৬ মাসে ১২৯ জন, প্রতি মাসে গড়ে ২১.৫ জন আত্মঘাতি হচ্ছেন, ঝিনাইদহে আত্মহত্যার ভয়াবহতার চিত্র

Share Now..

\ আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ থেকে \
যদি বলা হয় ঝিনাইদহ কিসের জন্য বিখ্যাত? প্রশ্ন আসবে আত্মহত্যায়। হ্যা ঝিনাইদহ জেলায় আত্মহত্যা প্রবণতা আবার ভয়ংকর রুপে ফিরেছে। প্রায় প্রতিদিন মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। ঝিনাইদহে তুচ্ছ কারণে জীবনকে আত্মঘাতি করে তোলার এই ভয়ংকর প্রচেষ্টা বিশ্ব ও বাংলাদেশের গড়কে ছাড়িয়ে গেছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা, পুলিশ, মানবাধিকার সংগঠন ও বিভিন্ন জার্নালে ঝিনাইদহে আত্মহত্যার এই ভয়াবহতার চিত্র ফুটে উঠেছে। এদিকে ২০২৪ সালের গত ৬ মাসে ঝিনাইদহে ১২৯ জন নরনারী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৭১ জন ও নারী ৫৮ জন। আত্মহত্যার পরিসংখ্যানে শৈলকুপাকে পেছনে ফেলে এবার শীর্ষে নাম উঠে এসেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার। ঝিনাইদহের মানবধিকার সংগঠন আরডিসি’র এক জরিপ তথ্যে জানানো হয়, ২০২৪ সালে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত গলায় ফাঁস ও বিষ পান করে জেলায় আতœহত্যা করেছে মোট ১২৯ জন। এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ৩৮ জন, মহেশপুরে ২৮ জন, শৈলকুপায় ২৬ জন, কালীগঞ্জ ১৭ জন, হরিণাকুন্ড ১১ জন ও কোটচাঁদপুর উপজেলায় ৯ জন। গড়ে প্রতি মাসে ২১.৫ জন করে আত্মহত্যা করছেন। আরডিসির নির্বাহী প্রধান আব্দুর রহমান জানান, জনু-জুলাই মাসে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। ফলে সল্প আয়ের কারণে পরিবারে অভাব অনাটন দেখা দেয়। এ নিয়ে সংসারে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ কারণে স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে যে কেউ আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যা নিয়ে ২০ বছর ধরে কাজ করা ঝিনাইদহের শোভা এনজিওর নির্বাহী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম জানান, ঝিনাইদহ জেলার মানুষ আবেগ প্রবণ। অল্পতেই তারা ভেঙ্গে পড়েন। যে কারণে তারা আতœহত্যার পথ বেছে নেন। তিনি আরো জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করছেন। মানুষকে বোঝাচ্ছেন কিন্তু তারপরও সামান্য ঘটনায় মানুষ নিজেকে আত্মঘাতি করে তুলছেন। আতœহত্যায় দেশে মধ্যে ঝিনাইদহ জেলা শীর্ষে রয়েছে বলেও তিনি জানান। ২০১৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি এক লাখে আত্মহত্যার ছয়টি ঘটনা ঘটে। সারা দেশে যেখানে গড়ে ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করেন, সেখানে ঝিনাইদহে প্রতিদিন গড়ে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করছেন। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ও পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঝিনাইদহ জেলায় প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য আত্মহত্যার হার ২২%। পরিসংখ্যান মতে ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঝিনাইদহে ৩ হাজার ১৫২ জন আত্মহত্যা করেছেন। এই বছরগুলিতে আত্মহত্যার চেষ্টাকারীর সংখ্যা ২২ হাজার ৬৭৫ জন। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত এই ২৬ বছরে ঝিনাইদহে ১৮ হাজার নরনারী আত্মহত্যা করেছে। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ২২৮ জন। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বিভিন্ন সংস্থা কাজ করার ফলে ২০০৮ সালের পর থেকে আত্মহত্যার সংখ্যা কমতে থাকে। তারপরও বিশে^র মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ঝিনাইদহ। শোভা এনজিওর নির্বাহী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম জানান হরিণাকুন্ডুর একটি পরিবার আছেন যার চারটি মেয়েই দেখাদেখি আত্মহত্যা করেছেন। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ধনঞ্জয়পুর গ্রামের গৃহবধূ পারভিন আক্তার যিনি তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। এভাবে জেলার বিভিন্ন গ্রামে আত্মহত্যার ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে যা বাংলাদেশে তো বটেই, বিশে^ নজীরবিহীন কান্ড। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের সাবেক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল ফাত্তাহ জানান, মানুষের শরীরে একটি হরমোন রয়েছে যা ক্রোধ বা রাগ, দুঃখ, হাসি ও কান্না নিয়ন্ত্রন করে। থাইরক্সিন হরমোন মানুষের গ্রন্থিকে নিয়ন্ত্রন করে। এখন দেখতে হবে যে সব মানুষ অল্পতে আত্মহত্যা করেন তাদের শরীরে এই থাইরক্সিন হরমোনের পরিমান কেমন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *