‘সমর্থকরা আমাদের খেলা দেখার জন্য তাদের বাড়ি গাড়ি বিক্রি করেছিল’
২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর মরুর দেশ কাতারে অনুষ্ঠিত হওয়া ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সকে তুমুল লড়াইয়ের পর টাইব্রেকারে হারিয়ে ৩৬ বছর পর শিরোপা জিতে নেয় আর্জেন্টিনা। গত সোমবার সেই ঐতিহাসিক রাতের এক বছর পূর্ণ হয়। সেই দিন আর্জেন্টিনার সব খেলোয়াড় তারা তাদের ব্যক্তিগত আইডিতে সামাজিক গণমাধ্যমে গেল বছর বিশ্বকাপ জয়ের ছবি শেয়ার করে স্মৃতিচারণ করেন। এই তালিকা থেকে বাদ যাননি আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী কোনো খেলোয়াড়। শুধু তাই নয়, তাদের স্ত্রীরাও করেন। এছাড়া বাদ যায়নি বিশ্ব ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থাও (ফিফা)। তাদের ফেসবুক পেজে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসির আগে বিশ্বকাপ ট্রফির ছবি শেয়ার করেন।
লাতিন আমেরিকায় ফুটবল বেশ জনপ্রিয়। আর যদি বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে সেখানকার কোনো দেশ বিশেষ করে ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনা তাহলে তো কথাই নেই। তবে দীর্ঘদিন ধরে এই আসরের ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি সেলেসাওরা। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা ২০১৪ বিশ্বকাপে আশা জাগিয়েও শেষ অবদি ফাইনালে জার্মানের কাছে হেরে যায়। তবে সেই আসরের থেকে ভিন্ন চিত্র ছিল ২০২২ বিশ্বকাপে। আর্জেন্টিনা দল যে শিরোপা জয়ের জন্যই সেবারের আসরে পা রেখেছিল তা একপ্রকার তাদের ভক্তরা নিশ্চিত ছিল। টানা ৩৬ ম্যাচ জয়ের ধারায় ছিল। যদিও আসরের প্রথম ম্যাচে সৌদির বিপক্ষে হেরে কিছুটা ধাক্কা খায়। তবে পরের গল্পটা ঐতিহাসিক। একের পর এক প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে মেসিরা। আর এই ফাইনাল দেখতে নিজেদের গাড়ি-বাড়ি বিক্রি করে কাতারে গিয়েছিল আলবিসেলেস্তেদের ভক্তরা।
বিশ্বকাপ জয়ের এক বছর পূর্তিতে এমন সব কথাই ফিফা প্লাসের ‘আ নেশনস স্টোরি: আর্জেন্টিনা’ প্রোগ্রামে জানিয়েছেন গত বিশ্বকাপের গোল্ডেন গ্লাভসজয়ী আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক। এ সময় তিনি জানান, তাদের খেলা দেখার জন্য নাকি নিজ দেশের সমর্থকদের কেউ কেউ বাড়ি, গাড়িও বেচে দিয়েছেন। বিশ্বকাপজয়ী এই তারকা গোলরক্ষক বলেন, ‘এই (২০২২) বিশ্বকাপটা ছিল পাগলাটে। আমাদের খেলা দেখার জন্য অনেক মানুষ বাড়ি-গাড়িও বেচে দিচ্ছিল। আমি টেলিভিশনে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি। এত বেশি মানুষ গিয়েছিল, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আমাদের সমর্থন করতে আসে সেটা আমাদের অনেক আনন্দ দেয়।’
টাচলাইনে আর্জেন্টিনা খেলোয়াড়দের সঙ্গে সমর্থকদের আন্তরিক সম্পর্কও বেশ চর্চিত ছিল বিশ্বকাপে। আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনিও দলের বিশ্বকাপ জেতার পেছনে সমর্থকদের বড় অবদান দেখেন। মেসিদের কোচ বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমাদের অর্জনের পেছনে সমর্থকদের ভূমিকা রয়েছে। ধন্যবাদ যারা সেখানে (বিশ্বকাপে) আমাদের সমর্থন দিতে গেছে। আর্জেন্টিনা থেকে যারা টেলিভিশনে দেখে সমর্থন দিয়ে গেছে, তারাও ছিল সেখানে। এটা সাহস বাড়িয়ে দেয়। এটা দারুণ এক অভিজ্ঞতা ছিল।’ আর্জেন্টিনার সাফল্যের পেছনে ভূমিকা আছে দলের খেলোয়াড় ও স্টাফদের পরিবারের সদস্যরাও। এ নিয়ে মার্টিনেজ বলেন, ‘সবচেয়ে আনন্দের দিন ছিল, যেদিন আমাদের পরিবার এসেছিল। একটা সময় আমাদের সন্তানরাও অনুশীলন ক্যাম্পে চলে আসত এবং তারাও এখানে খেলাধুলা করেছে। বাচ্চাদের আনন্দ করতে দেখা এবং সবাই একসঙ্গে থাকার সময়টা ছিল দারুণ। আমরা এক পরিবারের মতো ছিলাম যাদের স্বপ্নও একই।’
বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে টাইব্রেকারে এমিলিয়ানো মার্টিনেজ প্রতিপক্ষের দুটি পেনাল্টি শর্ট ঠেকিয়ে দেয়। সেই মুহূর্ত তার কাছে কেমন ছিল, এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি এমন একটি মুহূর্ত যা প্রতিবার যখন আমি নিয়ে ভাবী তখন আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি।’
কাতারের মাটিতে বিশ্বকাপ জয় নিয়ে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি বলেন, ‘আমি অনেক বার বলেছি যে, আমার স্বপ্ন ছিল আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানো। আমি নিজেকে যথেষ্ট ভাগ্যবান মনে করি, কেননা আমি জাতীয় দল এবং ক্লাব পর্যায়ের সব পুরস্কার জিতেছি। আমি বিশ্বকাপ আনন্দের সঙ্গে খেলেছি এটি দুর্দান্ত ছিল। আমি এর চেয়ে বেশি আর কিছু চাইতে পারতাম না।’