চুয়াডাঙ্গা বেগমপুরে দশম শ্রেণির ছাত্রের সঙ্গে ৫ ম শ্রেণীর ছাত্রীর বিয়ে দিলেন স্কুলশিক্ষিকা শামসুল নাহার

Share Now..

হিজলগাড়ী পতিনিধিঃ
বর্তমান সরকার বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ব্যাপক কর্মসূচী হাতে নিয়ে বাল্যবিবাহের প্রতি জিরো ট্রলারেন্স দেখিয়েছেন। বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে আইন ও নীতি প্রণয়ন,পরিবর্তন ও সংযোজন করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য বর্তমান সরকার নানানবিধ কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন। সরকার যখন দেশকে বাল্য বিবাহ মুক্ত করতে বদ্ধপরিকর। ঠিক সেই সময় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শামসুলনাহারে বিরুদ্ধে ৫ম শ্রেণীর ছাত্রীকে নিজের ১০ শ্রেণীতে পড়–য়া ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা নিয়ে এলাকা জুড়ে চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের ছোটশলুয়া গ্রামের বিলপাড়ার দিনমুজুর অসোক আলীর মেয়ে শারমীন খাতুন (১১) পাশ্ববর্তী বেগমপুর ইউনিয়নের বেগমপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর একজন নিয়মিত ছাত্রী। তার রোল নং-৩৮। গত ২০/০৩/২০২২ ইং তারিখে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শামসুনাহার তারই ছেলে স্থানীয় বেগমপুর যদুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণী পড়–য়া আব্দুর রহমানের সাথে বিয়ে দেয়। প্রথম কয়েকদিন বিষয়টি জানাজানি না হলেও ঘটা করে বাল্য বর বধু শশুর বাড়ী ছোটশলুয়া গ্রামে দশ বদ্দন করতে আসলে লোকমুখে জড়িয়ে পড়ে শিক্ষিকা কর্তৃক নিজের অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলের সাথে নিজ বিদ্যালয়ের অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছাত্রীর বিয়ে দেওয়ার বিষয়টি। যা নিয়ে সচেতন মহলে শুরু হয় আলোচনা সমালোচনার ঝড়।
খবর পেয়ে সরেজমিনে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বেগমপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে হাতে মেহেদী রং নিয়ে ৫ম শ্রেণীতে ক্লাস করতে দেখা যায় বাল্য বিবাহের স্বীকার স্কুলছাত্রী শারমিন খাতুনকে। বিয়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে অপকটে স্বীকারে বলে, গত এক সপ্তাহে আগে ম্যাডামের ছেলের সাথে তার বিয়ে হয়েছে। বর্তমানে সে দশবদ্দনে বাড়ীতে এসে স্কুলে ক্লাস করছে। একই ক্লাসে শ্রেণি শিক্ষক হিসাবে তখন ক্লাস নিচ্ছিল অভিযুক্ত শিক্ষিকা শামসুনাহার। তার কাছে সাংবাদিক পরিচয়ে স্কুল ছাত্রীর সাথে নিজের ছেলের বাল্য বিবাহ দেওয়ার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার নিজ বাড়ীর অবস্থা খুব ভাল না। বিশেষ করে তার মায়ের খুব শরীর খারাপ। মায়ের ইচ্ছা নাতি ছেলের বউ দেখার। মুলত মায়ের ইচ্ছা পূরন করা জন্যই তিনি নিজের ছেলের সাথে তারই স্কুলের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রীকে বিয়ে দিয়েছেন। তবে বিয়ে রেজিষ্ট্র করা হয়নি। বেগমপুর দাখিল মাদরাসার শিক্ষক ও বেগমপুর ইউনিয়নের কাজি মফিজুল ইসলাম ধর্মীয়রীতি মেনে বিয়ে দিয়েছেন।
এবিষযে বেগমপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদের কাছে জানতে চাইলে, তিনি বিয়ের বিষয়টি জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানিয়ে বলেন, একজন স্কুল শিক্ষিকার এধরনের অপরাধ কাম্য নয়। বিয়ে পড়নো কাজি মফিজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিয়ে পড়ানোর বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন এধরনের কোন বিয়ে তিনি পড়াননি। তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
শিক্ষিকা কর্তৃক নিজের অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলের সাথে নাবালিকা ছাত্রীর বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে, বেগমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলী হোসেন জোয়ার্দ্দার বলেন, বেগমপুর ইউনিয়নকে বাল্য বিবাহ মুক্ত করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ বদ্ধপরিকর। একজন স্কুল শিক্ষিকা কিভাবে এই ধরনের কাজ করতে পারে আমার বুঝে আসে না।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে পারিবারিক আদালতে মামলা করতে হবে। আর এই বিষয়টি আমাদের দেখার দায়িত্ব না।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম ভুইয়া বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান। এদিকে একজন সচেতন শিক্ষিকা কিভাবে তার অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলের সাথে নিজ স্কুলের নাবালিকা মেয়ের বাল্য বিবাহ দেয় তা নিয়ে ইউনিয়ন জুড়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকতাদের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *