হরিণাকুন্ডুতে আলোক মোল্লার গরুর পাল খাওয়ান সম্পুর্ন দেশী খাবার
আসিফ কাজল, ঝিনাইদহঃ
খামারে নয়, সনাতন নিয়মে গ্রামের মাঠে মাঠে গরু চরিয়ে সাফল্য পেয়েছেন আলোক হোসেন মোল্লা। মাত্র একটি গরু থেকে এখন তার পালে ৭৯টি গরু। ঘর বাড়ি, উঠোন ও গোয়াল জুড়ে শুধু গরু আর গরু। প্রথমে দেখলে মনে হবে ছোটখাটো গরুর হাট। ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার হরিশপুর গ্রামের ইসারত মোল্লার ছেলে আলোক হোসেন মোল্লার দিন কাটে মাঠে মাঠে। গরুর যত্ন করতে গিয়ে ৪৭টি বসন্ত পার করেছেন, কিন্তু সংসার করতে পারেননি। সম্পুর্ন দেশি খাবার খাওয়ায়ে (বিচুলি, খড় ও মাঠে চরিয়ে) গরু লালন পালন করেন আলোক। গরু পালন করে করেছেন সহায় সম্পত্তি ও ব্যবসা। গ্রামে তৈরী হয়েছে ফ্ল্যাট বাড়ি। বড় ভাই সলোক মোল্লা স্থানীয় জোড়াদহ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য। আর ছোট ভাই পলক হোসেন মোল্লা করেন সারের ব্যবসা। ছোট ভাই পলক হোসেন মোল্লা জানান, ছোট বেলায় তাদের বাড়িতে হালের গরু ছাড়া একটি মাত্র গাভি গরু ছিলো। পিতার মৃত্যুর পর ২০০৪ সাল থেকে গরু পালন শুরু করেন। সেই যে যাত্রা শুরু, এখন তাদের বাড়িতে ৭৯টি গরুর বড় একটি পাল। বছর শেষে ১০/১২টি করে গরু বিক্রি হয়, যা থেকে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা আসে। তাছাড়া সারা বছর সংসারে দুধের যোগান হয় গরু থেকেই। গরুর প্রধান প্রতিপালক আলোক হোসেন মোল্লার সঙ্গে কথা হয় হরিণাকুন্ডু উপজেলার গোপিনাথপুর মাঠে। তাঁর ভাষ্যমতে, গরু তাদের সংসারে আশির্বাদ স্বরুপ। গরু বিক্রির টাকা দিয়ে মাঠে ১৬ বিঘা জমি কিনেছেন। ছোট ভাইয়ের ব্যবসায় দিয়েছেন ৩০ লাখ টাকা। সংসারের বেশির ভাগ খরচ আসে গরু বিক্রি থেকে। তিনি জানান, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তিনি নিজ গ্রাম ছাড়াও আশপাশ গ্রামে গরু চরিয়ে বেড়ান। তার কোন সহযোগী রাখাল নেই। ফলে গরু পালন করা এখন খুবই কষ্টকর। এই বিরাট গরু পালন রক্ষনাবেক্ষন করতে গিয়ে আর বিয়ে শাদী করা যায়নি বলেও আলোক হোসেন জানান। হরিশপুর গ্রামের কলেজ ছাত্র সজল হোসেন জানান, এতো বড় গরুর পাল তাদের এলাকায় নেই। আধুনকি সুযোগ সম্পন্ন খামার ব্যাতিত মাঠে মাঠে গরু চরিয়ে ওই পরিবারটি এলাকায় দৃষ্টন্ত স্থাপন করেছেন। স্থানীয় জোড়াদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবু জানান, আলোক হোসেন আমার বাল্য বন্ধু। তার আরেক ভাই সলোক ইউপি সদস্য। তারও ২০টি গরু আছে। দুই ভাই মিলে গরু পালন করেন। তিনি বলেন ছোটবেলা থেকেই বন্ধু আলোক হোসেন গরু পালন করে। সম্পুর্ন দেশি খাবার খাওয়ায়ে এতো বড় গরুর পাল গড়ে তুলেছে তারা। তিনি বলেন, প্রতি বছর পরিবারটি ৩০ লাখ টাকার গরু বিক্রির পরও কোটি টাকা মুল্যের গরু সব সময় মজুদ থাকে। বর্তমান ৩০টি গরু গাভিন এবং দ্রুত বাচ্চা হবে বলেও চেয়ারম্যান জানান। বিষয়টি হরিণাকুন্ডু উপজেলা প্রাণী সম্পাদ কর্মকর্তা ডাঃ উজ্জল কুমার কুন্ডু জানান, ঘটনা জানার পর অফিস থেকে গরু প্রতিপালককে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রাণী সম্পদ বিভাগের অনেক সেমিনারে তারা অংশ গ্রহনও করেন। অফিস থেকে গরুর কৃমিনাশক ট্যবিলেটসহ নানা উপকরণ দেওয়া হয়। তিনি জানান, করোনাকালীন সময়ে দুই ভাইকে সহায়তা হিসেবে ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। এই পরিবারটি হরিণাকুন্ডুর সম্পদ বলেও প্রাণী সম্পাদ কর্মকর্তা ডাঃ উজ্জল কুমার কুন্ডু উল্লেখ করেন।
Explore new worlds and become a gaming legend Lucky Cola