স্মৃতিধন্য চুয়াডাঙ্গার কাজী নজরুলের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী পালন

Share Now..

\ চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি \
স্মৃতিধন্য চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী পালন করা হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ৯ টার সময় কার্পাসডাঙ্গা মিশন পল্লী আটচালা ঘর কবির স্মৃতিতে পুষ্প মাল্য অর্পন, দোয়া মাহফিল এবং বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০ টার সময় কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড.কিসিঞ্জার চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা ২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য হাজী মোঃ আলী আজগার টগর। এসময় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আলী মুনছুর বাবু, বিশেষ বক্তা ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক নজরুল গবেষক ড. মুন্সি আবু সাইদ, আটচালা ঘরমালিকের ছেলে প্রকৃত বিশ্বাস, কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহি অফিসার রোকসানা মিতা। এছাড়াও সরকারি কর্মকর্তা ও সুধীজন এবং নজরুল প্রেমী উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর অনেক স্মৃতি রয়েছে চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গায়। তিনি একাধিকবার এসেছেন এখানে। এখানে বসে তিনি লিখেছেন ছড়া, কবিতা-গান। কার্পাসডাঙ্গায় এসে তিনি যে ঘরে থাকতেন, কবির স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ঘরটি সেভাবেই রাখা হয়েছে। প্রতি বছর চুয়াডাঙ্গার কার্পাডাঙ্গায় কবির জন্মদিন জাতীয়ভাবে পালন করা হচ্ছে। এখানে নজরুল কমপ্লেক্স তৈরির কাজটিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কার্পাসডাঙ্গায় দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্বপরিবারে বসবাস করে গেছেন। জানা গেছে কোলকাতার আর্মহাস্ট স্ট্রিটে বসবাসকালে কবি নজরুলের সঙ্গে একই এলাকার বাসিন্দা বৈদ্যনাথ বাবু, হর্ষপ্রিয় বিশ্বাস ও মহিম বাবুর সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। সেই সুবাদে তাদের আমন্ত্রনে ইংরেজি ১৯২৬ ও ১৯২৭ সালে পর পর দু’বার নদীপথে কবি নজরুল স্বপরিবারে কার্পাসডাঙ্গায় এসেছিলেন। সঙ্গে আসা স্ত্রী প্রমিলা, দু’পূত্র সব্যসাচী ও বুলবুল এবং শাশুড়ী গিরিবালাকে সঙ্গে নিয়ে কবি উঠেছিলেন বর্তমান কার্পাসডাঙ্গার মিশনপাড়ার হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের বাগান বাড়ীর একটি আটচালা খড়ের ঘরে। এ ঘরটি এখনও বিদ্যমান। বর্তমানে উত্তরাধিকার সূত্রে এ ঘরটিতে হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের পূত্র প্রদ্যুত কুমার বিশ্বাসের ছেলেরা স্বপরিবারে বসবাস করছেন। কবি নজরুলের কার্পাসডাঙ্গায় আসার মুল কারন ছিল স্বদেশী আন্দোলন। সে সময় নজরুল ইসলাম কার্পাসডাঙ্গায় স্বদেশী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত গোপনে বৈঠক করতেন। দিনের বেলা কবি ঝাউগাছের নিচে বসে গান শেখাতেন স্বদেশী আন্দোলনের নেতা মহিম সরকারের দু’কন্যা আভারানী সরকার ও শিউলীরানী সরকারকে। তারা ছিল কবির গানের ছাত্রী। অবসরে বর্তমান খৃষ্টান মিশনারী চার্চের পিছনে ভৈরব নদের পাড়ে সান বাঁধানো ঘাটের সিঁড়িতে বসে নিমগাছের ছায়াতলে তিনি এ অঞ্চলের হিন্দু-মুসলমানদের সে সময়ের চরম দারিদ্র্যের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে ‘মৃত্যক্ষুধা’ রচনা করেন। এ সময় অনতিদুরে ঝাঁউ গাছের খোঁড়লে একটি গোখরো সাপ টিয়া পাখির বা”চা খেতে গাছে উঠলে পাড়ার ছেলেরা সাপটিকে পিটিয়ে মারে। এতে কবি ছেলেদের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে এখানে বসে রচনা করেন ‘পদ্মগোখরো’ কবিতা। তাছাড়াও উল্লেখযোগ্য, কবির ‘লিচু চোর কবিতার অংশবিশেষও এই কার্পাসডাঙ্গার বাবুদের তাল ও লিচু বাগানকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছিল বলে জানা গেছে। নদীতীরের সে সানবাঁধানো সিড়ির অবশিষ্ট ধ্বংশপ্রায় ৪টি ধাপ নদীপাড়ের জঙ্গলের মধ্যে এখনও বর্তমান।এই সিঁড়ির পাশে এবং যে ঝাউ গাছের নিচে বসে কবি গান শেখাতেন সেখানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে একাধিক স্মৃতি ফলক স্থাপন করা হয়েছে। কবি নজরুলের স্মৃতি ধরে রাখতে ১৯৯০ সালে কার্পাসডাঙ্গায় নজরুল স্মৃতি সংসদ গঠন করা হয়। কার্পাসডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ভৈরব নদ। পাশেই ছিল চার্চ অব বাংলাদেশের অফিস। যা এখনো আছে। কবি এখানে ঘুরেছেন-বসেছেন। ভৈরবের তীরে বসে তিনি লিখেছেন অনেক গান। কবি কার্পাসডাঙ্গায় অবস্থানকালে পদ্মগোখরো লিখেছেন। ভৈরবের তীরে বসে লিখেছেন গান কোন কুলে আজ ভিড়লো তরি…। কবি যে আটচালা ঘরে থাকতেন সেই ঘরে এখন বসবাস করেন মহিম চন্দ্রের নাতি প্রকৃতি বিশ্বাস বকুল। শুধু কবির স্মৃতি ধরে রাখার জন্য আটচালা সেই ঘরটি আধুনিকায়ন করা হয়নি। সেভাবেই রাখা হয়েছে। ভৈরব নদীর তীরে চার্চ অব বাংলাদেশের স্কুল ও হাসপাতাল এলাকায় কবি যেখানে ঘুরে বেড়িয়েছেন সেসব স্থানে স্মৃতি ফলক তৈরি করা হয়েছে কবির সম্মানে। প্রতিবছর নানা আনুষ্ঠানিকতায় চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গায় কবির জন্মদিন পালন করা হয়। এবছরও কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগীতায় এবং জেলা প্রশাসন চুয়াডাঙ্গার উদ্যোগে দু দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনা শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *