স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার পর স্বামী পলাতক, ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা
মাগুরার শ্রীপুরে মনিকা আক্তার (২৫) নামে এক গৃহবধূকে দিনদুপুরে পিটিয়ে ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে টিপু সুলতান (৩০) নামে তার স্বামী। রোববার (১৪ এপ্রিল) উপজেলার চরচৌগাছি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত টিপু সুলতান দ্বারিয়াপুর নতুনপাড়ার গোলাম মোস্তফা বিশ্বাসের ছেলে। নিহত গৃহবধূ মনিকা আক্তারের পিতা মাজেদ শেখ বাদী হয়ে টিপু সুলতানকে প্রধান আসামি করে ৪ জনের নামে শ্রীপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
জানা গেছে, তিন বছর আগে লেখাপড়ার সূত্রে টিপু সুলতানের সঙ্গে মনিকা আক্তারের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুই বছর আগে তারা পালিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের বিষয়টি টিপুর পরিবারের কাছে গোপন রাখা হলেও মনিকার পরিবারসহ চরচৌগাছি গ্রামের সবাই জানতেন। টিপু তার পরিবারের কাছে বিয়ের বিষয়টি গোপন রেখে শ্বশুর বাড়িতে প্রতিনিয়তই যাতায়াত করত। এবং স্বামী-স্ত্রী হিসেবে উভয়ই চলাচল করত। এভাবে কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর টিপুর পরিবার বিয়ের বিষয়টি জেনে যায়। এবং মনিকাকে ত্যাগ করতে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। একপর্যায়ে টিপু সুলতার তার পরিবারের চাপে এবং পিতামাতা ও বড় ভাইদের সম্মতিতে একই উপজেলার ঘাসিয়াড়া গ্রামে নাজমীম খাতুন (১৮)কে পারিবারিকভাবে বিয়ে করে সংসার করতে থাকে। আর মনিকা আক্তার দরিদ্র পিতা-মাতার পরিবারেই বসবাস করত। টিপু সুলতান দ্বিতীয় বিয়েকে গোপন রেখে মাঝে মধ্যে প্রথম স্ত্রী মনিকার ওখানেও স্বামী হিসেবে বসবাস করত। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই প্রথম ও দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টিও সকলের কাছে প্রকাশ পেয়ে যায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুইবধূ একদিকে মনিকা অপরদিকে নাজমীমের মধ্যে টানপোড়েন শুরু হয়ে যায়। তখন থেকেই বিভিন্নভাবে মনিকার ওপর শারীরীক ও মানসিক নির্যাতন করতে শুরু করে। একপর্যায় টিপু সুলতান তার জীবন থেকে মনিকাকে চিরতরে সরিয়ে দিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা আটতে থাকে। গত বৃহস্পতিবার ঈদের দিন থেকে সে প্রথম স্ত্রী হিসেবে মনিকাদের বাড়িতেই রাতদিন থাকতে শুরু করে। মনিকাকে হত্যার নীল নকশা মনে মনে আঁকতে থাকে। ১৪ এপ্রিল রোববার শুভ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কিছু নতুন কাপড়-চোপড় কেনা-কাটা ও বিনোদনের প্রলোভন দেখিয়ে স্ত্রী মনিকাকে শ্বশুর থেকে ওইদিন সকাল ১০টার দিকে মোটরসাইকেল যোগে বের হয়ে যায়। মনিকার মৃত্যু নিশ্চিত হলে টিপু সুলতান মনিকাকে নিহত অবস্থায় শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
শ্রীপুর থানার ওসি শেখ তাসমীম আলম জানান, ঘটনাস্থল থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। লাশটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও টিপু সুলতানকে আটক করতে পারলেই হত্যার মূল রহস্য জানা যাবে। তবে ঘটনার পর থেকেই স্বামী টিপু পলাতক রয়েছেন।