‘সুরা ইখলাস’ ১০ বার পড়ার ফজিলত

Share Now..

‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ একটি সুরার প্রথম আয়াত। ‘কুল হুয়াল্লাহ’ সুরা নামে অনেকেই চেনে। এটি মূলত সুরা ইখলাস। ৪ আয়াত বিশিষ্ট এ সুরাটিকে কোরআনুল কারিমের এক তৃতীয়াংশ বলা হয়। সুরাটি ১০ বার পড়ায় রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। কী সেই মর্যাদা?
হাদিসে পাকে এসেছে, যে ব্যক্তি সুরা ইখলাস (পড়া) ১০ বার শেষ করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন।’ (সিলসিলা সহিহা)
এছাড়াও সুরাটির আরও অনেক ফজিলতের বর্ণনা এসেছে হাদিসের একাধিক বর্ণনায়। তাহলো-
১. এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি সুরা ইখলাসকে ভালোবাসি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বলেন, এ ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।’ (বুখারি, তিরমিজি)
২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন ২০০ বার সুরা ইখলাস পড়বে, তার ৫০ বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, তবে ঋণ থাকলে তা মাফ হবে না।’ (তিরমিজি)
সুরা ইখলাসের প্রতি ভালোবাসা
সুরা ইখলাসকে ভালোবাসলে আল্লাহও ওই বান্দাকে ভালোবাসেন। এ সম্পর্কে হাদিসের একটি বর্ণনা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার এক সাহাবির নেতৃত্বে একদল সৈন্যকে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। যুদ্ধের সেনাপতি ওই সফরের দীর্ঘ সময় জুড়ে শুধু সুরা ইখলাস দ্বারা নামাজ পড়িয়েছিলেন।
যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সৈন্যরা ফিরে এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তা অবহিত করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বললেন, তোমরা কি তাকে জিজ্ঞাসা করোনি; কেন সে এরূপ করেছে?
তারা সেনাপতির বর্ণনা তুলে ধরেন- ‘এ সুরায় আল্লাহর গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে; বিধায় আমি এ সুরাকে ভালোবাসি।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিদের বললেন, ‘তোমরা তাকে গিয়ে বল; আল্লাহ তাআলাও তাকে ভালোবাসেন।’ (বুখারি, মুসলিম, নাসাঈ)
যে কারণে সুরাটি কোরআনের তিনভাগের একভাগ
ইমাম শাফেঈ রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ছাত্র আল্লামা আবুল আব্বাস আহমাদ ইবন ওমার ইবন সুরাইজ আশ-শাফেঈকে একবার প্রশ্ন করা হলো- সুরা ইখলাস তথা ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ কে, কোরআনের এক তৃতীয়াংশ বলা হয় কেন?
আল্লামা আবু আব্বাস আহমাদ ইবনে ওমার ইবনে শুরাইজ আশ-শাফেঈ এর উত্তরে বলেন- কুরআনুল কারিমে মৌলিক আলোচ্য বিষয় ৩টি অংশে বিভক্ত। তাহলো-
> কোরআনের একাংশের আলোচনার বিষয় : ১. আহকাম বা বিধি-বিধান। ২. অপর অংশে আলোচনার বিষয় হলো ওয়াদা ও ওয়িদ তথা জান্নাতের সুসংবাদ ও জাহান্নামের হুংকারের বিবরণ। ৩. আর বাকী অংশে আলোচনার বিষয় হলো মহান আল্লাহ তাআলার নাম ও গুণগান।’ (মাজমু‘ ফাতাওয়া)
২. অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, কোরআনের বিভিন্ন সুরার বিষয়বস্তু প্রধানত তিন ধরণের- ১. আল্লাহর পরিচয়; ২. হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রেসালাত এবং পরকালের বর্ণনা। ৩. আর সুরা ইখলাসে শুধু আল্লাহর কথাই আলোচিত হয়েছে। এ কারণে সুরা ইখলাসকে মূলত কোরআনুল কারিমের ৩ ভাগের এক ভাগ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
৩. হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে রাতে বারবার সুরা ইখলাস পড়তে শুনেছেন। এরপর সকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, সেই সত্তার শপথ! যার কুদরতি হাতে আমার জীবন। অবশ্যই এ সুরা কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশের সমান।’ (বুখারি, আবু দাউদ, নাসাঈ, মুআত্তা মালেক)
৪. অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার সাহাবিদের বলেন, তোমারা কি এক রাতে কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশ পড়তে পারবে? সাহাবিরা এ প্রস্তাবকে খুবই কঠিন মনে করলেন। ফলে তারা বলল, আমাদের মধ্যে এ কাজ কে করতে পারবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, সুরা ইখলাস কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান।’ (বুখারি, নাসাঈ)
৫. হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ কোরআনকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। আর এ সুরাটি (সুরা ইখলাস)-কে একটি ভাগে পরিণত করেছেন।’ (মুসলিম, তিরমিজি)
ফজিলত ও মর্যাদাপূর্ণ সুরা ইখলাস। আল্লাহর ভালোবাসা ও নেয়ামতে ভরপুর জান্নাতের প্রসাদ পেতে নিয়মিত সুরা ইখলাসের আমল করা জরুরি। এতে যেমন ইমান হবে পরিপূর্ণ তেমনি পরকালের পুরস্কার হবে সুনিশ্চিত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুরা ইখলাসের আমল বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *