স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে রূপচর্চায় কে-ধারা 

Share Now..

বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে কোরিয়ান বিউটি বা কে-বিউটি। কয়েক বছর ধরেই রূপচর্চায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে কে-ধারা। দেশটির প্রসাধনী পাশাপাশি মেকআপের ধারাটিও পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। 

সাধারণত কোরিয়ানদের স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল ত্বকের জন্য সুখ্যাতি আছে। এর মূল কারণই হচ্ছে কে ধারার-বিউটি। আর তাই দিনদিন রূপচর্চায় কে-ধারার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এ সম্পর্কে বিউটি এক্সপার্টরা মনে করেন বর্তমানে কোরিয়ার পপ কালচার, নাটক, চলচ্চিত্র আর গানের জনপ্রিয়তার কারণেই এ দেশের রূপচর্চার বিষয়টি সবার নজর কেড়েছে। 

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় ‘কে বিউটি: এভরিথিং ইউ ওয়ান্টেড টু নো অ্যাবাউট কোরিয়ান বিউটি, এক্সপ্লেইনড’ শিরোনামের একটি লেখায় কোরীয় রূপচর্চার আদ্যোপান্ত নিয়ে আলোচনা করেছেন কোরিয়ার রূপবিশেষজ্ঞ আলিসিয়া ইয়ুন।

জানা যায়, ১৯ শতকের শেষ দিকে এসে কোরীয় মেকআপ এবং প্রসাধনসামগ্রীর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ১৯২০ সালের দিকে জাপানের প্রসাধনসামগ্রী কোরিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করে। ১৯৫০ সালে জাপানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে বাধা পায় জাপানি প্রসাধনশিল্পের প্রসারণ। আর ১৯৬১ সালের দিকে বিদেশি পণ্য কেনাবেচার ওপর আইনগতভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে কোরিয়ার প্রসাধনী পণ্য জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

কে-ধারার বিউটি সম্পর্কে বিউটি এক্সপার্ট রুমি নাজনীন জানান, ত্বকের বিষয়ে কোরিয়ানরা ত্বকের ক্ষেত্রে  বেশ সচেতন। ত্বক নিয়ে তাদের আগ্রহের জায়গাটাও বেশ ভিন্ন। 

ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য কে- ধারায় চারটি ধাপ অনুসরণ করা হয়। এছাড়া ত্বক পরিষ্কারের জন্যও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ধাপ। এমনকি ত্বকের উজ্জ্বলতা, বলিরেখা নিয়েও বিশেষ সচেতনতা রয়েছে কে-ধারায়। 

বিশেষ করে দেখা যায় রূপচর্চার পণ্য আর পদ্ধতি—দুটোর কারণেই কোরিয়ানরা অনেক বেশি অন্যদের থেকে এগিয়ে আছে।

ত্বকে সমস্যা দেখা দিলেই যে যত্ন নেওয়া শুরু করতে হবে, এমনটাতে বাধ্য নয় কে-ধারার রূপচর্চায়। বরং সময়ের আগেই ত্বককে ভালোবেসে এর প্রয়োজনীয়তা বোঝা উচিত। ত্বক পরিষ্কার এবং আর্দ্র থাকলে অনেক সমস্যার সমাধান কিন্তু এমনিতেই হয়ে যায়। 

সাধারণত দেখা যায়, কোরিয়ার রূপচর্চায় সাধারণত প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহৃত হয় বেশি। আদিকাল থেকে কোরিয়ান রূপচর্চায় ব্যবহার করা হচ্ছে ক্যামেলিয়া ফুল, মুগডাল আর ভাত। ত্বক পরিষ্কার করার পাশাপাশি আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্যও এগুলো ব্যবহার করা হতো। রূপচর্চায় ব্যবহার করা হয় চাল-ধোয়া পানি, অ্যালোভেরা, মাগওয়ার্ট নির্যাস, যষ্টিমধু, বেদানা, বাঁশের নির্যাস, জিনসেং ইত্যাদি।

পাশাপাশি কে-ধারার রূপচর্চায় কমবেশি ১০টি পদক্ষেপ অনুসরণ করা হয়। তবে এতগুলো ধাপ  হলেও করতে কিন্তু কয়েক মিনিটের বেশি লাগে না। আর সব কটিই যে প্রতিদিন করতে হবে, এমনও না। সানস্ক্রিনটি রাতের বেলায় প্রয়োগ করতে হবে না। বাদ বাকি পদক্ষেপগুলো প্রতিদিন দুই বেলাতেই করা যাবে।

তেলভিত্তিক পরিষ্কারক
প্রথমে তেলভিত্তিক পরিষ্কারক দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন। বিশেষ করে যারা মেকআপ করেন নিয়মিত, তাদের জন্য এটা বাধ্যতামূলক। এসপিএফ, মেকআপ এবং আমাদের শরীরে তৈরি নিজস্ব সিবাম তেলভিত্তিক পরিষ্কারকের মাধ্যমেই যাবে। তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীদেরও এই রুটিন অনুসরণ করতে হবে।

পানিভিত্তিক পরিষ্কারক
আর্দ্রতাপূর্ণ পানিভিত্তিক একটি পরিষ্কারকের সহায়তায় আবার চেহারা পরিষ্কার করুন। এতে একদম ভেতর থেকে পরিষ্কার হবে চেহারা। চেহারার ময়লা তোলার সময় জোরে ঘষা যাবে না। আলতো চাপে মালিশ করে ময়লা তোলার কাজটি করতে হবে।

এক্সফোলিয়েট করা
ত্বকের মরা চামড়া উঠিয়ে ফেলা জরুরি। মরা চামড়ার কারণে অনেক সময় অনেক উপকরণ ভালোভাবে ত্বকে প্রবেশ করতে পারে না। আপনার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোষের প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায় এবং মৃত কোষ ত্বকে ব্রেকআউট বাড়ায়, কমিয়ে আনে উজ্জ্বলতা। আপনার এক্সফোলিয়েটরের ওপর নির্ভর করে সপ্তাহে দুই দিন না, প্রতিদিন ত্বক এক্সফোলিয়েট করবেন।

টোনার
চতুর্থ পদক্ষেপে টোনার ব্যবহার করতে হবে। টোনার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি আর্দ্রতাও নিয়ে আসবে। দুই ধাপে ত্বক পরিষ্কার করার সময় ত্বকের রোমকূপ খুলে যায়, টোনার সেই রোমকূপকে বন্ধ করে বজায় রাখে ত্বকের ভারসাম্য।

প্রয়োজন নির্যাস
এই ধাপে আপনার ত্বকের সঙ্গে মানায়, এমন এসেন্স ব্যবহার করতে পারেন। এসেন্স বা নির্যাস ত্বকে যোগ করে আর্দ্রতা। পাশাপাশি বাদ বাকি রুটিনের জন্যও ত্বককে তৈরি করে। ত্বককে স্পঞ্জের মতো ভাবতে পারেন। এটি যখন আর্দ্রতা পাবে, তখন ভাঙবে না। পাশাপাশি শোষণ করে নেবে অন্যান্য উপকরণ। এসেন্সগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়, যেন সেগুলো দ্রুত ত্বকের গভীর স্তরে গিয়ে সে জায়গার তৃষ্ণা মেটায়।

এসপিএফ
কোরিয়ার রূপচর্চায় এটি আবশ্যক ধাপ। দিনের বেলায় রোদ থাকুক আর না–ই থাকুক, সানস্ক্রিন ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। বলিরেখা বলুন কিংবা ত্বকের ওপর কড়া রোদের নেতিবাচক প্রভাব আটকানো বলুন, দুর্দান্ত কাজ করে সানস্ক্রিন। এই জিনিসের অভ্যাস না থাকলে করে ফেলুন।

শিট মাস্ক
শিট মাস্ক ত্বকে আর্দ্রতা যোগ করতে সহায়তা করে। এটি ব্যবহারের পর মুখ ধোয়ার ঝামেলাও নেই। কোরিয়ায় অনেকে প্রায় প্রতিদিন এই পণ্য ব্যবহার করেন। কোনো অনুষ্ঠানের আগে ১৫-২০ মিনিট ব্যবহার করলেই চেহারায় চলে আসে ইতিবাচক পরিবর্তন। শিট মাস্ক ব্যবহারের পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ভালো। এতে শিট মাস্কের গুণাবলিসহ আর্দ্রতা ধরে রাখা যাবে চেহারাতেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *