এমপি আনার হত্যা নিয়ে মুখোমুখি আ’লীগ / দ্বিধাদ্বন্দ্বে উত্তপ্ত ঝিনাইদহ
\ আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ \
এমপি আনার হত্যার তদন্ত নিয়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসার ফলে ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ঝিনাইদহ জেলা আ’লীগের রাজনীতি। এমপি আনার হত্যা ও দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিমের গ্রেফতার নিয়ে আ’লীগ এখন কার্যত দুই ধারায় বিভক্ত। এক পক্ষ এমপি আনার হত্যার বিচার চাচ্ছে। অন্য পক্ষ জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে আটকের প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, জেলা আ’লীগের সভাপতি, পৌর ও উপজেলা আ’লীগের নেতাদের মিন্টুর পক্ষে চলা আন্দোলনে দেখা যাচ্ছে না। তারা অনেকটাই নিশ্চুপ রয়েছেন। ফলে মিন্টুর পক্ষে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে উঠবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত রাজপথে যাদের দেখা যাচ্ছে তারা কেবলই মিন্টুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আ’লীগের এই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে দুই নেতার অনুসারিরা হুমকী ধামকি দিতেও কসুর করছেন না। ঝিনাইদহ জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম মিন্টু মুক্তি আন্দোলনে বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) মানববন্ধনে বলেছেন কালীগঞ্জে আনার হত্যার প্রতিবাদ সভায় সাইদুল করিম মিন্টুর বিরুদ্ধে বিষোদগার করা হচ্ছে। তার সম্মানহানী করা হচ্ছে। কালীগঞ্জের আ’লীগ নেতা এমপি আনার সমর্থক উপজেলা চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী ও পৌর মেয়র আশরাফুলকে তিনি গ্রেফতার দাবী জানিয়ে বলেন, তারাই মুলত মীরজাফর হিসেবে এমপি আনারের পাশে ছিল। তারা অনেক কিছুই জানেন। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল ইমরান মিন্টু আটকের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দাবী করে বলেন, “ঢাকায় পার্টি অফিসের সামনে যখন আমি নেতার (মিন্টু) সঙ্গে দাড়িয়ে তখন, নাম্বার প্লেট বিহীন একটি গাড়িতে প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসে সালাম দিয়ে বললেন, ডিবি প্রধান আপনার সঙ্গে কথা বলবেন, আপনি আমাদের সঙ্গে চলুন। নেতা তখন আমাদের দাড় করিয়ে বললেন, তুমরা দাড়াও আমি কথা বলে এখনই আসছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ পর্যন্ত আমার নেতাকে ছাড়া হয়নি। ডিবির পক্ষ থেকেও তিনি আটক না গ্রেফতার তাও বলা হচ্ছে না”। এদিকে বৃহস্পতিবার কালীগঞ্জ শহরে এমপি আনার হত্যার প্রতিবাদ সভায় স্থানীয় পৌর মেয়র আশরাফুল আলম বলেন, “খুনিদের আড়াল করার জন্য ঝিনাইদহ শহরে একের পর এক মানববন্ধন করা হলেও এমপি আনার হত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন না ঝিনাইদহের নেতারা। এতেই আমরা নিশ্চিত হয়েছি তারা এমপি আনার হত্যার পক্ষে। তিনি বলেন, আনার হত্যার আন্দোলনে আমি ও উপজেলা চেয়ারম্যান নেতৃত্ব দিচ্ছি বলে তারা আমাদের গ্রেফতার চান। এতে তো তাদের ভালই হয়। আমরা গ্রেফতার হলে তো প্রতিবাদের মানুষ রাস্তায় থাকবে না”। তিনি বলেন, “সাইদুল করিম মিন্টু এই হত্যায় জড়িত থাকলে তাকে বিচার করে ফাঁসি দিতে হবে। তার আগে তিনি তার দল থেকে বহিস্কার চান। তিনি বক্তৃতা বিবৃতিতে খুনিদের যারা আড়াল করতে চাচ্ছে তাদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবী জানান আশরাফ। এদিকে এমপি আনার হত্যার পর খালি গায়ে তার হাতমুখ বাঁধা নৃশংস ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর আনার সমর্থকরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন। ঝিনাইদহ-৪ আসন জুড়ে নিহত আনারের সমর্থকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন এমপি আনার সমর্থকরা কালীগঞ্জ শহর ও উপজেলার গুরুত্বপূর্ন বাজারে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন অব্যাহত রেখেছেন। বলা যায়, ঝিনাইদহ ও কালীগঞ্জ এখন মিছিল ও প্রতবাদের শহরে পরিণত হয়েছে, যাদের এক পক্ষ জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ যানাচ্ছে। আর এমপি আনার সমর্থকরা দোষি হয়ে থাকলে সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে বহিস্কারসহ ফাঁসির দাবীতে ক্রমশ সোচ্চার হচ্ছেন।
এদিকে মিন্টু মুক্তি আন্দোলন নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা আ’লীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ সফিকুল ইসলাম অপু বলেন, “আমি বর্ধিত সভায় নেতাকর্মীদের পরিস্কার ভাষায় বলেছি বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কোন আন্দোলন করা যাবে না। কাজেই মিন্টু আটক হওয়ার পর যারা আন্দোলন করছেন সেটি আ’লীগের আন্দোলন নয়। তিনি বলেন, বিচার না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষি সাব্যস্ত করা যাবে না। কাজেই মিন্টু যে দোষী তাও বলছি না। তিনি বলেন, আ’লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের ব্যানার ব্যাবহার করে যারা ঝিনাইদহ শহরে মিন্টুর পক্ষে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ দেখাচ্ছে তাদেরকে অতিভক্ত বলা যায়। আর এই অতিভক্ত সব সময় যে ভাল কিছু বয়ে আনবে তা নয়, খারাপও হতে পরে বলে সাবেক এই সাংসদ মন্তব্য করেন।
Share Now..