক বিষয়ে মনোযোগী হব।

এরই মধ্যে বেশ কিছু সিনেমায় প্রস্তাব পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু গল্প শুনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেননি, তাই কাজগুলো করা হয়নি। তবে সিনেমা নিয়েও আলাদা পরিকল্পনা আছে তার। তিনি বলেন, ‘এখন আর কোনো সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হইনি। কারণ চলচ্চিত্রটি আমি ভেবে-চিন্তেই করতে চাই। হুটহাট সিদ্ধান্ত নিতে চাই না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *