সানস্ট্রোকের লক্ষণ ও প্রতিকার 

Share Now..

সারাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। হঠাৎ তাপমাত্রার এমন উর্ধ্বগতিতে সবারই হাঁসফাঁস অবস্থা। এর ফলে একদিকে যেমন বাড়ছে অস্বস্তি, তেমনি বাড়ছে হিট স্ট্রোক বা সান স্ট্রোকের ঝুঁকি। তবে ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপে সহজেই এ ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। সেইসঙ্গে সম্ভব আশপাশে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়া কোনো মানুষের জীবন রক্ষাও। 

হিট স্ট্রোক কী?
তীব্র এ গরমে দীর্ঘ সময় রোদে থাকলে বা শারীরিক পরিশ্রম করলে যে কেউ অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। তবে কোনো কারণে তা ১০৪ ডিগ্রির বেশি হলে মানুষের রক্তচাপ কমে যায়, এমনকি অচেতনও হয়ে পড়তে পারে। এ সমস্যাকে চিকিত্সাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘হিট স্ট্রোক’ বলে। যথাসময়ে চিকিত্সা না করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

হিট স্ট্রোকের লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি ও ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মুনীরউদ্দিন আহমেদ জানাচ্ছেন কিছু অভিমত।

লক্ষণ

  • মাথা ঝিমঝিম। 
  • অসংলগ্ন আচরণ। 
  • নিশ্বাস দ্রুত হওয়া।   
  • রক্তচাপ কমে যাওয়া। 
  • ঘাম বন্ধ হয়ে যাওয়া ও ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়া। 
  • প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া। 
  • ত্বক শুষ্ক ও লালচে হয়ে যাওয়া। 
  • রোগী অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। 

সতর্কতা

  • দিনের বেলা যথাসম্ভব বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকুন ও রোদ এড়িয়ে চলুন। আর যদি বের হতেই হয় তবে ছাতা, টুপি বা ক্যাপ বা কাপড় দিয়ে মাথা যথাসম্ভব ঢেকে রাখুন।
  • গরমের তীব্রতা থেকে বাঁচতে হালকা রঙের, ঢিলেঢালা এবং সম্ভব হলে সুতির জামা পরুন। রোদে একটানা না থেকে বা শারীরিক পরিশ্রম না করে মাঝে মাঝে ছায়ায় বিশ্রাম নিন। আগুনের কাছে কাজ করার সময় বিরতি নিয়ে ফ্যানের কাছে বসুন।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং বাসি, খোলা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। সম্ভব হলে একাধিকবার পানির ঝাপটা নিন বা গোসল করুন।
  • প্রস্রাবের রঙের দিকে নজর রাখুন, হলুদ বা গাঢ় হলে অবশ্যই পানি পানের পরিমাণ বাড়ান। সেইসঙ্গে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা পর্যাপ্ত পানি পান করছেন কিনা— সেদিকে খেয়াল রাখুন।
  • রোদের মধ্যে দাঁড়ানো বা যানজটে যানবাহনে বসে না থেকে নিচে নেমে হাঁটাহাঁটি করুন। শিশুদের প্রচণ্ড রোদে বাইরে খেলাধুলা করতে দেবেন না। তাদের বাড়িতে ঠাণ্ডা জায়গায় রাখুন।
  • ঘরের পরিবেশ যেন অতিরিক্ত গরম বা ভ্যাপসা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
  • বেশি অসুস্থ বোধ করলে দ্রুত নিকটস্থ চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।

করণীয়
প্রথমেই আক্রান্ত ব্যক্তিকে ছায়া ও অপেক্ষাকৃত শীতল স্থানে সরিয়ে নিন। সব জামাকাপড় ঢিলে করে দিন। পানি বা ভেজা কাপড় দিয়ে অনবরত সারা শরীর মুছে দিন। জ্ঞান থাকলে খাওয়ার স্যালাইন বা পানি খাওয়ান।

দ্রুত কাছের হাসপাতালে নিন। যত তাড়াতাড়ি চিকিত্সা হয়, তত ভালো। দেরি করলে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

শরীরের তাপমাত্রা বেশি বলে জ্বর ভেবে কোনো ওষুধ দেবেন না। হাসপাতাল খুব দূরে হলে রোগীর পাশে বরফের বড় বড় চাকা রেখে বাতাস দিতে থাকুন। রোগীকে কাত করে রাখুন। মুখে জমে থাকা লালা পরিষ্কার করে দিন।

ঝুঁকিতে যারা
হিট স্ট্রোকের সর্বোচ্চ ঝুঁকি আছে শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, শ্রমজীবী ব্যক্তি, অতিরিক্ত ওজন থাকা ব্যক্তি, শারীরিকভাবে অসুস্থ, বিশেষত হৃদরোগ বা উচ্চরক্তচাপ থাকা ব্যক্তির।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *