স্ত্রী ও তার পরকীয়া প্রেমিকসহ ৩ জনকে হত্যা, পুলিশ কর্মকর্তার ফাঁসি

Share Now..

কুষ্টিয়ায় স্ত্রী-ছেলে ও স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিককে হত্যা মামলায় এএসআই (বরখাস্ত) সৌমেন রায়কে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক। একই সঙ্গে আসামিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ মো. রুহুল আমীন এ রায় ঘোষণা করেন। পলাতক থাকায় আসামির অনুপস্থিতিতে রায় দেন বিচারক।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৩ জুন দুপুরে কুষ্টিয়া শহরের কাস্টমস মোড় এলাকায় এএসআই সৌমেন রায় আকস্মিক ছুটে যান। এরপর একটি বিকাশের দোকানের সামনে দাঁড়ানো স্ত্রী আসমা খাতুন (২৫), আসমার দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে রবিন (৫) ও আসমার পরকীয়া প্রেমিক শাকিলকে (২৮) সরকারি অস্ত্র দিয়ে গুলি চালিয়ে প্রকাশ্য-দিবালোকে হত্যা করেন।

হত্যাকাণ্ডের পরপরই এলাকাবাসীর সহয়তায় কুষ্টিয়া মডেল থানার পুলিশ এএসআই সৌমনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে। পরবর্তীতে সৌমেন চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হন। চাঞ্চল্যকর এই হত্যায় নিহত আসমা খাতুনের মা হাসিনা বেগম বাদী হয়ে এএসআই সৌমেন রায়কে একমাত্র আসামি অন্তর্ভুক্ত করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করেন।

এরপর সৌমেন কুষ্টিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক নিশিকান্ত সরকার ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট সৌমেনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। আদালতে মামলাটি সন্দাহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক সৌমেনকে মৃত্যদণ্ডসহ এক লাখ টাকা জরিমানা করেন।

এর আগে ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে জামিন পান সৌমেন। এর তিন মাস পর নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ থাকলেও তা উপেক্ষা করে তিনি আত্মগোপন করেন। আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সৌমেন এখনও পলাতক।

এদিকে সৌমেনের ফাঁসির আদেশে মামলার বাদী হাসিনা বেগম সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি পলাতক সৌমেনকে গ্রেপ্তার করে ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) অনুপ কুমার নন্দী রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে জানান, সাক্ষ্য-প্রমাণে আদালতে মামলাটি প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক একমাত্র আসামি সৌমেনকে ফাঁসির দণ্ড দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানায় কর্মরত অবস্থায় একটি মামলাকে কেন্দ্র করে এএসআই সৌমেনের সাথে আসমার পরিচয় হয়। পরে তাদের মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে সৌমেন রায় ধর্মান্তরিত হন এবং নিজের নাম রাখেন মো. সুমন হোসেন। পরবর্তীতে মুসলিম শরিয়া অনুযায়ী আসমাকে বিয়ে করেন। সৌমেন আসমার তৃতীয় স্বামী ছিলেন। বিয়ের পর দ্বিতীয় পক্ষের ছেলেসহ আসমা কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়াপাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। কিন্তু এএসআই সৌমেন কুমারখলী থেকে খুলনার ফুলতলা থানায় বদলি হওয়ার পর স্ত্রী আসমা বিকাশকর্মী শাকিলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। পরকীয়া সস্পর্কের কারণেই আক্রোশবশত এএসআই সৌমেন স্ত্রী আসমা, আসমার দ্বিতীয় স্বামীর ছেলে রবিন ও পরকীয়া প্রেমিক শাকিলকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেন। ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত সৌমেন মাগুরা জেলার বাসিন্দা সুনীল রায়ের ছেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *