সারের ভর্তুকিতে লাগবে ২৮ হাজার কোটি টাকা

Share Now..

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় এ বছর দেশে সারের ভর্তুকিতে লাগবে ২৮ হাজার কোটি টাকা। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় চার গুণ। এ অবস্থায় সরকার সারের দাম বাড়াবে, নাকি এ বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দেবে—তা নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছে।

গতকাল সোমবার সচিবালয়ে সারের মজুত, দাম, ভর্তুকিসহ সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এ কথা জানান। কৃষিমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতির প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সারের মূল্য অস্বাভাবিক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় তিন গুণ। তাছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় জাহাজ ভাড়াও দুই গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রতি কেজি সারের আমদানি ব্যয় ছিল ইউরিয়া ৩২ টাকা, টিএসপি ৩৩ টাকা, এমওপি ২৩ টাকা, ডিএপি ৩৭ টাকা। যা ২০২১-২২ অর্থবছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৯৬ টাকা, ৭০ টাকা, ৫৪ টাকা এবং ৯৩ টাকা। অথচ কৃষককে প্রতি কেজি ইউরিয়া ১৬ টাকায়, টিএসপি ২২ টাকায়, এমওপি ১৫ টাকায় ও ডিএপি ১৬ টাকায় দেওয়া হচ্ছে

বর্তমানে প্রতি কেজি ইউরিয়ায় ৮২ টাকা, টিএসপিতে ৫০ টাকা, এমওপিতে ৪১ টাকা এবং ডিএপিতে ৭৯ টাকা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ড. রাজ্জাক বলেন, এ বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি দিতে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে লাগবে ২৮ হাজার কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরে লেগে ছিল ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। তিনি বলেন, এ বছর ভর্তুকি খাতে বাজেট মাত্র ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ফলে আরো প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত প্রয়োজন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর কোথাও এতো ভর্তুকি দেওয়ার উদাহরণ নেই। বছরে ২৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে আরেকটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। ভর্তুকি কমাতে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার চাপও রয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক সংস্থার আপত্তি উপেক্ষা করে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছেন। সারের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকার উভয় সংকটে রয়েছে জানিয়ে ড. রাজ্জাক বলেন, একদিকে এতো ভর্তুকি দিলে অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে, অন্যদিকে সারের দাম বাড়ালে কৃষকের কষ্ট হবে, উৎপাদন খরচ বাড়বে, খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে। এতে খাদ্যপণ্যের দাম আরো বেড়ে যেতে পারে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা নীতিগতভাবে এখনো সারের দাম না বাড়ানোর পক্ষে। আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণ করছি, তবে দাম না কমলে এই বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি অব্যাহত রাখা কঠিন হবে। প্রয়োজনে সারে ভর্তুকির পরিমাণ কমানো বা সারের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে বুদ্ধিজীবী, অর্থনীতিবিদ, সুশীল সমাজ, মিডিয়া কর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া যেতে পারে বলেও জানান তিনি।

বর্তমানে সারের মজুত ও চাহিদা তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী জানান, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টন রাসায়নিক সারের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া ২৬ লাখ টন, টিএসপি সাড়ে ৭ লাখ টন, এমওপি সাড়ে ৭ লাখ টন এবং ডিএপি সাড়ে ১৬ লাখ টন। চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে দেশে সব ধরনের সারের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে বলে জানান তিনি।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল, অতিরিক্ত সচিব বলাইকৃষ্ণ হাজরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *