হবু মায়ের পোশাক

Share Now..

মাতৃত্বের অনুভূতি জীবনকে পাল্টে দেয়। মাতৃত্বকালীন সময়টাতে মানসিক ও দৈহিক উভয় পরিবর্তন আসে। এ সময় দরকার হয় বাড়তি যত্নের। কারণ এই সময় দেহের ভেতর ছোট্ট আরেকটি দেহ আরেকটি প্রাণ বেড়ে ওঠে। 

গর্ভাবস্থায় মায়ের শারীরিক পরিবর্তনগুলোর জন্য দৈনন্দিন জীবনটাও হয়ে উঠে একটু অন্য রকম। গর্ভধারণের ৩ মাস পর থেকেই শারীরিক পরিবর্তনের কারণে পোশাক নিয়ে হবু মায়েদের পড়তে হয় খানিকটা সমস্যায়। যদিও ভাই এটা সমস্যা না এটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এ পরিবর্তনটা একেবারেই অন্যরকম। আগের পোশাকগুলো আর আরামদায়ক মনে হয় না সেইসঙ্গে আঁটসাঁট হয়। মাতৃত্বকালীন সময়ে আরামটাই মুখ্য হয়ে ওঠে। আর সে অনুযায়ী পোশাক দরকার হয় তখন।আবার কর্মজীবী হবু মায়েরা পোশাক নিয়ে আরও বেশি বিড়ম্বনায় পড়েন। যেহেতু বাইরে যেতে হয়, আরামের সঙ্গে ফ্যাশনের বিষয়টিও সমন্বয় করতে চান তারা। এছাড়া কর্মজীবী মায়েদের পোশাক ও দরকার হয় বেশি কারণ এই সময় চাইলেও প্রতিদিন পোশাক ধোঁয়ার মতো অবস্থা থাকে না।  তাই সেইজন্য পোশাকের ক্ষেত্রে  ফ্যাশনের পাশাপাশি ব্যয়ের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। কেমন হবে হবু মায়ের পোশাক
গর্ভকালে শারীরিক পরিবর্তন প্রতিদিন আসে , তার সাথে আসে দৈনন্দিন জীবনের ছন্দে আসে পরিবর্তন। শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, কুর্তি, গাউন বা নিজের স্বাচ্ছন্দ্য অনুসারে অন্য যেকোনো পোশাকই পরা যাবে এ সময়। তবে তা যেন ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। কাপড়ের ক্ষেত্রে সুতি, ভিসকস, লিলেনের মতো আরামদায়ক কাপড়কে প্রাধান্য দিতে পারেন। এই সময় অন্যান্য কাপড়ের তৈরি পোশাক না পরাই ভালো, এতে করে  অস্বস্তি তৈরি করে। গর্ভকালীন সময়ে একজন মায়ের শরীরের গরম লাগার মাত্রা অনেক অংশে বৃদ্ধি পায়। গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের স্বাভাবিকভাবেই শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়। তাই  পোশাক পরার ক্ষেত্রে একটি সচেতন থাকতে হবে। 

ঢোলা প্যান্ট, পালাজ্জো, ঢোলা পায়জামা পরতে পারেন। এই সময় সালোয়ারে ইলাস্টিকের বদলে ফিতা ব্যবহার করা ভালো, এতে করে পেটে চাপ লাগবে না। জিন্স বা অন্যান্য প্যান্ট পরতে চাইলে খুব আঁটসাঁট নয়, ঢিলেঢালা পরার চেষ্টা করবেন। তবে প্রথম এক মাস থেকে পাঁচ মাস পর্যন্ত জিন্সের প্যান্ট পরা গেলেও এর পরে তা অনেকটা অস্বস্তির কারণ হয়ে ওঠ। আজকাল হবু মায়েদের জন্য আলাদা বটমওয়্যার পাওয়া যায়। হবু মায়দের কথা চিন্তা করি সেই বটমওয়্যার গুলো তৈরি করা হয়। সেগুলো বেছে নিতে পারেন অথবা কাপড় কিনে সেভাবে বানিয়েও নিতে পারেন। গর্ভকালীন অবস্থায় হবু মায়ের স্বাস্থ্য পরিবর্তনশীল তাই যেকোনো পোশাক নেওয়ার ক্ষেত্রেই ২-৩ ইঞ্চি বেশি ঢিলা নেওয়া উচিত।

হবু মায়েদের পোশাকে আরামের বিষয়টি প্রাধান্য পেলেও, ফ্যাশনের বিষয়টি মাথায় রেখেও কিন্তু সেটি করা সম্ভব। হলিউড বা বলিউড তারকাদের মাতৃত্বকালীন বিভিন্ন পোশাক দেখলেই কিন্তু সেটি বোঝা যায়। 

