শৈলকুপায় নদীর জমি ও শত বছরের ঘাট দখল,থানায় মামলা

Share Now..


শৈলকুপা প্রতিনিধি ঃ

ঝিনাইদহের শৈলকুপার কবিরপুর কুমার নদীর শত বছরের ঘাট ও ব্রীজের নীচে নদীর জায়গা দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে পৌর নায়েব শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ৬ মে শৈলকুপা থানায় জমির মালিকানা দাবী করা ২ ব্যক্তি মোঃ মহিউদ্দিন ও আব্দুস সাত্তার ফিরোজীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। বর্তমান তারা উভয়েই উপজেলার কবিরপুরের বাসিন্দা।
জানা যায়,সাধারণ মানুষের বিনোদনের জন্য ছিল২৯.৫ শতকের সবুজ চত্বর আর এই সবুজ চত্তরটুকু রড-সিমেন্টের খুঁটি আর বাঁশ-খুঁটি দিয়ে ঘিরে ফেলে দখলে নেয়া হয়েছে। স্থানীয়রা বার বার বাধা দিয়েও কোন কাজ হয়নি। রাতের আধারে জমি চাষ দিয়ে সেখানে লাগানো হয়েছে কলা গাছ। আবার এরপাশেও ২৪ শতক জমি দখল করা হয়েছে। জমির মালিকেরা বলছেন এ জমি তারা ক্রয় করেছেন। সরকারী এই জমি কিভাবে ব্যক্তি মালিকানা হলো এই নিয়ে নানা মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বর্তমানে কোন নদীর জায়গা দখল, ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না মর্মে হাইকোর্টেরও নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছে না জমির মালিকানা দাবী করা ব্যক্তিরা।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ১২৪ নং কবিরপুর মৌজার সাবেক ৩৪৮,৩৮৮ ও ৪৩৫ নং দাগের জমি বহুপূর্ব থেকেই সরকারী রাস্তা যার এসএ হাল দাগ নং ১৪২০ ব্রীজের নীচে ২৯.৫০ শতক জমি। কবিরপুর মেইন রোড থেকে কুমার নদের পানি পর্যন্ত রাস্তার জমির নকশা রয়েছে। এসএ সাবেক দাগ ও নকশা অনুযায়ী রাস্তার জমির পাশের মালিকগন এসব সরকারী নদীর জায়গা ভোগদখল আবার কখনো কখনো সরকারের কাছ থেকে একসানা বন্দোবস্ত নিয়ে বিক্রিও করে দিচ্ছে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে আবার ব্যাক্তি মালিকানায় রেকর্ডও করে নিচ্ছে । এসব নিয়ন্ত্রন করছে এলাকার ভ’মিদস্যু মহল । চরের জায়গাতে কেউ কেটেছে পুকুর আবার কেউ বা মাটি কেটে বিক্রি বা সমতল বানিয়ে চাষও করছে, দিচ্ছে লীজ-বন্দকও । সরকারী জায়গাটুকু কিভাবে রাতারাতি দখল ও বিক্রি হয়ে গেল তা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে কবিরপুরের নতুন ব্রীজ ও চর এলাকার বাসিন্দা সহ সচেতন মহলে ।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কবিরপুরে নতুন ব্রীজের পাশে রয়েছে শত শত বছরের একটি ঐহিত্যবাহী একটি ঘাঁট। যেখানে কবিরপুর, নতুন ব্রীজ ও চর এলাকার শতশত মানুষ এই ঘাট ব্যবহার করে তাদের দৈনন্দন কাজে-কর্মে। আর এই ঘাটের সাথেই ২৯ শতক সরকারী জায়গা রয়েছে, যেটি ভিটার মতো উচু সবুজ চত্তর। এখানে প্রতি বছর দুই ইদ, পহেলা বৈশাখ, দুর্গাপুঁজা সহ নানা উৎসবে মেলা বসে। সার্কাস-থিয়েটার, নাট্য উৎসব সহ বৈশাখী মেলাও বসে। তবে শেকড়-সংস্কৃতির নানা বিনোদনের এই জায়গাটুকুও এখন চলে গেল ভুমিদস্যুদের কবলে । শুধু বড়দের উৎসবই নয় এখানে শিশুরা ঘুড়ি উড়িয়ে থাকে, হ্যান্ডবল,ভলিবল খেলে থাকে ।
আর এবারের ইদে এখানে কোন অনুষ্ঠান করতে পারেনি স্থানীয়রা। রাজধানী সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ইদের ছুটিতে বাড়িতে এসে নির্মল বিনোদনের জায়গা পায়নি নতুন ব্রীজ এলাকার তথা উপজেলা শহরের মানুষ । নদীর চরের এসব ছোট ছোট জায়গা ঘিরে শৈলকুপার নতুন ব্রীজ এখন মানুষের বিনোদনের একমাত্র স্পট, তবে সেটিও এখন বে-দখল হয়ে গেল। ইদের দু-সপ্তাহ আগ থেকে কবিরপুরের মহিউদ্দীন তার লোকজন দিয়ে জায়গাটুকু ঘেরা দিয়ে দখলের চেষ্টা করতে থাকে তবে স্থানীয়দের বাঁধার মুখে পড়তে থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইদের আগের রাতে রড-সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে ঘিরে ফেলে।
কবিরপুরের স্থানীয় বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম বলেন,শত বছরের ঘাটের জায়গা ও নদীর জমি দখল করে নেওয়া হয়েছে। আমরা এসব জমি দখলমুক্ত চাই।
এব্যাপারে সাবেক মহিলা কাউন্সিলর কবিরপুরের বাসিন্দা রাশেদা খাতুন জানান, এই ঘাটে আমরা গোসল সহ নদীর পানি ব্যবহার ও ঘর-গৃহস্থলীর নানা কাজ করতাম তবে গত কয়েক বছর এসবের কিছুই করতে পারছেন না। বর্তমান এই জমি দখলের ফলে নদীতে ঠিকমত যেতে পারছি না।আমরা এই নদীর জমি দখলমুক্ত চাই।
এদিকে ক্রয়সুত্রে চরের এই জমি মোহাম্মদ মহিউদ্দীন মালিক দাবি করে সাম্প্রতি সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিলে সদ্য বিদায়ী এসিল্যান্ড পার্থ প্রতীম শীল সেই সাইনবোর্ড তুলে দেন এবং জমিতে কোন ধরনের দখল বা ঘেরা দেয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দেন দু’দফা। ইউএনও অফিস থেকেও লোকবল এসে জমিতে কোন কিছু করা যাবে না বলে জানিয়ে দেন তবে কোন কিছুরই তোয়াক্কা না করে ফের রড-সিমেন্টের খুঁটি পুতে তা দখল করা হয়েছে।
উপজেলার কবিরপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ মহিউদ্দীন বলছেন এটা ব্যাক্তি মালিকানার জায়গা, এই জায়গাটুকু তিনি কিনেছেন বলে দাবি করছেন। ১৯৮০ সালের দিকে স্থায়ী বন্দোবস্ত দলিলে সরকারের কাছ থেকে কুমার নদের চরের এ জমি কিনেন নজরুল মন্ডল। সেই জমির ২৯,৫০ শতক ২০১৯ সালে কিনেছেন মহিুদ্দিন ,যা মালিকানা সম্পত্তি বলে তার দাবি।
শৈলকুপা ভুমি অফিস সহ স্থানীয় প্রশাসনের বাধার কথা স্বীকার করে মহিউদ্দিন বলেন, বাধা দেয়ায় তাদের বিরুদ্ধে তিনি আদালতে পিটিশন দিয়েছেন এবং শোকজ করা হয়েছে। বৈধভাবে জমি ক্রয় করেছেন এবং মালিকানা হিসাবে ভোগদখল করতে পারবেন বলে দাবি করছেন মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।
নদীর জমির মালিকানা দাবী করা আরেক ব্যক্তি আব্দুস সাত্তার ফিরোজী বলেন, আমরা বৈধ উপায়ে জমি ক্রয় করেছি। আমাদের জমিতে কোন ক্রটি নেই।আমরা এই জমির বৈধ মালিক।
শৈলকুপা থানার ওসি মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন,কোনভাবেই নদীর জায়গা দখল করা যাবে না। এব্যাপারে শৈলকুপা থানায় সরকারী সম্পত্তি জবরদখলের ঘটনায় মহিউদ্দিন ও আব্দুস সাত্তার ফারাজি নামের ২ ব্যাক্তির বিরুদ্ধে ৬ মে একটি মামলা হয়েছে।
শৈলকুপায় সদ্য যোগদানকারী সহকারী কমিশনার(ভুমি) মোঃ বনি আমিন জানিয়েছে, পূর্বে এমন জমি নানাভাবে দখল, স্থাপনা নির্মাণ করতে দেখা গেলেও বর্তমানে হাইকোর্টের আদেশের পর নতুন করে এভাবে নদীর জমি দখল,ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। কুমার নদের নতুন ব্রীজ সংলগ্ন জমির বিষয় নিয়ে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে ।
এব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা লিজা বলেন,নদীর জায়গা দখল করার কোন সুযোগ নেই । যতবার তারা দখল নেয়ার চেষ্টা করেছে ততবারই আমরা বাধা দিয়েছি। বর্তমান দখলদারদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে, দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।
বিরোধপূর্ণ এই জমি নিয়ে যেকোন মুহুর্তে এলাকায় সংঘর্ষ ও সহিংসতার আশংকা রয়েছে বলে স্থানীয়দের অনেকে জানিয়েছে। তাই অতিসত্বর শত বছরের ঘাট, নদীর জমি দখলমুক্ত চাই এলাকাবাসী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *