হামলার বিচার চেয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, ইবিতে ফটক অবরোধ

Share Now..

\ ইবি প্রতিনিধি \
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আশিক ইকবাল সাদ ও অনিকা আশরাফী নামের দুই শিক্ষার্থীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে অতর্কিত হামলার অভিযোগ উঠেছে অন্য কয়েক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। সোমবার (৭ অক্টোবার) বিকেল চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে এই ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় নিজেই হামলার শিকার হয়েছেন বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন মার্কেটিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মোরসালিন মুন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) হামলার বিচার ও নিরাপত্তা ও মিথ্যা অপবাদের বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর পাল্টাপাল্টি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উভয়পক্ষ। এছাড়া এদিন দুপুর দুইটায় এবং চারটায় হামলার প্রতিবাদে ও বিচার চেয়ে প্রধান ফটক অবোরোধ করে মানববন্ধন করে উভয় পক্ষের সহপাঠীরা। জানা যায়, গত সোমবার বিকেল চারটায় ক্যাম্পাসের বাসে সাদ, অনিকা ও মোরসালিন মুন কুষ্টিয়া ফেরার সময় এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষই নিজেদের ভুক্তভোগী বলে দাবি করেন। এসময় অনিকা, সাদ ও মোরসালিন আহত হয়েছেন। এতে অনিকার হাতে প্রচÐ রক্তক্ষরণ হয়। তবে এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি শাখার সহ-সমন্বয়ক ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-২৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী গোলাম রব্বানীকে ঘটনার মূল হোতা বলে অভিযোগ করেছেন সাদ ও অনিকা। এদিকে এ ঘটনার সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন সহ-সমন্বয়ক গোলাম রব্বানী। ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার চেয়ে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবার) দুপুর দুইটায় প্রধান ফটক অবরোধ করে মানববন্ধন করে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এসময় প্রায় আধাঘন্টা ফটক অবরোধ করে রাখেন তারা। এদিকে একই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার চেয়ে বিকেল চারটায় ফটক অবরোধ করে আন্দোলন করেন গোলাম রব্বানী ও মুরসালীনের সহপাঠীরা। এসময় তারা প্রায় ২০ মিনিট ফটক অবরোধ করে রাখেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েন দুপুর দুইটা ও বিকেল চারটার বাসে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ গামী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে প্রক্টরের আশ্বাসে উভয় পক্ষ ফটক খুলে দেয়। সাদ ও অনিকার লিখিত অভিযোগ সূত্রে, বাসে ফেরার সময় মোরসালিন মুনসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন সাদের মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করে। এতে অনিকা বাধা দিলে তার হাতে অস্ত্র চালিয়ে দেন। এতে তার প্রচÐ রক্তক্ষরণ হয়। মারধরের সময় তারা মাক্স পরা ছিল। পরে তাদের মাক্স খুলতে গেলে তারা পালিয়ে যায়। মোরসালিনের লিখিত অভিযোগ সূত্রে, পূর্ব শত্রæতার জেরে গত সোমবার বাসে উঠলে সাদের সাথে মোরসালিনের বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে সাদ এবং তার বন্ধু মোরসালিনের উপর আক্রমণ করলে আত্মরক্ষার জন্য তারা মোরসালিনকে প্রতিহত করেন। এতে তার হাত ও পা কাটা যায়। এক পর্যায়ে সাদ ও তার সহযোগীরা মোরসালিনকে ধাওয়া করলে সে বাস থেকে নেমে যায়।
সহ-সমন্বয়ক গোলাম রব্বানী তার লিখিত অভিযোগে বলেন, সোমাবার (৭ অক্টোবার) যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে তাতে আমাকে উড়িয়ে পরিকল্পনাকারী হিসেবে অপবাদ দিয়েছে। অথচ এর সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা ও পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। দুপুর আড়াইটায় বৈষমাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শহীদ আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারতের জন্য আমি ও বন্ধুরা অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু দেরি হওয়ায় সেখানে বন্ধুদের সাথে গল্প করছিলাম। পরে বিকেল চারটার পর আমরা রওনা দেই এবং রাতে শহীদ কবর জিয়ারত করি। পরে ফেসবুকে দেখলাম আমাকে সন্ত্রাসী ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। সমন্বয়ক পরিষদকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। এ বিষয়ে আশিক ইকবাল সাদ বলেন, করোনাকালীন আমি ক্যাম্পাসে আসার পর গোলাম রব্বানীও শেখ সাকলাইনসহ আমাকে সাদ্দাম হলের মাঠে আমাকে র‌্যাগ দেয়। পরে আমার এক বড় ভাউ এর প্রতিবাদ করলে তাকেও তারা ছাত্রলীগ দিয়ে মারধর করেন। তখন থেকে মূলত তারা আমার উপর ক্ষেপে রয়েছে। সেটির জেরেই তারা আমাকে মারধর করেন। এর আগে বিকাল সড়ে ৩ টায় থেকে আমাকে ফলোআপ করা শুরু করেন সহ-সমন্বয়ক গোলাম রব্বানী। এই ঘটনার মূল হোতা সহ-সমন্বয়ক গোলাম রব্বানী। যার যথেষ্ট প্রমাণ আমার কাছে আছে।
আনিকা আশরাফী বলেন, আমি একজন নারী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র (সন্ত্রাসী) দ্বারা এই নর পিশাচ কর্মকাÐের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমি একজন নারী হয়ে এই ক্যাম্পাসকে আমার জন্য ও অন্যান্য নারীদের জন্য নিরাপদ মনে করতে পারছি না। আমি যতটুকু সময় ক্যাম্পাসে অবস্থান করছি পুরোটা সময় আতঙ্কে কাটাচ্ছি। আমি এই শ্লীলতাহানির সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। মোরসালিন মুন বলেন, ২০২০ সালের সিনিয়র-জুনিয়র পরিচয় নিয়ে সাদরা আমাকে ও আমার জেলার বিভিন্ন স্যারকে অপদস্ত করেন। পরে বিষয়টি মিচুয়াল হয়। তবুও তারা আমার বিরুদ্ধে প্রপাগাÐা ছড়াতে থাকে। এর আগে ২০২৪ সালের নীলফামারী জেলা সমিতির ইফতার মাহফিলে শাখা ছাত্রলীগের উপ-মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সাদমান ইরামের সহযোগিতায় বিভিন্ন টোকাই দিয়ে আমাকে ও সেখানে উপস্থিত ৫ ও ৭ জনকে বেদম প্রহার করেন। পরে আমিসহ ৪ জন অসুস্থ হয়ে পড়লে সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসা যাই। এ ঘটনায় সিনিয়রকে মেরে সবচেয়ে অপ্রীতিকর আচরণ করেছেন ২০১৯-২০ শিক্ষবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের সাদ, আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের মারুফ, ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ও আইন বিভাগের জাহিদ হাসান জিতু। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, এই বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের কার্যক্রম চলছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নিব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *