৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঈদমেলা নিয়ে সংশয়
ঈদের আনন্দের সঙ্গে বাঘাবাসীর জন্য বাড়তি উৎসব ঈদমেলা। প্রায় ৫শ’ বছর আগে বাঘায় আসেন সুদূর বাগদাদ থেকে সুফি দরবেশ ওলি হযরত শাহদৌলা। তাঁর আবাসস্থলকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর ঈদুল ফিতরের দিন থেকে মেলা শুরু হয় এবং মেলার দ্বিতীয় দিন এখানে অনুষ্ঠিত হয় ওরস মোবারক।
গত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। এবার অনেকের প্রাণের দাবি ছিল এ মেলা অনুষ্ঠিত হোক। কিন্তু সেটি আদৌ হবে কিনা এ নিয়ে জনমনে চলছে নানা সংশয়।
বাঘার সুশীল সমাজের লোকজন জানান, মাজার কমিটি প্রতিবছর ৭ দিনের জন্য এ মেলাটি ইজারা দিলেও এটি চলে প্রায় মাসব্যাপী। স্থানীয় কতিপয় সরকারি দল সমর্থিত প্রভাবশালী লোকজন এ মেলা ইজারা নিয়ে শুরু করে স্বেচ্ছাচারিতা। তারা কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে বাঘার ঐতিহাসিক ধর্মীয় ঈদ মেলায়- জুয়া, র্যাফেল ড্র ও নানান ধরণের অশ্লীলতা প্রদর্শন শুরু করে দেয়। সেই সাথে ইজারাশর্ত ভঙ্গ করে সকল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক অতিরিক্ত টোল আদায় করে থাকেন। এমনকি দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভিক্ষুকরাও এই টোলের শিকার হন। এ ছাড়াও মাজার এলাকায় বসা দোকান-পাট সেখান থেকে আর সরতে চায় না।
এবার নতুনভাবে যোগ হয়েছে মাজারের সামনে দিয়ে অবস্থিত ঈশ্বরদী থেকে বাঘা হয়ে বানেশ্বর পর্যন্ত হাইওয়ে রাস্তা সংস্কার। এতে প্রতিনিয়ত যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে।
নানা করণে বাঘার সুধীজন এবং বিজ্ঞমহলসহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে মেলা হওয়াটা এবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। অনেকের ধারণা, এবার এ সকল কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত মেলার অনুমতি মেলেনি। তবে মেলা করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বাঘা পৌর মেয়র। তিনি গত মাসিক আইন শৃঙ্খলা মিটিং-এ মেলা করার দাবি রেখেছেন বলে নিশ্চিত করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, আব্বাসীয় বংশের হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরফে শাহদৌলা (রাঃ) ও তাঁর ছেলে হযরত আবদুল হামিদ দানিসমন্দ (রাঃ) এর সাধনার পীঠস্থান রাজশাহীর বাঘা। আধ্যাত্মিক এ দরবেশের ওফাত দিবস উপলক্ষে প্রতি বছর ঈদ-উল-ফিতরে আরবি শওয়াল মাসের ৩ তারিখে ধর্মীয় ওরস মোবারক উৎসবকে সামনে রেখে বাঘা ওয়াকফ এস্টেটের উদ্যোগে বিশাল এলাকা জুড়ে আয়োজন করা হয় এ মেলা।
স্থানীয় মুরব্বিদের ভাষ্যমতে পাপ মোচন ও পূণ্য লাভের আসায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ বাঘায় আসেন পবিত্র ওরস মোবারকে অংশ নিতে ও মাজারে নামাজ আদায় করতে। তাই বাঘা ওয়াকফ এস্টেট কর্তৃপক্ষ এ সময় টাতে ব্যস্ত সময় কাটান। তবে এবার এখন পর্যন্ত মেলা করার অনুমতি না মেলায় জনমনে চলছে নানা সংশয়।
বাঘার নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার বলেন, ‘জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ যদি মেলার অনুমতি দেয় তাহলে মেলার আয়োজন করা যাবে। অনুমতি মিললে অবশ্যই আমরা সকল ধরণের সহযোগিতা করবো।’
Ready to be a legend? Play now and make your mark! Lucky Cola