১৬ বছরের ইয়ামালেই ম্যাজিক

Share Now..

ছয় মাসের বাচ্চাকে নিয়ে খেলছিলেন ফুটবলের উদীয়মান তারকা লিওনেল মেসি। এমনকি নিজ হাতে গোসলও করিয়ে দিলেন, তুলে নিলেন কোলে। ২০০৭ সালে ক্যাম্প ন্যুতে মেসি ও লামিন ইয়ামালের সেই ছবি ভাইরাল টপিকে পরিণত হয়েছে। গেল সপ্তাহে ইয়ামালের বাবা ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে দেওয়ার পরেই সেটি বিভিন্ন অঙ্গনে ঘুরছে। ছবিটি যখন তোলা হয়েছিল তখন ইয়ামালের বয়স ছিল ছয় মাস, আর মেসির ২০ বছর। 

১৬ বছর পরে এসে সেই ইয়ামাল আর মেসির যোগসূত্র দেখল ফুটবল বিশ্ব। একই রাতে দুজনে ভিন্ন দুটি টুর্নামেন্টে ম্যাচসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন। ইয়ামাল ফ্রান্সকে হারিয়ে উঠেছেন ইউরোর ফাইনালে, আর মেসি কানাডাকে হারিয়ে কোপার ফাইনালে। তাতে সেই ছবির আকর্ষণ যেন আরও বেড়েছে।

মেসি এখন ক্যারিয়ার সায়াহ্নে রয়েছেন, ইয়ামাল সেখানে সবে যাত্রা শুরু করেছেন। দুদিন পরে তার বয়স ১৬ থেকে ১৭ তে পা দেবে। তার আগে রেকর্ড গড়ে স্পেনকে ফাইনালে তুলেছেন তিনি। তার বিপক্ষে বিধ্বস্ত হয়েছে কিলিয়ান এমবাপ্পে-আঁতোয়া গ্রিজম্যান-অলিভার জিরুরা। 

গেল মঙ্গলবার রাতে ফরাসিদের বিপক্ষে গোল করে রেকর্ড বইয়ে নাম লিখিয়েছেন ইয়ামাল। ইউরো ও বিশ্বকাপ মিলিয়ে সবচেয়ে কম বয়সী ফুটবলার হিসেবে গোল করার কীর্তি এখন তার। ১৬ বছর ৩৬২ দিন বয়সে ইয়ামাল গোল করলেন। স্প্যানিশ এই উদীয়মান তারকা কিংবদন্তি পেলেকে টপকে গেলেন। বিশ্বকাপে ১৭ বছর ২৩৯ দিন বয়সে গোল করে সবচেয়ে কম বয়সে গোল করার রেকর্ড গড়েছিলেন এ ব্রাজিলিয়ান। এবার সেখানে নাম থাকবে ইয়ামালের। 

৯ জন গোলদাতা দেখল স্পেন

ফ্রান্সের বিপক্ষে লামিন ইয়ামাল গোল করলেন দলটির নবম গোলদাতা হিসেবে। এর আগে চলতি ইউরোতে পৃথক আট জন গোলদাতাকে দেখেছে স্প্যানিশরা। আলভারো মোরাতা, ফ্যাবিয়ান রুইজ, দানি কারভাহাল, ফেরান তোরেস, রদ্রি, নিকো উইলিয়ামস, দানি ওলমো, মাইকেল মেরিনোর পরে সেই তালিকায় যুক্ত হলেন ইয়ামাল। একটি টুর্নামেন্টে এক দলের হয়ে ৯ জন গোলদাতা যেন ভিন্ন ধরনের বিস্ময় তৈরি করল। যেখানে ফ্রান্সের মতো দল পেনাল্টি বাদে প্রথম গোলদাতা দেখেছে এই স্পেনের বিপক্ষে। সেখানে নবম গোলদাতা হিসেবে নাম লেখানো বিস্ময় ছাড়া আর কী হতে পারে! 

এবারের ইউরোতে ফ্রান্স টাইব্রেকার ছাড়া চারটি ম্যাচে জালের দেখা পেয়েছে। এর মধ্যে অস্ট্রিয়া ও বেলজিয়াম ম্যাচে আত্মঘাতী গোল তাদের জয় এনে দিয়েছে। অর্থাৎ এই দুই ম্যাচে ফ্রান্সের কোনো ফুটবলার গোল না করলেও তারা জয় পেয়েছে। বাকি দুই জয়ের ম্যাচের একটিতে এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন। আর পরশু রাতে রান্ডাল কোলো মুয়ানি গোল করে প্রথম সরাসরি গোলদাতা হন ফরাসিদের। সেখানে স্পেনের ৯টি গোল ভিন্ন কথা বলেছে ও ভিন্ন গল্প লিখেছে।

এ কোন এমবাপ্পে?

কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। হ্যাটট্রিক করে আর্জেন্টিনার শিরোপা প্রায় নিজের হাতেই তুলেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভাগ্যের কাছে তাকে হেরে যেতে হয়। টাইব্রেকার থেকে খালি হাতে ফিরতে হয় ফরাসি তারকাকে। ব্যাক টু ব্যাক বিশ্বকাপ জেতা থেকেও বঞ্চিত হন তিনি। তবে ফুটবল বিশ্ব আরেকবার এমবাপ্পেকে চিনেছিল। এরপরে অসংখ্যবার দেশ কিংবা ক্লাবের জার্সিতে জ্বলে উঠেছেন তিনি। 

কিন্তু এবারের ইউরোতে থাকলেন নিজের ছায়া হয়ে। স্পেনের বিপক্ষে একাধিকবার গোলের সুযোগ পেয়েও কাজের কাজটি করতে পারলেন না। তার মতো তারকার থেকে এমন ব্যর্থতা দেখতে ভীষণ দৃষ্টিকটু লেগেছে। হারের ম্যাচে এমবাপ্পে মাস্ক ছাড়া খেলতে নেমেছিলেন। মাস্ক পরে যে তার সমস্যা হচ্ছিল, সেটি বোঝা যায় খেলার শুরু থেকেই। মাত্র ৯ মিনিটে নিজের দক্ষতা দেখিয়ে গোলের সফল সুযোগ তৈরি করে দেন তিনি। এরপরেই যেন হারিয়ে যান অজানায়। তাতে সেমি থেকেই বিদায় নিতে হলো ফ্রান্সকে।

দেশমের গলা শুকিয়ে ‘কাঠ’

স্পেন যখন ২-১ গোলের জয় নিয়ে উল্লাসে ভাসছিল তখন ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশম ডাগ আউটে বসে পানি পানেই সুখ খুঁজছিলেন। তার চোখের সামনে তারই শিষ্যরা যেভাবে পরাস্ত হয়েছে তাতে তার গলা শুকিয়ে কাঠ হওয়া ছাড়া উপায় কী ছিল! এই হারের পরে অবশ্য দোষটা নিজের কাঁধে চাপিয়েছেন দেশম। ম্যাচ শেষে তিনি বলেছেন, ‘আমি এই হারের দায় নিজের উপর নিচ্ছি। আমিই দলের দায়িত্বে ছিলাম। স্পেনের মতো মানসম্পন্ন দলের বিপক্ষে যেভাবে খেলা উচিত ছিল সেভাবে খেলতে পারিনি। এমবাপ্পে চেষ্টা করেছেন কিন্তু ফলটা আমাদের পক্ষে যায়নি।’ 

ম্যাচের ৯ মিনিটে এমবাপ্পের সহায়তায় কোলো মোয়ানি ফ্রান্সকে লিড গোল এনে দিয়েছিলেন। এরপরে গল্পটা লেখে স্পেন। তরুণ ইয়ামালের কাঁধে চড়ে তারা ফেরে সমতায়। ২১ মিনিটে সমতায় ফিরে ২৫ মিনিটে দানি ওলমোর গোলে স্প্যানিশরা লিড পায়। শেষ পর্যন্ত ব্যবধানে আর কোনো পরিবর্তন আসেনি। তাতে হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে ফ্রান্স। আর ৮ বছর পরে ফাইনাল খেলার টিকিট পেল স্পেন। ২০০৮ ও ২০১২ সালে পরপর দুবার শিরোপা জিতেছিল দলটি। গেল আসরেও সেমিফাইনাল খেলেছিল স্পেন। সেবার তারা ইতালির বিপক্ষে হেরে বিদায় নিয়েছিল, পরে ইতালি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *