শৈলকুপায় পানি উঠছে না নলকূপে, বিপাকে হাজারও মানুষ
\ বিশেষ প্রতিনিধি, শৈলকুপা \
শুষ্ক মৌমুমে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় নলক‚পে পানি না উঠায় বিপাকে পড়েছে হাজারও মানুষ। উপজেলায় ৬ হাজার ৭০০টির বেশী নলকুপ থাকলেও অকেজো হওয়ার উপক্রম হয়েছে উপজেলার চার হাজারের বেশি নলকূপ তবে বৃষ্টি হলে অকেজো নলকূপের সংখ্যা কমে আসবে। সচল থাকা নলকূপে পর্যাপ্ত পানি না ওঠায় সুপেয় পানির চরম সংকটে পড়েছে উপজেলার কমপক্ষে ১০ হাজারেরও বেশি পরিবার। কিছু কিছু নলকূপে মোটেও পানি উঠছে না। তাই প্রচন্ড গরম ও খরতাপে মানুষের জীবন দূর্বিসহ হয়ে উঠেছে। সরকারীভাবে উপজেলায় ৭২০ এর বেশী সাবমার্সিবল পানির পাম্প আছে। পানির সংকট কাটাতে কেউ কেউ বাড়িতে নতুন করে সাব-মারসিবল পাম্প বসিয়ে পানি তোলার চেষ্টা করছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ভেদে পানির ওয়াটার লেভেল ২৮ থেকে ৩০ ফুট থাকলেও বর্তমান পানির স্তর আরো নীচে নেমে গেছে বলে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়। সোমবার (২২ এপ্রিল) সরেজমিনে উপজেলার পৌর এলাকার আউশিয়া,মাঠপাড়া, হাসনাভিটা, বালিয়াডাংগা, চতুড়া, ঝাউদিয়া, সারুটিয়া ইউনিয়নের নাদপাড়া,ভাটবাড়ি, কাতলাগাড়ি,নবগ্রাম, চরবাখরবা,কাচেরকোল ইউনিয়নের কচুয়া,হামদামপুর, কাঁচেরকোল, দিগনগর ইউনিয়নের তমালতলা, সিদ্দি, দেবতলা, অচিন্তপুর, বেণীপুর,হড়রা, উমেদপুর ইউনিয়নের বারইপাড়া, ব্রাহিমপুর, বিএলকে, রয়েড়া,আবাইপুর ইউনিয়নের হাটফাজিলপুর, রুপদা, ব্যাসপুর,কাকুড়িয়াডাংগা,মীনগ্রাম, বগুড়া ইউনিয়নের শীতালী, দলিলপুর, আওদা,কামান্না, নাগিরাটসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, টিউবয়েলে পানি না ওঠার কারণে পুকুরের পানি দিয়েই চলছে হাজারও মানুষের দৈনন্দিন কার্যক্রম। হঠাৎ দু-একটি বাড়িতে টিউবয়েল থাকলেও সেখানে একটু পানি নেওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে উপচেপড়া ভিড় জমাচ্ছেন গৃহবধূরা। সামর্থবান অনেকে আবার টিউবয়েলে পানি না পেয়ে সাব-মারসিবল পাম্পের মাধ্যমে পানি তোলার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু সেখানেও দেখা গেছে লম্বা লাইন। নলকূপ থেকে পানি ওঠানোর জন্য নতুন করে মাটি খোড়াসহ নানা কৌশল অবলম্বন করেছে। তবুও এর কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা। তবে কিছু কিছু এলাকায় ভ্যাটিক্যালযুক্ত নলকূপে সামান্য কিছু টিউবওয়েলে পানি উঠলেও হাজারেরও বেশি টিউবয়েলে একেবারেই পানি উঠছে না। যে কারণে ক্রমান্বয়ে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র-সংকট দেখা দিয়েছে এলাকায়। মাঠপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, পানির অপর নাম জীবন, পানি ছাড়া জীবন বাঁচবে না। পানি কিনে খাওয়াও আমাদের মত অল্প আয়ের মানুষের সম্ভব না। বর্তমান আমরা হাজার হাজার মানুষ চরম পানি সংকটে পড়েছি। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওয়াহিদুজ্জামান ইকু শিকদার বলেন, আমার নিজের বাড়ির টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। আমার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে টিউবওয়েলে পানি না উঠায় হাজার হাজার মানুষ তীব্র পানি সংকটে পড়েছে। শৈলকুপা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোঃ আসিফ আলম পানি সংকটের সত্যতা স্বীকার করে জানান, পানির লেয়ার শুষ্ক মৌসুমে নীচে নামার কারনে ব্যক্তিগতভাবে স্থাপিত নলকুপে পানি পাচ্ছে না যার ফলে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। তবে বৃষ্টি হলে এ সমস্যার অনেকটা সমাধান হবে। এছাড়া পানি সরবরাহ অথবা নলকুপ স্থাপনে কারিগরী সহায়তার প্রয়োজন হলে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস দিবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলাম বলেন, পানি সংকটের কথা শুনেছি। পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় এধরণের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ সমস্যার সমাধানের জন্য উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সব ধরণের সহায়তা করবে। এছাড়াও বৃষ্টি হলে এ সমস্যা অনেকটা দূরীভূত হবে বলে আশা করা যায়।