শাড়ির ক্ষেত্রে হালকা কাপড়ের আরামদায়ক শাড়ির অথবা সুতির শাড়ি  বেছে নিতে পারেন। সাথে ঢিলেঢালা ধরনের কোনো স্টাইলিশ ব্লাউজ। সালোয়ার-কামিজ বা কুর্তির ক্ষেত্রে পেটের অংশটায় যথেষ্ট জায়গা থাকে বা চেপে থাকে না এমন বেছে নিন। মাতৃত্বকালীন সময়ে অন্যতম একটি  ভালো পছন্দ হতে পারে গাউন। গাউন পোশাক হিসেবে যতটা ফ্যাশনেবল ঠিক ততটাই আরামদায়ক। এই সময়ে ফ্যাশনের থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ নিজের আরামকে প্রাধান্য দেওয়া। 

এ সময় ফ্যাশনেবল আরেকটি পোশাক হতে পারে ঢিলেঢালা কাফতান। কাফতান যেমন ফ্যাশনসই অন্য দিক থেকে আরাম স্বস্তিতে ভরপুর। বিয়ের দাওয়াত যে কোন সময় আসতে পারে গর্ভবতী মায়েদের সাবধানে থাকতে হবে তাই বলে বিয়ের দাওয়াত খেতে যাবে না এমনটা তো হয় না। তবে এখানেও পোশাকের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। অস্বস্তি ও দুর্ঘটনা এড়াতে খুব ভারি কাপড়ের পোশাক ও শাড়ি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। অন্তর্বাস নির্বাচন
এই সময় অন্তর্বাস নির্বাচনে একটু খেয়াল রাখতে হবে কারণ শরীরের একটা পরিবর্তন আসে প্রতিদিনই।  সুতি অন্তর্বাসকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত এইসময়। দীর্ঘক্ষণ আঁটসাঁট ভারি অন্তর্বাস যেমন এই সময় অস্বস্তি লাগবে, তেমনি ল্যাকটেশনে বাধা সৃষ্টি করবে। অন্তর্বাস কিনার ক্ষেত্রে একটু ঢিলেঢালা অন্তর্বাস নেওয়াই ভালো। 

হবু মায়ের জুতা
শখের প্রিয় উঁচু হিল জুতা গুলো  কিছু মাসের জন্য তোলা থাকুক। হিল জুতা পরার কারণে অনেক সময় অনেক ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এছাড়াও হিল জুতা পরে গর্ভবতী অবস্থায় হাঁটাচলা করাটা মোটেও ঠিক কাজ নয়। গর্ভাবস্থায় ৬ মাসের পর অনেক মায়ের পায়ে পানি জমতে পারে। সেক্ষেত্রে আঁটসাঁট জুতা না পরে স্লিপার বা নরম আরামদায়ক জুতা নির্বাচন করতে পারেন। শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে এ ধরনের জুতোকে প্রাধান্য দেওয়া দরকার।

কোথায় পাবেন ম্যাটারনিটি পোশাক
একটা সময় ছিল হবু মায়েদের জন্য পোশাক মানেই বড় সাইজের পোশাক বোঝানো হতো। মায়েদের জন্য আলাদাভাবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হতো না। তবে এখন দৃশ্যপট পাল্টেছে। বিভিন্ন বুটিক হাউজ বিশেষ নজর দিচ্ছে মায়েদের পোশাকে। আড়ং,  হবু মায়েদের পোশাকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অনলাইন এখন সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হবু মায়েদের পোশাক কেনাকাটা করার জন্য।  অফিসগামী মায়েদের জন্য ফ্যাশনেবল ও আরামের পোশাকের সমাহার রয়েছে সেখানে, যা আঁটসাঁট হয়ে থাকে না বলে অস্বস্তির কারণ হবে না। ঘুমানো, বিশ্রাম বা ঘরে পরে থাকার মতো ম্যাটারনিটি পোশাকও মিলবে এখানে।

তাছাড়া মৌচাক মার্কেট, মিরপুর, উত্তরা মার্কেট, গাউছিয়া,নিউ মার্কেটে পাওয়া যাবে বিভিন্ন কাফতান আর ম্যাক্সি, যেগুলো দামও নাগালের মধ্যে। আর আপনি যদি মনে করেন নিজে গজ কাপড় কিনে, লেস  দিয়ে নিজে ডিজাইন করে বানিয়ে নিতে পারেন আরামদায়ক জামা। এতে করে নিজের পছন্দ স্বাচ্ছন্দ্য ও ফ্যাশন তিনটাই মন মত হল। 

দরদাম
আড়ং ম্যাটারনিটিতে হবু মায়েদের পোশাক মিলবে ৮০০-৫০০০ টাকার মধ্যে। বাসায় পরার ম্যাক্সি ৭৫০ থেকে ১৮৫০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। তাছাড়া অন্যান্য বুটিক হাউজগুলোতে পোশাক মিলবে ১ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ এর মধ্যেই। তবে বর্তমানে অনলাইন হবু মায়েদের পোশাক কেনার জন্য অন্যতম মাধ্যম।  কারণ অনলাইনে আরাম এবং ফ্যাশন দুটোর কথা চিন্তা করেই মানানসই ম্যাটারনেটি পোশাক বানানো হয়। অনলাইনে হবু মায়ের বিভিন্ন কুর্তি, টপ পাবেন ১০০০-৪০০০ টাকার মধ্যে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *