সীমান্তে ১৬ সৈন্য নিহত, কোন দিকে আফগান-পাকিস্তান সম্পর্ক
আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে গত ২১ ডিসেম্বর তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) হামলায় পাকিস্তানের ১৬ সেনা নিহত হয়। এ ঘটনার জেরে পাকিস্তান বিমান বাহিনী আফগানিস্তানের পাকতিয়া প্রদেশে হামলা চালায়। এতে নারী ও শিশুসহ ৪৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে তালেবান বাহিনী সীমান্ত এলাকায় হামলা চালানোর হুমকি দেয়।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা বিরাজ করছে। পাকিস্তান অভিযোগ করছে, টিটিপি আফগানিস্তানের সীমান্তে নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তুলে পাকিস্তানের ভেতরে ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। আফগানিস্তানের তালেবান সরকারও পাল্টা অভিযোগ এনেছে, পাকিস্তানের হামলায় নিরীহ বেসামরিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২১ ডিসেম্বরের টিটিপি হামলার জবাবে পাকিস্তান বিমান বাহিনী পাকতিয়া প্রদেশে বোমা বর্ষণ করে। তালেবান দাবি করেছে, পাকিস্তানের এই হামলায় নারী ও শিশুসহ ৪৬ জন নিহত হয়েছে। এতে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায় এবং তালেবান সরকার সীমান্ত সংঘাতের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে পাল্টা হামলার ইঙ্গিত দেয়।
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই জটিল। ১৯৯৬ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার সময় পাকিস্তান তাদের অন্যতম সমর্থক ছিল। ৯/১১ পরবর্তী সময়ে তালেবান নেতারা পাকিস্তানে আশ্রয় নিলেও, একই সময়ে টিটিপি নামক সশস্ত্র গোষ্ঠীর উত্থান ঘটে। এই গোষ্ঠী আদর্শিকভাবে আফগান তালেবানের সাথে সংযুক্ত এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে আসছে। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবানের পুনরুত্থানের পর পাকিস্তান আশা করেছিল, তারা টিটিপিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে তালেবানের সহায়তা পাবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। টিটিপির ক্রমাগত হামলা পাকিস্তানের ভেতরে অস্থিরতা তৈরি করছে।
পাকিস্তানের সাবেক আফগান রাষ্ট্রদূত আসিফ দুররানি বলেন, ‘তালেবানকে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা টিটিপিকে সমর্থন করবে নাকি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করবে। টিটিপি ও অন্যান্য গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণে তালেবান কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে।’
সীমান্ত সংঘাত দুই দেশের ভঙ্গুর সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলছে। ডুরান লাইন ঘিরে দীর্ঘদিনের বিরোধ, আন্তঃসীমান্ত হামলা, এবং উভয় দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ভবিষ্যতে আরও বড় সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, টিটিপির মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম বন্ধে তালেবান সহযোগিতার বিষয়টি নির্ধারণ না করলে, এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে।
সব মিলিয়ে, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং সংঘাতের বর্তমান পরিস্থিতি পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।