করোনায় মৃত্যু হঠাৎ ঊর্ধ্বমুখী
দেশে করোনা ভাইরাসে হঠাৎ মৃত্যু ঊর্ধ্বমুখী। সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখল দেশ। গতকাল সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা গত ২০ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। এক দিনে এর চেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর এসেছিল সর্বশেষ গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর, সেদিন ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গতকাল সাড়ে ৪৪ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করে ৯ হাজার ৩৬৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। দেশে গত এক সপ্তাহে করোনা ভাইরাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ২৩ দশমিক ৯ ভাগ কমেছে। তবে এক সপ্তাহে মৃত্যু বেড়েছে ৬১ ভাগ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে আক্রান্তদের মধ্যে বেশির ভাগই তরুণ, যাদের বয়স ২৫-৩৪ বছরের মধ্যে। আর যারা মারা যাচ্ছেন তারা বেশির ভাগই ষাটোর্ধ্ব বয়সি। এ পর্যন্ত মোট ২৮ হাজার ৬২৭ মৃতের মধ্যে ৮০ ভাগই বয়স্ক ও টিকা নেননি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তরুণরা বাইরে বেশি বের হচ্ছে, তাই করোনায় আক্রান্তও বেশি হচ্ছে। অন্যদিকে নানা শারীরিক জটিলতার কারণে বয়স্কদের মৃত্যুহার বেশি। করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে টিকা নেওয়ার পাশাপাশি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।গত মাসে দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়। এর আগে থেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলে আসছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে টিকা নেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে সরকার ১১ দফা নির্দেশনা দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা কেবল কাগজে-কলমেই। স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে মানুষের মধ্যে যেমন নেই সচেতনতা, তেমনি স্বাস্থ্যবিধি মানাতে
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন তেমন ভূমিকা রাখছে না। সর্বত্রই স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা উপেক্ষিত। অনেকেই মাস্ক পরছে না। অথচ শুধু মাস্ক পরলেই ৯০ ভাগ নিরাপদ থাকা যায়। জনসমাগম হচ্ছে। অফিস-আদালত, দোকানপাট কোথাও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক, ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, সবার টিকার আওতায় আনতে হবে। টিকা গ্রহণের কারণে দেশে সংক্রমণ কমে এসেছে। সবাইকে টিকা গ্রহণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, দেশে করোনায় আক্রান্তের হার কিছু দিনের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এটাই ভাইরাসের চরিত্র। তবে এখন মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ বয়স্কদের কেউ কেউ দুই ডোজ টিকা ও বুস্টার ডোজ নেননি। তিনি বলেন, ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হয়। সারা বিশ্বে এটা হচ্ছে। তবে আক্রান্ত হলেও অধিকাংশেরই হাসপাতালে যাওয়া লাগে না। বর্তমানে করোনায় মৃত্যু হার কমাতে হলে বয়স্কদের দুই ডোজ ও বুস্টার ডোজ টিকা নিতে হবে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এটা সরকারের দায়িত্ব। এক্ষেত্রে জনগণকে কাজে লাগাতে হবে।