শৈলকুপার ১৪৫ বছরের বিদ্যালয়টির বেহাল দশা
\ বিশেষ প্রতিনিধি, শৈলকুপা \
ঝিনাইদহের শৈলকুপার বগুড়া ইউনিয়নের নাগেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বেহাল দশা। ১৪৫ বছর অতিবাহিত হওয়ায় স্কুলের টিনসেট ঘরসহ অন্যান্য ভবণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন বিদ্যালয়ের ছাদ থেকে কম বেশি পলেস্তরা খসে খসে পড়ছে। পলেস্তরা খসে পড়ায় আতঙ্কে রয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও অবকাঠামোগত কোন উন্নয়ন না হওয়ায় পাঠদান কক্ষের স্বল্পতাসহ নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৭৪ শতাংশ জমির উপর ১৮৮১ সালে নাগেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫ শতাধিক। প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত কোন একাডেমিক ভবণ বরাদ্দ পায়নি। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকদের পক্ষে একাধিকবার ভবন নির্মাণের জন্য আবেদন করা হলেও কোন ফল আসেনি। ১৯৮০ সালে বিজ্ঞান ভবণ ও ১৯৯৭ সালে ফ্যাসেলিটিজ বিভাগ থেকে একটি ভবণ নির্মাণ হলেও তা রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। সরেজমিন দেখা যায়, বিদ্যালয়ের পাঠদান কক্ষ, প্রধান শিক্ষক কক্ষ, সহকারী শিক্ষক কক্ষ ও অফিস কক্ষ সহ ১১টি কক্ষ রয়েছে তবে সবগুলো কক্ষেরই বেহাল দশা। দেওয়াল ও ছাদে অধিকাংশ জায়গায় ফাটল ধরেছে। যে কোন সময় বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আতংকের মধ্যে রয়েছে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। আবার একটু বৃষ্টি হলেই ছাদ চুয়ে পানি পড়ে পাঠদান ব্যাহত হয়। বিদ্যালয়ের যে কয়টি কক্ষ রয়েছে সবগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকটা ঝুঁকির মধ্যেই চলছে পাঠদান কার্যক্রম তবে প্রতিষ্ঠার ১৪৫ বছর পরেও বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত কোন উন্নতি হয়নি। নির্মাণ করা হয়নি একাডেমিক ভবন। নেই টয়লেটের ভালো ব্যবস্থা। অনেক দিন আগে নির্মিত টিনশেড ঘরটির বর্তমান অবস্থা আরো করুন। জানালা দরজা ভাংগা। দেয়ালের ইট খসে পড়ছে। বর্ষা মৌসুমে টিনের চালা দিয়ে পানি পড়ে বই-খাতা ভিজে যায়। আবার দিনে প্রচন্ড তাপদাহে অতিষ্ঠ হয় স্কুল শিক্ষার্থীরা। আর এমনই প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে এই বিদ্যালয়ে ৫ শতাধিক ছাত্র- ছাত্রীকে প্রতিদিন ক্লাস করতে হচ্ছে। পাঠদানের অনুপযোগী শ্রেণীকক্ষ ও ঝুঁকিপূর্ণ ঘরের কারণে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছে। বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী অর্থী রানী মন্ডল বলেন, আমরা অনেক ঝুঁকির মধ্যে ক্লাশ করি। মাঝে মধ্যে ছাদ থেকে বালু খোয়া পড়ে আমাদের শরীরের উপর। আমরা বিদ্যালয়ে একটা নতুন ভবণ চাই। এ ব্যাপারে অভিভাবক তিতাস কুমার বলেন, ১৪৫ বছরের বিদ্যালয়টির অবস্থা খুবই খারাপ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস করছে। বিদ্যালয়ে নতুন ভবন বরাদ্দ জরুরী হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মুকুল হোসেন বলেন, অনেক আগ থেকেই টিনসেট ঘরসহ ভবন ২টি ঝুঁকিপূর্ণ। একটি একাডেমিক ভবনের জন্য বিভিন্ন মহলে ধরনা দিয়েও কোন লাভ হয়নি। এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবণে পাঠদান অব্যাহত রেখেছি। এছাড়াও টিনসেটের ঘরটি যে কোন সময় ধসে পড়তে পারে তাই বিদ্যালয়ে নতুন ভবন বরাদ্দ জরুরী হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার সুলতান আলী বলেন, বিদ্যালয়টি অনেক পুরাতন। আমার জানামতে অবকাঠামোগত তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি বিদ্যালয়টিতে। তবে ভবণ নির্মাণের চাহিদা দিলে আমি ভবণ নির্মাণ কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবো। আর বিদ্যালয়ে ছোটখাট মেরামতের কোন দরকার হলে আমি সহযোগিতা করবো।
উপজেলার নাগেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির দ্বায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ¯িœগ্ধা দাস বলেন, আমার কাছে এব্যাপারে কেউ কিছু বলিনি। তবে প্রধান শিক্ষক ভবন বরাদ্দের চাহিদা দিলে আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিব এবং সার্বিক সহযোগীতা করবো।