৮২০ কোটি টাকা ফাঁকি বাংলালিংকের

Share Now..


মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংকের বিরুদ্ধে চলমান অডিটে এখন পর্যন্ত ৮২০ কোটি ৭২ লাখ টাকার ফাঁকি ধরা পড়েছে। তবে অডিটের আরো দুই ধাপ বাকি রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ভ্যাট, ট্যাক্স, রেভিনিউ শেয়ারিং, হ্যান্ডসেট রয়্যালিটি, অ্যাকসেস ফ্রিকোয়েন্সি পেইমেন্ট, মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি পেইমেন্ট, পাওয়ার আউটপুট চার্জ, লাইসেন্স ফিসহ অনেকগুলো ক্যাটাগরিতে এই ফাঁকি শনাক্ত হয়েছে।এর আগে গ্রামীণফোন ও রবির অডিট সম্পন্ন করে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি। সেখানে গ্রামীণফোনের ফাঁকি ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবির ফাঁকি ৮৬৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা ধরা পড়ে। এ নিয়ে উচ্চ আদালত পর্যন্ত জল গড়িয়েছে। শেষ পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে গ্রামীণফোন অডিট আপত্তির ২ হাজার কোাটি টাকা এবং রবি ১৩৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। বাকি টাকার বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত হয়েছে।টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ইত্তেফাককে বলেন, ‘এই টাকা জনগণের। শেষ পর্যন্ত অডিটে যে টাকা ফাঁকি ধরা পড়বে বাংলালিংককে সেই টাকা দিতে হবে। আমরা চূড়ান্ত অডিট রিপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।’ বিটিআরসির নিয়োগ করা অডিটর মেসার্স মসিহ মুহিত হক অ্যান্ড কোম্পানি বাংলালিংকের অডিট করছে। এখন পর্যন্ত তারা ‘চারটি প্রতিবেদন’ জমা দিয়েছে। অডিট শেষ করা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ছয়টি প্রতিবেদন জমা দেবে। এতে শেষ পর্যন্ত অর্থ কম-বেশি হতে পারে। সূত্র জানিয়েছে, বাংলালিংকের গ্রুপ সিইও সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন। অডিটের বিষয়টি তারা গুরুতের সঙ্গে নিয়েছেন। এ নিয়ে তিনি ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।অডিটের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলালিংকের হেড অফ করপোরেট কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড সাস্টেনিবিলিটি আংকিত সুরেকা ইত্তেফাককে বলেন, ‘অডিট তো এখনো শেষ হয়নি। অডিট প্রক্রিয়া এখনো চলমান এবং মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে। অডিট শেষ হওয়ার আগেই এই ধরনের বিভ্রান্তিতকর তথ্য আলোচনায় আসা অত্যন্ত আপত্তিকর। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করাও যৌক্তিক হবে না।’বাংলালিংকের অডিটের জন্য মেসার্স মসিহ মুহিত হক অ্যান্ড কোম্পানিকে অডিটর নিয়োগ করে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট। বিটিআরসির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী এই অডিট শেষ করার কথা ছিল ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। নির্ধারিত সময়ে অডিট শেষ না করতে পেরে অডিটর বিটিআরসির কাছে আরো সময় চায়। বিটিআরসি চুক্তির মূল্য ও কার্যপরিধি অপরিবর্তিত রেখে বাড়তি তিন মাস সময় বাড়িয়েছে। অর্থাৎ ২৩ মের মধ্যে তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময়ের মধ্যেও তারা রিপোর্ট দিতে পারেনি। পরবর্তীতে তাদের আরো তিন মাস সময় বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।বাংলালিংকের এই অডিট করতে মসিহ মুহিত হক অ্যান্ড কোম্পানিকে ৮ কোটি ৭৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে বিটিআরসিকে। এই কোম্পানি ভারতীয় এক অডিট কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে রবির অডিট করেছিল। এরজন্য তারা নিয়েছিল ৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এর আগে বাংলালিংকে অডিট করতে ২০১১ সালে অডিটর নিয়োগ দেওয়ার পর ঐ প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু মাঝপথে এসে অডিটর কাজ করবে না বলে জানায়। ঐ সময় অডিটর বদলে নতুন কোম্পানিকে দায়িত্ব দিলেও তারাও এক পর্যায়ে অডিট করতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে অডিট প্রতিষ্ঠান আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোম্পানি কখনোই এর সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি। পরে ২০১৭ সালে আবারও বাংলালিংকের হিসাব অডিটের উদ্যোগ নেয় বিটিআরসি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *