হরিণাকুন্ডু পৌরসভার সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে নিয়োগবানিজ্য দুর্নীতি সাক্ষর জালের অভিযোগ

Share Now..


আসিফ কাজল, ঝিনাইদহঃ
ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু পৌরসভার সাবেক মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, পৌর ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ ও সচিবের সাক্ষর জালসহ নানাবিধ অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি দুর্নীতির ১০টি সুনিদ্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছে। অন্যদিকে সাবেক এই মেয়র ও তার চাচাতো ভগ্নিপতি কনজারভেটিভ ইন্সপেক্টর হাবিবুরের বিরুদ্ধে আদালতে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলা হয়েছে। কনজারভেটিভ ইন্সপেক্টর হাবিবুর প্রায় ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক দপ্তর সুত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে সাবেক মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টু দুইটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। সুনিদ্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৭ মে ১৫৭৪ নং স্মারকে চিঠি পেয়ে ঝিনাইদহ স্থানীয় সরকার বিভাগের (ডিডিএলজি) উপ-পরিচালক আবু ইউসুফ মোঃ রেজাউর রহমান তদন্ত করেন। তিনি ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ৩৩৩ নং স্মারকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। কিন্তু প্রতিবেদনে সুস্পষ্ট মতামত না থাকায় ২০২২ সালের ৩১ আগষ্ট ১০০০ নং স্মারকে আবারো জেলা প্রশাসকের বরাবর চিঠি দেয় মন্ত্রনালয়। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম চিঠি পেয়ে ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ ৭০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন ১৯৫ স্মারকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সচিবের কাছে পাঠিয়ে দেন। জেলা প্রশাসকের পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদনে সাবেক মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টু একাধিক দুর্নীতির তথ্য উঠে এসেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “পৌরসভায় ৭টি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে পৌরসভার মাসিক সভায় অনুমোদন গ্রহন করা হয়নি। নিয়োগের ছাড়পত্র গ্রহনের সময় পৌর কর্মচারীদের বেতন ভাতা বকেয়া থাকার পরও বেতন পরিশোধের ভুয়া কাগজপত্র তৈরী ও সচিবের সাক্ষর জাল করে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়। চাকরী প্রদানের নামে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা গ্রহন করার সত্যতা মেলে। এডিপির অর্থ দিয়ে পৌরকর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ করা হতো। পৌর মার্কেটের ভাড়ার টাকা ও হাট বাজারের টাকা যথাযথ খাতে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। যোগ্যতা না থাকার পরও মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টুর আত্মীয় স্বজনদের বিধি বহির্ভুত ভাবে চাকরী প্রদান করা হয়েছে”। এদিকে পৌরসভার প্রায় ৪০ লাখ টাকা নিজের একাউন্টে রেখে আত্মসাৎ করার দায়ে শাহিনুর রহমান রিন্টুর বিরুদ্ধে টাকা উদ্ধারের মামলা হয়েছে। বর্তমান মেয়র ফারুক হোসেন বাদী হয়ে এই মামলা করেন। মামলাটি এখন ঝিনাইদহের একটি আদালতে চলমান রয়েছে। এছাড়া কনজারভেটিভ ইন্সপেক্টর হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধেও আরেকটি মামলা হয়েছে। তিনি বিভিন্ন খাতের টাকা রশিদের মাধ্যমে ৮ লাখ টাকা আদায় করলেও পৌরসভায় জমা না দিয়ে পকেটস্থ করেন। মামলা দায়েরের পর কনজারভেটিভ ইন্সপেক্টর হাবিব চাকরী ছেড়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। হরিণাকুন্ডু পৌরসভার মেয়র ফারুক হোসেন খবর নিশ্চিত করে জানান, সাবেক মেয়র রিন্টু পৌরসভার ৪০ লাখ টাকা নিজের একাউন্টে রেখে খরচ করেন। টাকার জন্য তাগাদা দেওয়া হলে তিনি দুই মাস ও ছয়মাস মেয়াদী দুইটি চেক দেন। কিন্তু তার দেয়া ব্যাংকের চেকে টাকা ছিল না। এই সময়ে তিনি টাকা না দিলে শাহিনুর রহমান রিন্টুর বরাবর উকিল নোটিশ পাঠানো হয়। সাড়া না পেয়ে মামলা করি। মামলাটি এখন চার্জ গঠনের পথে বলেও মেয়র ফারুক হোসেন জানান। আদালতে মামলা ও দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে হরিণাকুন্ডু পৌরসভার সাবেক মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টু বলেন, অভিযোগ সবই মিথ্যা। নিয়োগের বিষয়ে জেলা প্রশাসক নিজেই প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন। তিনি কোন দুর্নীতি বা জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত নয়। তিনি বলেন, বর্তমান মেয়র তার সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ায় তিনিই এ সব মিথ্যা প্রপাগন্ডা ছড়াচ্ছেন বলে মনে করেন।

1,336 thoughts on “হরিণাকুন্ডু পৌরসভার সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে নিয়োগবানিজ্য দুর্নীতি সাক্ষর জালের অভিযোগ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *