যশোরের চৌগাছায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আপন দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা, আটক-২
এস আর নিরব যশোরঃ
যশোরের চৌগাছায় তুচ্ছ ঘটনায় প্রতিপক্ষের হাতে আপন দুই ভাই ইউনুছ আলী খান (৫৫) এবং আয়ূব আলী খান (৬০) নামে দুইজন নিহত হয়েছে ।নিহত দুজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাঁরা উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের টেঙ্গুরপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান খানের ছেলে।
এ ঘটনায় আয়ূব আলী খানের ছেলে আসাদুজ্জামান খান রনিকে গুরুতর আহত অবস্থায় যশোর ২৫০ শয্যা হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে দশটায় চৌগাছা-মহেশপুর সড়কের টেঙ্গুরপুর সর্দার ব্রিকসের বিপরীতে মুকুল হোসেনের চার দোকানের পাশে এই ঘটনা ঘটে।
এদিকে, ঘটনার পরপরই পুলিশ অভিযুক্ত একই এলাকার আফজাল খানের ছেলে বিপুল খান ও মুকুল খানকে আটক করেছে। একইসাথে হত্যায় ব্যবহৃত চাপাতি-হাসুয়া উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হলে দু’জনেই হত্যার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার দালাল আসামিদের জাবানবন্দি গ্রহণ শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। এঘটনায় নিহত আয়ুব আলীর মেয়ে সোনিয়া খান বাদী হয়ে আটক দু’জনসহ আফজালের আরেক ছেলে বিল্লাল ও বিল্লালের স্ত্রী রূপালী বেগমকে আসামি করে চৌগাছা থানায় মামলা করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় ইউপি সদস্য জাকির হোসেন এবং নিহতদের ছোটভাই শের আলী ও নিহত আয়ূব খানের মেয়ে জানান, একই গ্রামের আফজাল খানের ছেলে বিল্লাল, বিপুল ও মুকুলরা আয়ূব হোসেন ও ইউনূছ আলীদের কাঠগোলা ও খেতে কাজ করতো। হঠাৎ বিপুল কাজে যেতে না চাওয়ায় বৃহস্পতিবার তারাবীহ নামাজ পড়ে শেষে বাড়ি থেকে খেয়ে সরদার ব্রিকস পার হয়ে মুকুলের চায়ের দোকানে (খন্ডকালিন দোকান পাশেই তাদের তিনভাইয়ের ঝুপড়ি ধরনের বাড়ি) যায়। কাজে যেতে না চাওয়ায় সেখানে আয়ূব খানের সাথে বিপুলের কথা কাটাকাটি হয় এবং বিপুল আইয়ূব খানকে তিনটি ঘুষি মারে। তখন আয়ূব খান বাড়িতে গিয়ে মেয়েদের নাম ধরে ডেকে বলেন আমি বৃদ্ধ মানুষ তবুও বিপুল আমাকে মেরেছে। তোমাদের মেঝচাচা (ইউনূছ) ও ভাইকে (আসাদুজ্জামান) ডাকো। এরপর তারা তিনজনই মুকুলের ওই চায়ের দোকানে যেয়ে অপমান করার কারণ জানতে চান। এসময় আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে থাকা মুকুল, বিপুল, বিল্লাল, তাদের স্ত্রীরা এবং তাদের বাবা আফজাল খান ও মা রিজিয়া বেগমরা মিলে আয়ূব খান, তার ভাই ইউনুছ খান এবং ছেলে আসাদুজ্জামান খান রনিকে চাপাতি ও হাসুয়া দা দিয়ে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে। এতে ইউনূছ খানের দুটি হাত কব্জি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এবং মাথা ও শরিরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। মাথাসহ শরিরের বিভিন্নস্থানে আঘাত পেয়ে মারাত্মক আহত হয়ে ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা আয়ূব খান ও আসাদুজ্জামান খানকে পুলিশ দ্রুত উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আয়ূব হোসেন খানের মৃত্যু হয় এবং মাথায়, কাঁধে ও হাতে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত আসাদুজ্জামান খানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে অপারেশন শেষে তাকে ভর্তি রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চৌগাছা থানার ওসি তদন্ত ইয়াসিন আলম চৌধুরী জানান, ইতিমধ্যে ঘটনার সাথে জড়িত দু’জনকে আটক করা হয়েছে। তুচ্ছ ঘটনায় চৌগাছায় দু’ভাই খুন হয়েছে। তারা হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা আদালতে স্বীকার করেছে। অপর দুইজনকে আটকের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান মামলা তদন্ত কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।এ ঘটনায় জড়িত বিপুল ও মুকুলকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অন্যদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।