৯১ বছরে সংগীত জগতের শেষ মুঘল

Share Now..

‘আজ আপনি যদি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাস জানতে চান তবে শুধুমাত্র আমিই আপনাকে এটা বলতে পারি। আমিই এই ইন্ডাস্ট্রির শেষ মুঘল।’ কথাগুলো বলেছেন ভারতের কিংবদন্তি গায়িকা আশা ভোঁসলে। বড় বোন লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুর পর বলিউডে তিনিই একমাত্র স্বর্ণযুগের গায়িকা।

গত বছর মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত ‘বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির উত্তরাধিকার’ নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আশা ভোঁসলে নিজের ‘সংগীত’ ক্যারিয়ার কাভি ইয়ে রুলায়’। অর্থাৎ এই জায়গায় এবং বলিউডে প্লেব্যাক শিল্পী হিসাবে নিজের যাত্রাপথ নিয়ে কথা বলেছিলেন। আজ ৯১ বছরে পা দিয়েছেন সংগীত জগতের শেষ মুঘল আশা ভোঁসলে। আধুনিক থেকে শুরু করে ধ্রুপদ, মেলোডিয়াস, স্যাড মেলোডি, রাগাশ্রিত, পপ গানের জগতে বিচরণ আশা ভোঁসলের। তার কণ্ঠের উচ্চ মার্গের ও বর্ণাঢ্য কারুকাজের জন্য তিনি নিজেই এক উপমা।  কতটা দুর্গম পথ পেরিয়ে এতটা বছর পার হতে হলো তা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে নিজেই অকপটে স্বীকার করেন। একটি গানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন তিনি। তা হলো- ‘জিন্দেগি ক্যায়সে হ্যায় প্যাহলি হায় কাভি তো হাসায়, আসতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে।  তিনি ছেলেমেয়েদের বড় করেছেন। বিয়ে দিয়েছেন। নাতি-নাতনিদের দেখাশোনাও করতে হয়েছে। মাত্র সাত বছর বয়সে আশা ভোঁসলের সংগীতজীবন শুরু। 

তিনি তার সংগীত জীবনে মোট ৯২৫টিরও বেশি সিনেমায় গান গেয়েছেন গানের সংখ্যা ১২০০০’র বেশি। ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত আশা ভোঁসলে সাতবার ফিল্মফেয়ার সেরা নেপথ্য গায়িকার পুরস্কার পেয়েছেন।  ১৯৭৭ সালের পর তিনি জানান যে তার নাম যেন আর ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের জন্য আর নির্বাচন না করা হয়। ২০১১ সালে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তাকে সর্বাধিকসংখ্যক গান রেকর্ডকারী হিসেবে ঘোষণা করে। ভারত সরকার তাকে ২০০৮ সালে পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত করে। ২০০১ সালে তিনি ‘ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার’ পান। ২০০০ সালে পান ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’। ২০২৪ সালের জুন মাসের শেষের দিকে প্রকাশিত হয় কিংবদন্তি গায়িকা আশা ভোঁসলের জীবনী। আশা ভোঁসলের জীবনীতে ৯০ জন লেখক কাজ করেছেন। বইতে বর্ষীয়ান গায়িকার জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। আশা ভোঁসলের সৌরভ সব গানে পাওয়া যায়। ‘লগান’ ছবির ‘রাধা ক্যায়সে না জ্বলে’ কিংবা উমরাওজান, ধ্রুপদী ছবি সুজাতায় ‘কালি ঘটা ছায় মেরা’, ‘পিয়া তু আব তো আজা’, ‘চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে জো দিলকো’ এসব গান ভারতীয় সংগীত ইতিহাসে অনন্তকাল দীপ্তি ছড়াবে বাংলা রোমান্টিক গানের ভান্ডারে আশা ভোঁসলের একাধিক গান শ্রোতাদের মন কেড়েছে। অবাঙালি আশা ভোঁসলের বাংলা উচ্চারণের বিশুদ্ধতায় অসংখ্য ভাষাসচেতন বাঙালি চমকে যাবেন। নাচ ময়ূরী নাচ রে, যেতে দাও আমাকে ডেকো না, কিনে দে রেশমি চুড়ি, তারে ভোলানো গেল না, না ডেকো না, পোড়া বাঁশি শুনলে এ মন, ফুলে গন্ধ নেই, আকাশের দুটি তারা, যাব কি যাব না, বাঁশি ডাকলে হায়, তুমি নেই, তুমি কেন এলে না, ছন্দে ছন্দে গানে গানে, চোখে চোখে কথা বলো, মনের নাম মধুমতিসহ অসংখ্য গানের ডালিতে তার গান রয়েছে। ১৯৩৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বরের এই দিনে এই কিংবদন্তি জন্মগ্রহণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *