শৈলকুপায় উজাড় হতে চলেছে শিমুল গাছ

Share Now..

\ শৈলকুপা প্রতিনিধি \
ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে গ্রাম বাংলার প্রকৃতিকে রাঙ্গিয়ে ফুটেছে রক্তরাঙ্গা শিমুল ফুল। শিমুল ফুলের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সকলকেই বিমোহিত করে। তবে কালের বিবর্তনে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় বিলুপ্ত হতে চলেছে ফাগুনের চোখ জুড়ানো রাঙা শিমুল গাছ। মাত্র ক’য়েক বছর আগেও উপজেলার প্রত্যেকটি বাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তার ধারে, পরিত্যাক্ত জমিতে প্রচুর শিমুল গাছ দেখা যেতো আর তাতে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বাসা বাধতো। আবার শিমুলের তুলা বাতাসে উড়ে রাস্তা ঘাটে পড়ে থাকত। আবার প্রস্ফুটিত প্রতিটি শিমুল গাছ মনে করিয়ে দিত প্রকৃতিতে বসন্তের আগমনী বার্তা। ইটভাটা, পারটেক্স কারখানা ও দিয়াশলাই কারখানায় শিমুল গাছের কদর বেশী হওয়ায় ইচ্ছামত কেটে ফেলা হচ্ছে। তাই আগের মত চোখে পড়ে না যেখানে সেখানে ছড়িয়ে সিটিয়ে থাকা শিমুল গাছ। কাঠ ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত এসব গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। রোপণের ৫-৬ বছরের মধ্যে শিমুল গাছে ফুল ফোটে। শিমুল গাছ ৪০ থেকে ৮০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হওয়ায় বেশ মোটাও হয়। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেও ১০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে শিমুল গাছ। শীত শেষে গাছের পাতা ঝরে পড়ে। বসন্তের শুরুতেই গাছে ফুল ফোটে। আর এ ফুল থেকেই হয় ফল। বৈশাখ মাসে প্রাকৃতিকভাবে গাছে ফলগুলো ফেটে বাতাসে তুলার সাথে উড়ে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই শিমুল গাছের জন্ম হয়। উপজেলার আবাইপুর গ্রামের বয়স্ক ব্যক্তি আনছার আলী বলেন, অন্যান্য গাছের মত এ গাছ কেউ শখ করে না লাগালেও পূর্বে আমাদের গ্রামে প্রচুর শিমুল গাছ ছিল। গ্রামের মানুষ বিষফোঁড়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে এ গাছের মূল ব্যবহার করত। তাছাড়া শিমুল গাছের ছাল, পাতা ও ফুল গবাদিপশুর খুব প্রিয় খাদ্য। বালিশ, শীতের লেপ ও তোষক তৈরিতে শিমুল তুলার জুড়ি নেই। অপ্রয়োজনীয় মনে করে কারণে অকারণে কর্তনের ফলে এখন আর আমাদের গ্রামে আগের মত শিমুল গাছ নজরে পড়ে না। কাঠ ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান বলেন, ম্যাচের কাঠি উৎপাদনে গেওয়ার বিকল্প হিসেবে শিমুল কাঠের প্রয়োজনে সারা দেশের ন্যায় শৈলকুপায়ও শিমুল গাছ উজাড় হচ্ছে। সুন্দরবনের গেওয়া গাছ কর্তন নিষিদ্ধ হওয়ায় গত কয়েক বছরে উপজেলায় আশংকাজনকহারে হ্রাস পেয়েছে শিমুল গাছ। এছাড়া ইট ভাটায় প্রচুর পরিমাণে এর কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। উপজেলা বন সংরক্ষণ অফিসার মোখলেচুর রহমান বলেন, ব্যক্তি মালিকানার শিমুল গাছ যার যখন ইচ্ছা সে তখন কেটে বিক্রি করছে এটা ঠিক না। শিমুল গাছে পাখিরা বাসা বাঁধে তাই এভাবে কেঁটে ফেলা হলে এক সময় পাখির অভয়ারণ্য হুমকির মধ্যে পড়বে। তবে ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন জায়গায় শিমুল গাছ রোপনের মাধ্যমে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহনের চেষ্টা করছি।
উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ অফিসার আবুল হাসনাত জানান, বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় মানুষ ইচ্ছামত শিমুল গাছ কেটে উজাড় করছে। তাছাড়া ইট ভাটা গুলোতে কাঠের জোগান দিতেও গাছ কেটে সাবাড় করছে। শিমুল গাছ উজার না করে তুলার চাষ করা হলে স্বল্পখরচে যেমন মোটা অংকের অর্থ পাওয়া যাবে পক্ষান্তরে তা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *