সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্যে আটকে আছে বিস্ফোরক আইনের মামলা

Share Now..

তখন সকাল ৯ টা ২৭ মিনিট। দরবার হলে চলমান বার্ষিক দরবারে একদল বিদ্রোহী বিডিআর সৈনিক ঢুকে পড়ে। সিপাহী মঈন নামে একজন বিডিআর সদস্য মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে। এরপরই ঘটে যায় ইতিহাসের সেই নৃশংস ঘটনা। বিডিআরের বিদ্রোহী সৈনিকরা সেনা কর্মকর্তাদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে তাদের পরিবারকে জিম্মি করে ফেলে। পুরো পিলখানায় এক ভীতিকর বীভৎস ঘটনার সৃষ্টি করে। এ সময় তারা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বিজিবি’র সদর দফতর পিলখানায় সেদিন বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা যে তান্ডব চালিয়েছিল, তা পৃথিবীর কোনও বাহিনীর বিদ্রোহের ইতিহাসে পাওয়া যায় না।

পিলখানায় নারকীয় হত্যার ঘটনায় দায়ের করা হয় দুটি মামলা। এর মধ্যে সেনা কর্মকর্তাদের নিহতের ঘটনায় দণ্ডবিধি আইনে করা হয় হত্যা মামলা। অপরটি হয় বিস্ফোরক আইনে। বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলাটি ১৩ বছর ধরে সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্যে আটকে আছে। হত্যা মামলায় নিম্ন আদালত ২০১৪ সালে ১৫২ বিডিআর জওয়ানকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় ১৬১ জনকে। সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পান আরও ২৫৬ জন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান ২৭৮ জন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামিরা। ২০১৭ সালে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ ১৫২ জনের মধ্যে ১৩৯ জওয়ানকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। যাবজ্জীবন দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় আরও ২০০ জনকে। খালাস পান ৪৫ জন।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বিস্ফোরক আইনের মামলাটি। এই মামলায় আসামি রয়েছেন ৮৩৪ জন। এর মধ্যে একজন সিভিলিয়ান, বাকি আসামিরা বিডিআরের জওয়ান। এই মামলায় আসামীদের মধ্যে ২৪ জন মারা গেছেন। জীবিত আসামী ৭৯০ জন। পলাতক রয়েছেন ২০ জন আসামী। এই মামলায় ২১০ জন সাক্ষী দিয়েছেন। সর্বশেষ গত ৭ ফেব্রুয়ারি ও ৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ৯ মার্চ ও ১০ মার্চ সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা আছে।

মামলার বিচার কার্যক্রম কবে নাগাদ সম্পন্ন হবে, জানতে চাইলে মামলার পাবলিক প্রসিকিউশন (পিপি) মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রায় ১২ শত সাক্ষী রয়েছেন। সবার সাক্ষ্য গ্রহণের প্রয়োজন নেই। এই মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। মামলায় আসামী পক্ষ যদি সহায়তা করে, তাহলে এ বছরেই এই মামলার রায় দিতে পারবে আদালত।

আইনজীবীরা বলছেন, নৃশংস এই হত্যা মামলার হাইকোর্টের ৩০ হাজার পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি তুলতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। এখন আনুষঙ্গিক কাগজাদি (নিম্ন আদালতের রায়, সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা, আত্মপক্ষ সমর্থন) দিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ আপিল করলে তার পৃষ্ঠাসংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৬৫ হাজারে। ফলে সব মিলিয়ে এক আপিল দায়েরে সম্ভাব্য খরচ পড়বে ১০ লাখ টাকার ওপরে।
হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে খালাস ও সাজা কম পাওয়া আসামিদের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে লিভ টু আপিল দায়ের করে রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে, মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া প্রায় ৩শ আসামি খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে আপিল করেছেন। রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের এসব আপিল এখন চুড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। পরে এই আপিল দায়েরের বিষয়টি ব্যয় সাপেক্ষ হওয়ায় মেমো অব আপিলের মাধ্যমে আপিলের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করে আসামি পক্ষ। প্রধান বিচারপতি আসামি পক্ষের আবেদন মঞ্জুর করায় অন্যান্য আসামীদেরকে পূর্ণাঙ্গ পেপারবুক ছাড়াই আপিল দায়ের করার সুয়োগ হয়েছে। ফলে তাদের কাউকে ১০ লাখ টাকা থেকে ১২ লাখ টাকা ব্যয় করে আপিল দায়ের করতে হবে না। তারা বড় অংকের অর্থ খরচের হাত থেকে বেঁচে গেছেন বলে জানিয়েছেন আসামী পক্ষের অন্যতম আইনজীবী এম আমিনুল ইসলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *