স্বপ্ন জয়ের গল্প শোনালেন পদ্মা সেতু পারের মানুষ

Share Now..


মাত্র কিশোর বয়স আমার। মুন্সীগঞ্জ পদ্মা নদীর পাড়েই আমাদের বাড়ি। একদিন রাতে ঘুমিয়ে আছি। হঠাৎ শো শো শব্দ। মা ডাকছেন এই সফিউর, ওঠ। ঘুমের চোখে, কেন মা কী হয়েছে? মা বললেন, তোর বাবা এখনো বাড়ি ফেরেনি। বাইরে ঝড়বৃষ্টি। নদীতে প্রবল ঢেউ। আমি ছোট, তবুও বাবার খোঁজে বের হলাম। বাবা-চাচা মিলে নদী পার হয়ে ব্যবসার কাজে ফরিদপুর গেছেন। কিছুক্ষণ পর চাচা চিৎকার দিতে দিতে ফিরে এসে বললেন, আমরা এক নৌকাতেই ছিলাম। হঠাৎ ঝড়ে নৌকা ডুবে গেছে। অনেককেই পাওয়া যাচ্ছে না। তোর বাবারও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তারপর ভোর হলো, সপ্তাহ চলে গেলো, বাবা আর ফিরে এলেন নাদীর্ঘ ৬ যুগ কেটে যেতে দেখেছেন এই বৃদ্ধ সফিউর। দেখেছেন নদীতে আটবার তাদের বাড়ি ভেঙেছে। পদ্মা নদীর অনেক ভয়ঙ্কর ঘটনার সাক্ষী তিনি। ২০১৪ সালের পিনাক ৬ লঞ্চ ডুবির ভয়াবহতা দেখেছেন, সর্বশেষ ২০২১ সালে বাংলাবাজার ফেরিঘাটে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় ২৬ জনের প্রাণহানিসহ অসংখ্য দুর্ঘটনায় স্বজনদের আহাজারি দেখেছেন।

কথা হয় কাওড়াকান্দি ঘাটের হকার আলালের (৫৫) সঙ্গে। তিনি ঝালমুড়ি বিক্রি করতে এসছেন শিমুলিয়া ঘাটে। তিনি বলেন, ‘১৯৯৫-এর পরে একদিন সন্ধ্যার পর আমি ডিম বিক্রি করতে ফেরিতে মাওয়া যাচ্ছি। হালকা বৃষ্টি। মাওয়ার নদীতে যখন ফেরি নিয়ে ঢুকলাম। বাতাস বাড়ছে। কিছুক্ষণ না যেতেই ঝড় শুরু। এগোতে পারলাম না। বাতাসে ফেরি চরের ভেতর নিয়ে গেলো। মনে হচ্ছিল এই বুঝি ফেরি ডুবে যায়। চারপাশে কান্নার রোল পড়ে গেলো।ঝড় থামতে থামতে অনেক রাত। আমরা নৌকায় করে আবার ফিরে আসলাম কাওড়াকান্দি ঘাটে। সেই রাতে মাওয়ার গাঙ্গে গরুর ট্রলার ডুবে দুইজন নিখোঁজ হয়।’

কথাগুলো শুনছিলাম আর চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটি বড় দুর্ঘটনার কথা। জামাল হোসেন, সেই সময় কাজ করতেন গরুর ট্রলারে। ৪ আগস্ট ২০১৪ সাল, কাওড়াকান্দি-শিমুলিয়া নৌরুটের পদ্মা নদীতে আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় পিনাক-৬ নামের একটি লঞ্চ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *