সারাদেশে নামসর্বস্ব আইপিটিভির ছড়াছড়ি

Share Now..

বিশ্বজুড়ে বহু বছর ধরে মানুষের জ্ঞানলাভ, দেশি-বিদেশি খবরাখবর জানার এবং বিনোদনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম টেলিভিশন। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে সরকারের অনুমোদন পাওয়া থেকে শুরু করে দর্শকদের জন্য সম্প্রচারে যাবার যোগ্যতা অর্জন পর্যন্ত বহু কঠিন ধাপ পার হতে হয়।

মানসম্মত অনুষ্ঠান তৈরি ও তা দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার পেছনে থাকে চ্যানেলগুলোর বিশাল অঙ্কের আর্থিক বিনিয়োগ। তাদের লক্ষ্য রাখতে হয় দেশের এবং নিজ প্রতিষ্ঠানের সম্মানের দিকেও। ফলে সাংবাদিক ও অন্যান্য জনবল নিয়োগ করতে হয় অনেক সতর্কতার সঙ্গে।

কিন্তু ‘টেলিভিশন’ নাম দিয়ে নতুন এক ধরনের ‘উৎপাত’ শুরু হয়েছে। এর নাম দেয়া হয়েছে আইপিটিভি। বাংলাদেশের আনাচে কানাচেও ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে তথাকথিত এই ‘টিভি চ্যানেল’। আসলে এগুলো কোনো টিভি চ্যানেল নয়।

ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মেসেজিং চ্যাট অ্যাপ্লিকেশনে যেভাবে আমার ‘লাইভ’ করি খানিকটা সেরকমই। যেকোন স্থানে বসে স্ট্রিমিং বা লাইভ করা ভিডিও কথিত ওই আইপিটিভির ওয়েবসাইটে দেখা যায়।

যেকোনো জায়গায় বসে একটি সাধারণ মানের কম্পিউটার দিয়েই নির্দিষ্ট এপ্লিকেশন ব্যবহার করে যে কেউই সেটা করতে পারে। ভিডিও ক্যামেরা কিংবা মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও এডিটিং করেও চালানো যায় এই কথিত এই আইপিটিভি। এগুলো আমাদের ডিশ লাইনে টিভি সেটে দেখা যায় না। দেখতে হয় কম্পিউটার কিংবা মোবাইলে। বেশিরভাগ মানুষ জানেও না কোন আইপিটিভি কোন ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখতে হয়। অথচ এই ‘টিভি’ শব্দটিকে পুঁজি করে একটি চক্র মানুষকে বিভ্রান্ত ও প্রতারিত করে চলেছে প্রতিনিয়ত। তারা দেশের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলগুলোর নামের আগে পিছে বিভিন্ন শব্দ জুড়ে দিয়ে কথিত ‘আইপিটিভি’ চ্যানেল চালায়।

বেশিরভাগের উদ্দেশ্য থাকে এসব চ্যানেলে ‘সাংবাদিক’ বানিয়ে দেয়ার নামে সহজ সরল মানুষের নিকট থেকে অর্থ আদায় এবং বিভিন্ন খবর ফাঁস করে দেয়ার নামে মানুষকে ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করা।

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এই আইপি টিভির হাঁকডাক বাড়ছে। জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগের নামে তারা ‘সাংবাদিক’ পরিচয়পত্র বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এরা মোটরসাইকেল কিংবা প্রাইভেট কারের সামনে বড় করে ‘সাংবাদিক’ স্টিকার লাগিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। চাঁদাবাজি কিংবা প্রশাসনে তদবিরবাজি করছে।

সরকারি-বেসরকারি দফতর ও প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে করে যাচ্ছে ব্ল্যাকমেইল। সম্প্রতি এ ধরনে টিভির দৌরাত্মের বিষয়টি সামনে আসায় এগুলো বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। যা খুশি তাই প্রচার করা যায়, তাই কি প্রচার করা উচিত সেই নীতি নৈতিকতার ধার ধারছে না এরা। জাতীয় টিভি চ্যানেলগুলোর মতো লোগো ব্যবহার করে এরা প্রচার করছে দৈনিক সংবাদও। এরা নজরদারির বাইরে থাকে বলে পক্ষপাত মূলক ও রাষ্ট্রবিরোধী খবর প্রচার করতেও দ্বিধা করে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *