শৈলকুপায় হত্যা মামলার রিমান্ডের আসামীকে থানায় আনা হলো ব্যাক্তিগত প্রাইভেটে পুলিশের হ্যান্ডমাইকে দিলেন বক্তব্য, ছিল না হ্যান্ডকাফও

Share Now..

শৈলকুপা প্রতিনিধি ঃ

হত্যা মামলার আসামীর এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিজ্ঞ আদালত। এরপর কারাগার থেকে থানা পুলিশ এই রিমান্ডের আসামী কে তার ব্যাক্তিগত প্রাইভেটে নিয়ে আসে থানায়। সেখানে এসে থানা গেইটের ভেতরে পুলিশের হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে নাড়ালেন হাত, দিলেন বক্তব্য, নিজেকে দাবি করলেন নির্দোষ, তার হাতে ছিল না পুলিশের কোন হ্যান্ডকাফও। এটি আবার স্যোশাল মিডিয়াতে বিভিন্ন মানুষ করে লাইভ সম্প্রচার! ঘটনা ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানার। আর আসামী হলেন শফিকুল ইসলাম শিমুল, তিনি সদ্য শেষ হওয়া ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ১০ নং বগুড়া ইউনিয়নের ইউপি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং ঝিনাইদহ জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক। তার গ্রামের বাড়ি শৈলকুপার বড়বাড়ি বগুড়া গ্রামে, পিতার নাম কুবাদ আলী ।
জানা গেছে, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ১০ নং বগুড়া ইউনিয়নে ৫ম ধাপে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ৪বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বিশ^াস, ঝিনাইদহ জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শফিকুল ইসলাম শিমুল সহ অনেকে। তবে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন শফিকুল ইসলাম শিমুল।

নির্বাচনের পর থেকে স্থানীয় আওয়ামীলীগে নানা বিরোধ আর দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এসবের জেরে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারী প্রকাশ্য দিবালোকে পেয়াজের ক্ষেতে হাতুড়িপেটা ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় কল্লোল খন্দকার নামের এক যুবক। সে বড়বাড়ি বগুড়া গ্রামের মৃত আকবর খন্দকারের ছেলে। এঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মিল্টন খন্দকার বাদী হয়ে জানুয়ারী মাসের ১২ তারিখে ৮২ জন কে আসামী করে হত্যা মামলা( মামলা নং ৩) দায়ের করেন।

মামলায় নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুল কে করা হয় হুকুমের আসামী। হত্যাকান্ডের ঘটনায় প্রথম থেকেই মামলার আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অনিহা সহ বাদীর পরিবার নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে থানা পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন দপ্তরে দেন লিখিত অভিযোগ। করা হয় সংবাদ সম্মেলনও । তবে আফান ও সজিব নামে এই মামলার মাত্র ২জন আসামী কে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় । আর শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাসির বিশ^াস, ফরিদ মুন্সি, আতিয়ার মিয়া, আখির মুন্সি নামে মামলার ৫জন আসামী চলতি মাসের ২তারিখ বুধবার করে আত্মসমর্পন। মামলার আইও এসআই তৌফিক আসামীদের ৫দিনের রিমান্ড চায় তবে বিজ্ঞ আদালত তাদের ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। মামলার হুকুমের আসামী শফিকুল ইসলাম শিমুল সহ এই ৫জন কে ৮মার্চ মঙ্গলবার সন্ধায় পুলিশ রিমান্ডে আনা হয়।
স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, সন্ধার পরপরই রিমান্ডের আসামীদের পুলিশের গাড়িতে নয় রাজকীয় স্টাইলে ব্যাক্তিগত গাড়ি বহরে ৩টি প্রাইভেট কারে চেপে আসামীদের আনা হয় শৈলকুপা থানাতে। সংবর্ধনার স্টাইলে এসব আসামীদের সমর্থক-কর্মীরা আগ থেকে থানার ভেতরে বাহিরে ভিড় জমায়। তারা থানার ভেতরেও শ্লোগান দিতে থাকে, মুক্তি দাবি করে। এসময় শৈলকুপা থানার ওসি(তদন্ত) মহসীন হোসেন সহ অন্যান্য স্টাফদের আনাগোনা দেখা যায়। তবে বহিরাগতদের হঠাতে কোন তৎপরতা ছিল না। এক পর্যায়ে ওসি(তদন্ত)মহসীন হোসেন তার হ্যান্ডমাইক তুলে দেন রিমান্ডের আসামী চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুলের হাতে। তিনি পুলিশ বক্সে দাঁড়িয়ে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান, তার হাতে ছিল না কোন হ্যান্ডকাফও। তিনি হ্যান্ডমাইকে বক্তব্য রাখেন, নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
এদিকে রিমান্ডের আসামীদের নিয়ে পুলিশের এমন কর্মকান্ডে হতাশা আর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হত্যা মামলার বাদি নিহতের ছোট ভাই মিল্টন খন্দকার। তিনি বলেন, এমন ঘটনা নজিরবিহীন আমরা ন্যায় বিচার পাবো বলে মনে করছি না, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আস্থাহীনতার কথাও জানিয়েছেন।
হত্যা মামলাটির আইও এসআই তৌফিক জানান, আসামীদের কারো ব্যাক্তিগত গাড়িতে আনা হয়নি, গাড়িগুলো ভাড়া করা। আর আসামীদের হাতে হ্যান্ডকাফ না থাকা ও পুলিশের হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে বক্তব্য দেয়া প্রসঙ্গে বলছেন, বিষয়টি নিয়ে ওসি তদন্ত এবং থানা পুলিশ বলতে পারে।
শৈলকুপা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, রিমান্ডের আসামী এভাবে বক্তব্য দিতে পারে না । আমি থানায় ছিলাম না,ঢাকা থেকে সকালে এসেছি তবে যতটুকু শুনেছি তিনি তার এলাকার লোকদের শানÍ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি থানায় এসেছেন পুলিশের গাড়িতে।

ঝিনাইদহ জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাড. ইসমাইল হোসেন বলেন, রিমান্ডের কোন আসামীর সাথে কখনো কখনো স্বজনরা দেখা করতে পারে, অন্য কোন বিধান নেই ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *