শেষ হলো দ. আফ্রিকার ‘দুর্ভাগা সাত’

Share Now..

সাত সংখ্যাকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে দেখেন অনেকেই। সংখ্যাটি নিয়ে এমন ধারণা প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। কিন্তু ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে এই সংখ্যাটি হতাশার ছিল। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিলিয়ে মোট সাতটি সেমিফাইনাল খেলে হার দেখেছে প্রোটিয়া বাহিনী।

গতকাল অষ্টম বারের মতো সেমি খেলতে নেমে সফল হয়েছে দলটি। নিশ্চিত হয়েছে নিজেদের প্রথম ফাইনাল খেলার টিকিট। তাতে দুর্ভাগা সাত গিয়ে আটে রূপ নেয়নি। যেহেতু এবার সফল হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা সেহেতু পেছনের ঐ সাত সেমিফাইনাল ‘দুর্ভাগা সাত’ হিসেবেই থাকবে তাদের কাছে। সেই সঙ্গে ‘চোকার্স’ অভিধা থেকে তারা নিজেদের বের করতে আনতে সক্ষম হয়েছে। সেটিও আবার রেকর্ড গড়ে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারুবায় অবস্থিত ব্রায়ান লারা ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে গতকাল সকালে নতুন ইতিহাস রচনা করেছে এইডেন মার্করামের দল। প্রথম সেমিফাইনালে তারা রশিদ খানের আফগানিস্তানকে নাস্তানাবুদ করে ফাইনাল নিশ্চিত করে। আফগানিস্তান প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ১১.৫ ওভারে মাত্র ৫৬ রান করে অলআউট হয়। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নকআউটভিত্তিক কোনো ম্যাচে এটিই সর্বনিম্ন রানের দলীয় সংগ্রহ। এখন পর্যন্ত আফগানদেরও টি-টোয়েন্টিতে এটি সর্বনিম্ন সংগ্রহ। এর আগে ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭২ রানে অলআউট হয়েছিল আফগানিস্তান। তবে এবারের হতাশাটা আরও বড়। প্রথম বারের মতো সেমিফাইনাল খেলতে নেমে তারা এই ভরাডুবির সাক্ষী হয়েছে।

মাত্র ৫৭ রানের জবাবে প্রোটিয়ারা ব্যাটিংয়ে নেমে জয় তুলে নিয়েছেন হেসেখেলে। ৮.৫ ওভারে এই রান ছাড়িয়ে যেতে তারা হারায় ১টি উইকেট। উইকেটরক্ষক ও ওপেনার কুইন্টন ডি কক মাত্র ৫ রান করে আউট হলে জয় তুলে নেওয়ার দায়িত্ব নেন রেজা হেনড্রিকস ও অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। ২৫ বলে ২৯ করেন রেজা এবং ২১ বলে ২৩ করে অপরাজিত থাকেন মার্করাম। এই জয় দিয়ে ৩২ বছরের দুঃখ ঘুচিয়েছেন প্রোটিয়ারা। ১৯৯২ সালের ২২ মার্চ প্রথম বারের মতো সেমিফাইনাল খেলেছিল দলটি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ১৯ রানে হেরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেটি ছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এরপরে ১৯৯৯, ২০০৭, ২০১৫ ও ২০২৩ সালের বিশ্বকাপেও সেমিফাইনালে খেলেছিল দলটি। কিন্তু গল্প একই থেকে যায়। এর মধ্যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২০০৯ ও ২০১৪ সালেও সেমিতে হারে দ. আফ্রিকা। শঙ্কা ছিল এবারও। কিন্তু অষ্টমবারের মতো এসে সেমি বাধা কাটল তাদের।

গতকালের ম্যাচে মাঠে নামার আগে আফগান নেতা রশিদ খান হয়তো অতীত পরিসংখ্যানে চোখ রাখেননি। যে সাত বার দক্ষিণ আফ্রিকা সেমিতে হেরেছে তার মধ্যে চার বার ছিল প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে। কিন্তু রশিদ খান টসে জিতে প্রথমেই ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত বেছে নেন। এর পেছনে কারণও ছিল। আফগানদের মূল ভরসা ছিল তাদের দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। এবারের বিশ্বকাপে এই দুই ব্যাটারের ওপরেই ভর করে এতদূর এসেছিল দলটি। সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তাদের ওপরে ভরসা করা ছাড়া উপায়ও ছিল না। 

যে ম্যাচে গুরবাজ ও ইব্রাহিম রান করতে পারেননি কিংবা ব্যর্থ হয়েছেন, সেই ম্যাচে গোটা দলকেই ভুগতে হয়েছে। তাই রশিদ ভেবেছিলেন প্রথমে ব্যাট করে লড়াই করার মতো কিছু রান তুলতে পারলে খেলা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে। কিন্তু সেখানেই ব্যর্থ হন আফগান দুই ওপেনার। তাতে ধ্বংসযজ্ঞে বয়ে যায় আফগান বাহিনীর ওপর দিয়ে। ৫৬ রানেই শেষ হয় তাদের ইনিংস। যেখানে আজমতউল্লাহ ওমরজাই বাদে আর কেউই দই অঙ্কের রানে পৌঁছাতে পারেননি। তার ১০ ও অতিরিক্ত ১৩ রানের সুবাদে এই সংগ্রহ দাঁড়ায়। তাতে ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই যেন সবকিছু শেষ হয়ে যায়।

ম্যাচ শেষে রশিদ খান বলেছেন, ‘আমরা কঠিন সময় পার করছি। এই রাত আমাদের প্রচণ্ড হতাশ করেছে। এর থেকে ভালো করা উচিত ছিল আমাদের। কিন্তু কন্ডিশন ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা সেটি আমাদের করতে দেয়নি। যদিও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যে কোনো পরিস্থিতির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। আমরা ব্যাটিংয়ে খুব বাজে করেছি। এই বিষয়ে কাজ করতে হবে। যেখানে মিডল অর্ডারের সমস্যা আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। আশা করেছি, কঠোর পরিশ্রম করে আমরা আবার ফিরব। এটা তো মাত্র শুরু হলো। সামনে আরও ভালোভাবে ফিরতে চাই। আমাদের সামর্থ্য রয়েছে। আর এই টুর্নামেন্ট থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। যে কোনো দলকে হারানোর বিশ্বাস আমাদের রয়েছে। কঠিন পরিস্থিতি সামলে আমরা শুধু সামনে এগিয়ে যেতে চাই।’

 এ দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এইডেন মার্করাম বলেছেন, ‘এমন জয় তুলে নিতে পেরে ভালো লাগছে। ট্রফি জয়ের খুব কাছে রয়েছি আমরা। ব্যাটারদের জন্য এটা বেশ কঠিন উইকেট ছিল। আমরা আগে কখনো ফাইনাল খেলিনি। নিজেদের ওপরে বিশ্বাস রয়েছে। ভালো কিছুর জন্য অপেক্ষা করছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *