৩২৯ জনকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি চূড়ান্ত, সীমান্তে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার

Share Now..

মিয়ানমারে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মধ্যে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা বাড়ছেই। এ পর্যন্ত সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৩২৯ জন বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে রয়েছেন। এর মধ্যে মিয়ানমারের কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা আত্মরক্ষার্থে প্রবেশ করেছেন। তবে সীমান্তে কিছু এলাকায় কয়েকজন গুপ্তচর প্রবেশ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, আত্মরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য তারা এসেছেন। তবে কেউ কেউ আত্মরক্ষার নামে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে গুপ্তচরবৃত্তির কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সীমান্তে কিছু গোপন এলাকা আছে। সেই সম্পর্কে তথ্য নেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ বিদ্রোহীদের আশ্রয় দিচ্ছে এমন সচিত্র প্রতিবেদন বিশ্বের কাছে তুলে ধরার পরিকল্পনা মিয়ানমারের ছিল।

সম্প্রতি সীমান্ত পেরিয়ে এদেশে আশ্রয়গ্রহণকারীদের মধ্যে গোয়েন্দাদের পাশাপাশি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপির সশস্ত্র সদস্য, ইমিগ্রেশন সদস্য, কাস্টমস ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা, পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা রয়েছেন। তাদের নিরস্ত্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের হেফাজতে রাখা হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ির ধুমধুম ও ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে তারা এসেছে। মিয়ানমারের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে আসা ৩২৯ জনকে নৌপথে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। এ ব্যাপারে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। দুই পক্ষের আলোচনার প্রেক্ষাপটে তাদেরকে কক্সবাজার থেকে গভীর সমুদ্রপথে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে বিজিপি ও সেনাবাহিনীর ১০০ সদস্যকে ফেরত পাঠাতে তুমব্রু সীমান্ত এলাকা থেকে বিজিবির সহযোগিতায় টেকনাফে স্থানান্তর করা হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে একটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের পর মিজোরামে পালিয়ে গিয়েছিল মিয়ানমারের ১৮৪ জন সৈন্য। ভারত সঙ্গে সঙ্গে তাদের মিয়ানমারে পাঠিয়ে দিয়েছিল। 

৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বিদ্রোহীরা বিজিপির একটি ফাঁড়ি দখল করে নিলে পরদিন সকালে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ১৪ সদস্য। এরপর থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত সেই সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ৩২৯ জনে পৌঁছেছে। অনেকে আহত হয়ে এসেছেন। তাদের চিকিত্সাসেবা প্রদান, জামা-কাপড় দেওয়া হয়েছে। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৩ কিলোমিটার। এর বড় একটা অংশই পড়েছে কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়। সীমান্তের এসব এলাকায় লাখের কাছাকাছি বাসিন্দা রয়েছেন। ওপারে গোলাগুলিতে তারা চরম আতঙ্কে রয়েছেন। সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে কেউ যেন কোনো অপরাধমূলক কার্যক্রম চালাতে না পারে সেজন্য বিজিবিসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আর কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেবেন না তারা। সাধারণ মানুষের মতো মিয়ানমার থেকে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, সীমান্তে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। প্রত্যেকে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছেন। আলী কদম সীমান্ত পুরোপুরি সুরক্ষিত রয়েছে। কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আর প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। 

২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারকে উত্খাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে। তারা শান, রাখাইন, চীন ও কেয়াহ রাজ্যে লড়াই চালাচ্ছে। বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সেনাপোস্ট  ইতিমধ্যে তারা দখল করে নিয়েছে। তারা রাখাইনের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *