হলোকাস্টকে ব্যবহার করছে ইসরায়েল

Share Now..

গাজায় ইসরায়েলের হামলাকে কেবল কিছু শব্দ যেমন বর্বরতা, নৃশংসতা, নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না। এটি এমন এক নিষ্ঠুরতা, যা ইউরোপীয়দের ঔপনিবেশিক আমলের কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যার অভিযোগ বারবার উঠছে। কিন্তু সেই সব অপরাধকে ঢাকতে ইসরায়েল ও তার মিত্ররা নাৎসি জার্মানিতে ঘটা হলোকাস্টকে ব্যবহার করছে।

গাজায় ইসরায়েলের যত নিষ্ঠুরতা

গাজায় প্রতিদিনই মৃত্যুর মিছিল। প্রতিদিনই সংবাদ আসে, ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার, ৭৫০, ৭০০ কিংবা ২৫০ জন ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছে। বারবারই একই সংবাদ পড়ে কারো কাছে হয়তো মনে হতে পারে যে, ফিলিস্তিনের এমন মৃত্যুটাই তো স্বাভাবিক! লেখা কষ্টকর হলেও অনেক ফিলিস্তিনের কাছেও হয়তো এমনটাই মনে হতে পারে, ইসরায়েলের হাতে তাদের মৃত্যুটাই যেন স্বাভাবিক ঘটনা! কেবল হত্যা করেই ক্ষান্ত দিচ্ছে না ইসরায়েলি বাহিনী। নারীদের ধর্ষণ করছে, ফিলিস্তিনিদের আটক করে নগ্ন করছে, তাদের শরীরে প্রস্রাব করে দিচ্ছে। নানা ধরনের ঘৃণিত কাজ করতে বাধ্য করছে। প্রায় তিন মাস ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

এই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার মসজিদ, গির্জা থেকে শুরু করে হাসপাতাল, আশ্রয়শিবিরের মতো স্থাপনাও। চলমান এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত উপত্যকাটির ৭০ শতাংশ ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে ইসরায়েল। গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র আটটি সচল রয়েছে। এই হাসপাতালগুলোতে সাধারণ মানুষ চিকিত্সা নিতে পারছেন। এছাড়া পানি, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গত তিন মাসে গাজায় ২৯ হাজার বা ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টন বোমা ফেলেছে।

ইসরায়েলিদের নির্বিচার এসব বোমা হামলায় গাজা উপত্যকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ধসে পড়া ভবনের নিচে এখনো ৭ হাজারের বেশি মানুষ আটকা পড়ে আছেন। তারাও ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন বলে শঙ্কা করা হয়। কেবল হত্যা কিংবা আহত করা নয়, হত্যার পর কবর থেকে অনেক ফিলিস্তিনির লাশ তুলে নিয়ে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও নিয়ে যাচ্ছে বর্বর ইসরায়েলি বাহিনী। যদিও এই বাহিনীকেই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব বিশ্বের সবচেয়ে নৈতিক বাহিনী বলে দাবি করে। গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে প্রায় ২১ লাখই বাস্তুচ্যুত। শিশুদের একাংশ এতিম হয়ে পড়েছে। বাঁচার জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েও মরতে হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের। এসবই ইসরায়েলের অবদান!

হলোকাস্টকে ব্যবহার

ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলি বাহিনীর নিষ্ঠুর কাজের অবদানকে বিশ্ব কখনো ভুলবে না। ইসরায়েল এবার এত বড় ইতিহাস তৈরি করছে যে, ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে জন্মের পর এত বড় নৃশংসতা বিশ্বকে দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে ইসরায়েল। এমনকি ইউরোপের বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ তাদের ঔপনিবেশগুলোতে যে নিষ্ঠুরতা চালিয়েছিল তাকেও হার মানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই বর্বরতার মধ্যেই বিশ্বের কিছু পণ্ডিত ইসরায়েল এবং তার মিত্রদের আচরণ দেখে হলোকাস্ট এবং ইহুদি বিদ্বেষ নিয়ে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেছেন। সেখানে তারা বলেছেন, ইসরায়েলের ফিলিস্তিনিদের হত্যাকে বৈধতা দিতে হলোকাস্ট এবং ইহুদি বিদ্বেষকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা কিছু উদাহরণও তুলে ধরেছেন।

জাতিসংঘে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত গত অক্টোবরে নিরাপত্তা পরিষদে ভাষণকালে তার বুকে একটি হলুদ তারকা ধারণ করেন। তিনি যতক্ষণ না সংস্থার সদস্যরা হামাসের নৃশংসতার নিন্দা না করছে ততক্ষণ ব্যাজটি পরার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রদূত এরদান ‘অহংকারের প্রতীক হিসেবে’ তারকা পরেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, হামাসের নৃশংসতার নিন্দা না জানানো পর্যন্ত তিনি তারকা পরিধান করবেন। নিরাপত্তা পরিষদে ভাষণদানকালে নেতানিয়াহু বলেন, হামাস হচ্ছে নতুন নািস বাহিনী। তিনি বলেন, বর্বরতা রুখতে পশ্চিমা সভ্যতার জন্যই এই হামলা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, হামাস যে বর্বর আচরণ করেছে তা কেবল হলোকাস্টের সঙ্গেই তুলনা করা যায়। ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগও হলোকাস্টের কথা স্মরণ করে বলেন, গাজায় কোনো নির্দোষ মানুষ নেই। এমনকি ইসরায়েল ইহুদি বিদ্বেষ বা জায়নবাদ বিরোধিতাকেও ব্যবহার করছে। কেবল ফিলিস্তিনে নয়, ইহুদি বিদ্বেষের কথা বলে বিশ্বের অনেক দেশেই মুসলিমদেরকে নির্যাতন বা তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ধারণা করা হয়, জার্মানির অ্যাডলফ হিটলার ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছে। যদিও সংখ্যা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। মূলত যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার তথ্য ঢাকতে ইসরায়েল ও তার মিত্ররা হলোকাস্টকে ব্যবহার করছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের ওপর চালানো গণহত্যা। হিটলারের নেতৃত্বে নািস পার্টির পরিচালনায় জার্মান নািস সামরিক বাহিনী ইউরোপের তদানীন্তন ইহুদি জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বেশি অংশকে এবং আরো কিছু সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বন্দি শিবির ও শ্রম শিবিরে নির্বিচারে হত্যা করে। আনুমানিক ৬০ লাখ ইহুদি এবং আরো অনেক সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর মানুষ প্রাণ দেয়। যদিও সংখ্যা নিয়ে নানা মুনির নানা মত আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *